শিরোনাম
রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

শরীর মন ও আত্মার এবাদত হজ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শরীর মন ও আত্মার এবাদত হজ

বছরে নির্দিষ্ট সময় মক্কা ও তার আশপাশের পবিত্র স্থানগুলো গমন, নির্দিষ্ট ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের নাম হজ। এটা এমন এক এবাদত যাতে শরীর, মন ও আত্মা সব একসঙ্গে অংশ নেয়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। হজের সামর্থ্যের জন্য বড় ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। মক্কা পর্যন্ত ভ্রমণ এবং থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত অর্থ ও ওই সময়ে পরিবারের ভরণপোষণ থাকলেই বুঝতে হবে হজের সামর্থ্য আছে। জীবনে সুস্থ-সবল থাকতে হজ করাতে রসুল (সা.) উৎসাহিত করেছেন। কারণ এর আনুষ্ঠানিকতা রুগ্ন ও বৃদ্ধ অবস্থায় পালন করা কষ্টকর। রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ঠিকভাবে হজ পালন করে তার পুরো জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হজ শুধু পবিত্র স্থানে গমন নয়, ভ্রমণের চেয়ে অনেক গভীর এর তাৎপর্য। হজের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এটা যে শুধু মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকে চালু তা নয়। এটা ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় থেকে চালু হয়েছে। হজের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও হজের আর্থিক, নৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। হজ পালন মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি সমর্পিত ও অনুগত হতে শিক্ষা দেয়। মানুষকে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মিশন স্মরণ করিয়ে দেয়! মানুষকে তার মৃত্যু, পুনরুত্থান ও জবাবদিহিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। সারা দুনিয়ার মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বকে জোরদার করে। হজে সবার পরনে এক পোশাক গোত্র, বর্ণ, অর্থ-বিত্ত ইত্যাদির ভেদ দূর করে। মুসলিম বিশ্বের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মতো। যেখানে নিজেদের মতামত ও ভালোবাসা বিনিময় করা যায়। ইব্রাহিম (আ.) তাঁর নির্বাসিত পরিবারকে দেখতে অন্তত দুবার মক্কায় গিয়েছিলেন। প্রথম ঘটনায় সুরা বাকারার ১২৭-১২৯ নম্বর আয়াতে দেখা যায় ইব্রাহিম (আ.) এবং ইসমাইল (আ.) একসঙ্গে কাজ করে এক আল্লাহর প্রথম এবাদতগাহ 'কাবাঘর' নির্মাণ করেন। তারা দুজন এই আল্লাহর ঘরের জন্য দোয়া করেন। সেই শহরের জন্য দোয়া করেন। তাদের দোয়ার ফলশ্রুতিতেই ওই শহর থেকে শেষ নবী (সা.)-এর আবির্ভাব। দ্বিতীয় ঘটনা হচ্ছে ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার ঘটনা। এ ব্যাপারে সুরা সফ্ফাত-এর ৯৯-১১৩ নং আয়াতে। দেখা যায়, ইব্রাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে আল্লাহ তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে আদেশ করলেন। ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে স্বপ্নাদেশের কথা বললে তিনি আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে সানন্দে রাজি হয়ে যান। ইব্রাহিম (আ.) পুত্রকে নিয়ে কোরবানি করতে মিনা নামক স্থানে যান। পথে শয়তান তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ইব্রাহিম (আ.) ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। ওই সময় আল্লাহর ফেরেশতা একটি দুম্বা নিয়ে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর ত্যাগের ইচ্ছা কবুল করেছেন। পুত্রের বদলে দুম্বা কোরবানি দিতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। ইব্রাহিম (আ.) তখন আল্লাহর আদেশ পালন করেন। এ ঘটনার স্মরণে এখনো হাজিরা মিনায় পশু কোরবানি দেন। আল্লাহর এই আদেশ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। আল্লাহ উক্ত আদেশের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহর আদেশকে মানুষের আবেগ, যুক্তি ও মানবীয় জ্ঞানের ঊর্ধ্বে কীভাবে স্থান দিতে হয়। কোরবানির আদেশ ছিল ইব্রাহিম (আ.)-এর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের গভীরতার পরীক্ষা।

লেখক : খতিব, হাতিরপুল বায়তুল মোমিন জামে মসজিদ, ধানমন্ডি ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর