মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঋণখেলাপির সংস্কৃতি

এ দৈত্যকে ঠেকাতে চাই আইনি পদক্ষেপ

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে 'ঋণ বিতরণ বাড়াও খেলাপি কমাও' শীর্ষক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে। সরকারের বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে গুণগতমান বজায় রেখে ঋণ বিতরণ আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, কৃষি ও এসএমই খাতে ঋণ প্রদান বাড়াতে হবে। উৎপাদন ও কর্মসংস্থানমুখী এ দুটি খাতে ঋণদান দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অন্য খাতগুলোর চেয়ে এ দুটি খাতে ঋণখেলাপি তুলনামূলকভাবে কম। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ইতিমধ্যে জাতীয় উদ্বেগের বিষয় হয়েও দঁাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অসৎ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা লোপাট করে ব্যাংকিং খাতের সর্বনাশই শুধু নয়, জাতীয় অর্থনীতিকে সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই আত্দসাৎ বা লুটপাট প্রক্রিয়ার কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। ব্যাংক ঋণের এক বড় অংশ লোপাট হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণের সুদের পরিমাণ কমানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া এ নির্দেশনা ঋণখেলাপি সংস্কৃতির লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে অবদান রাখলে তা হবে একটি ইতিবাচক দিক। স্মর্তব্য, গত জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ ঋণই আদায় অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বলছে, তারা খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ে আদালতে মামলা করলেও এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এ ছাড়া স্টে অর্ডার দিয়ে ঋণ গ্রহীতারা অনেক মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দিচ্ছে। গত জুন শেষে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত বছর ডিসেম্বরে যা ছিল ১৬ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এ সময়ে সোনালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ হয়েছে ১০ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আমাদের মতে, খেলাপি ঋণ আদায়ে শুধু নির্দেশনাই যথেষ্ট নয়, এ বিষয়ে কড়া আইনি ব্যবস্থার কথাও ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর