ইরশাদ হচ্ছে, হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। (সূরাতুল আহজাব : ৭০-৭১) অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহতায়ালাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহতায়ালাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহতায়ালা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরাতুল হাশর : ১৮) আলোচ্য আয়াতসমূহে প্রকৃত মুমিনের পরিচয়, কর্মপন্থা এবং তাদের পুরস্কার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। মানুষ উক্ত আয়াতসমূহ বুঝে নিজের জিন্দেগিতে বাস্তবায়ন করলে অত্যন্ত সহজে প্রকৃত মুমিন হিসেবে আল্লাহর দরবারে পরিচয় লাভ করবে ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সূরাতুল আহজাবের ৭০নং আয়াতের শেষাংশে মহান রাব্বুল আলামিন এমন একটি শব্দ উল্লেখ করেছেন, যে শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। 'সাদিদ' শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ সম্পর্কে আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির রহ. তাফসিরে ইবনে কাসিরে ও আল্লামা মাহমূদ আলূসি বাগদাদি রহ. তাফসিরে রুহুল মাআনিতে বিস্তারিত আলোচনা করার পর বলেন, 'সাদিদ' শব্দটির অর্থ তিনটি। এক. এমন সত্য কথা যাতে মিথ্যার নামগন্ধও নেই। দুই. এমন সঠিক পন্থা যাতে ভুলের অবকাশ নেই। তিন. এমন কোমল পদ্ধতি যাতে নির্দয়তার কোনো সুযোগ নেই। বলাবাহুল্য, একজন ব্যক্তির মাঝে আল্লাহর ভয় আসার সঙ্গে সঙ্গে তার আমল সংশোধন হতে থাকে। তার সিরাত-সূরাতে পরিবর্তন, পোশাক-লেবাসে ও কথাবার্তায় শালীনতা আসতে থাকে। উচ্ছৃঙ্খল জীবন থেকে সুশৃঙ্খল জীবনে পদার্পণ করে। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল হতে থাকে। মানুষের জন্য এমনই হওয়া উচিত। সে সব সময় সত্য কথা বলবে, মিথ্যা পরিহার করবে। সঠিক পথে চলবে, ভ্রান্ত পথ পরিহার করবে। আল্লাহর পথে চলবে, শয়তানের পথ ছেড়ে দেবে। শালীনতা গ্রহণ করবে, বক্রতা বর্জন করবে। মানুষকে ভালোবাসবে, শত্রুতা বাদ দেবে। সংশোধনের পথ গ্রহণ করবে, ফেৎনা-ফ্যাসাদের পথ তরক করবে। আগের জমানায় আমাদের আকাবিরে উলামায়ে কেরামরা মিথ্যা কথা বলাকে অসম্ভব মনে করতেন। তারা বলতেন মুসলমান আবার মিথ্যা কথা বলে কীভাবে? মিথ্যা কথা বলাটা তাদের কাছে অসম্ভব মনে হতো। সঠিক ও সরল পথে চলতে হলে প্রথমে প্রয়োজন ভালো মানুষের সঙ্গে উঠাবসা করা। যে যত বেশি ভালো মানুষের সঙ্গে উঠাবসা করবে, সে তত বেশি ভালো মানুষ হতে পারবে। পৃথিবীর মাঝে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ ও ভালো মানুষ ছিলেন আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা.। তাঁর সংস্পর্শে থেকে সাহাবিদের বিশাল জামাত দুনিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিচয় লাভ করেছেন। যাদের সম্পর্কে জনাবে রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন। আমার সাহাবিরা তারকারাজির মতো। যারাই তাদের অনুসরণ করবে, তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। সাহাবিদের এই মর্যাদা অর্জিত হয়েছে শুধু রসুল সা.-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করা ও তাঁর সঙ্গে উঠাবসার কারণে। বোঝা গেল সৎ, দীনদার ও ভালো মানুষ হতে হলে প্রয়োজন দীনদার, সৎ ও ভালো মানুষের সঙ্গে উঠাবসা করা। যেমনটি কবি বলেছেন সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। নিজেকে দীনদার বানাতে হলে দীনের প্রতি মহব্বত থাকতে হবে। দীনদারিতাকে ভালোবাসতে হবে। আলেম-উলামা ও আওলিয়ায়ে কেরামদের সঙ্গে উঠাবসা করতে হবে। এক কথায় দীনি পরিবেশে যেতে হবে। আর দীনের প্রতি মহব্বত তখনই সৃষ্টি হবে, যখন আমি দীনের ওপর চলাকে সৌভাগ্যবান মনে করব। পবিত্র কোরআনে সূরা মুনাফিকুনের ৮নং আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, 'ইজ্জত ও সম্মান তো আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং মুমিনদেরই কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।' মুফাসসিরগণ আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন। 'তামাম ইজ্জত ও সম্মানের মালিক এক আল্লাহ, তাঁর রসুল সা. এবং যারা তাদের বাতলানো পথে চলবে অর্থাৎ মুমিনদের। বোঝা গেল দীনদারিতা অবলম্বন করার মধ্যেই শান্তি ও সম্মান নিহিত রয়েছে। সুতরাং এখন আমরা দীনি পথে চলাকে সম্মানের চাবিকাঠি মনে করি। নিজেরা দীনি পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করি। নিজেদের সন্তানদের দীনি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করি। হাফেজ, আলেম ও মুফতি বানানোর চেষ্টা করি। মনে রাখতে হবে, একদিন আমাদের মরতে হবে।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।