শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

৬৫ শতাংশই বাল্যবিয়ে

এ অনাচার বন্ধে সক্রিয় হতে হবে

নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য পরিচর্চা, বিনামূল্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যুর হার রোধসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বজুড়ে নন্দিত। এ আলোর পাশাপাশি রয়েছে অন্ধকার। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা নানা ক্ষেত্রের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। আমাদের দেশের মেয়েদের এক বড় অংশের বিয়ে হয় ১৮ বছরের নিচে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাল্যবিয়ের জন্য যাতে আইনগত ঝামেলায় পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করতে বিয়ে নিবন্ধনের সময় ছেলে ও মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে দেখানো হয়। বিয়ে নিবন্ধনকারী শুধু নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ চেয়ারম্যান ও মেম্বার এমনকি সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতেও বাল্যবিয়ের ঘটনা অহরহ ঘটছে। বাল্যবিয়ে দেশের সুনামের জন্য বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। বিআইডিএস ও ইউনিসেফের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৮ বছরের আগে প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজনের বিয়ে হয়ে যায়। মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হলেও তা মানা হয় না বললেই চলে। পরিণতিতে দেশে ১৫ বছরের নিচে বিবাহিত নারীর সংখ্যা এখন ২০ লাখ, যা মোট বিবাহিত নারীর ২৯ ভাগ। অন্যদিকে ১৮ বছরের নিচে বিবাহিত নারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ, যা মোট বিবাহিত নারীর ৬৫ ভাগ। বাল্যবিয়ের কারণে অল্প বয়সে মেয়েরা সন্তানসম্ভবা হচ্ছে। প্রসূতি স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ডেকে আনছে। প্রতি বছর ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানসম্ভবা ২৩ হাজার মা প্রাণ হারাচ্ছেন প্রসব জটিলতায়। বাল্যবিয়ের কারণে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ ও বহুবিবাহের প্রবণতা। বাল্যবিয়ে টিকে আছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের কারণে। শখ পূরণের জন্য নিজেদের শিশুসন্তানকে বিয়ে দেন এমন বাবা-মার সংখ্যা এ দেশে অসংখ্য। এর পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। আমাদের দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মেয়েকে কিশোরী বেলার শুরুতেই বখাটেদের উৎপাতের মুখে পড়তে হয়। যে কারণে গ্রামাঞ্চলের বাবা-মায়েরা তাদের কন্যা সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করেন। বাল্যবিয়ে বন্ধে সর্বাগ্রে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে দরকার আইন মেনে চলার মনোভাব। কাবিনে বয়স কমিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বেআইনি কর্মকাণ্ড বা অনাচার বন্ধে সক্রিয় হতে হবে। বিয়ের সময় জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট কিংবা স্কুলের বয়স-সংক্রান্ত প্রমাণপত্র হাজির বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে।

সর্বশেষ খবর