মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বনের পশু, মনের পশু, কার্ল মার্কস ও আব্রাহাম লিংকন

বনের পশু, মনের পশু, কার্ল মার্কস ও আব্রাহাম লিংকন

সাইফুর রহমান

২২ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ সাল। ভোরের আলো ইতিমধ্যে  বেশ খানিকটা ফুটে উঠেছে চারদিকে। জেমস শিল্ডস তার গায়ে চাপানো ওয়েস্ট কোটের পকেট থেকে ঘড়িটি বের করে বারবার শুধু চোখ বুলাচ্ছেন। তবে কি লিংকন আসবে না লড়তে তার সঙ্গে। মিসিসিপি নদীর এক পাশে মিজৌরি অন্য পাশে ইলিনয় রাজ্য। জেমস শিল্ডস এবং আব্রাহাম লিংকন দুজনেরই আবাস ইলিনয় রাজ্যে হলেও অসিযুদ্ধের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নদীর যে পাশটায় মিজৌরি রাজ্য সেখানে। কারণ অন্য কিছু নয় ১৮৩৯ সালেই আইন করে ইলিনয় রাজ্যে ডুয়েলিং অর্থাৎ অসিযুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেমস শিল্ডস ও আব্রাহাম লিংকন দুজনই আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। এই তো কিছুদিন আগেই আব্রাহাম লিংকন বিপুল ভোটে ইলিনয় রাজ্যের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে জেমস শিল্ডস ওই রাজ্যের খ্যাতিমান আইনজীবী। দুজনই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই হয়তো তাদের মধ্যে এই অসিযুদ্ধ দেখার জন্য সহস্র মানুষের আগমন ঘটেছে মিসিসিপি নদীর তীরঘেঁষে। লিংকন ও শিল্ডস এই দুজনের মধ্যে অসন্তোষ ধুমায়িত হয়ে উঠার পেছনের কারণটি নিছক তুচ্ছ ও ভিত্তিহীন। ইলিনয় রাজ্যের একটি পত্রিকার নাম ‘সানগামো’। সেই পত্রিকায় রেবেকা নামে জনৈক ছদ্মবেশী লেখিকা জেমস শিল্ডসের নামে নিন্দেমন্দ করে কিছু চিঠি লিখেছিলেন।

সানগামো পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সেই চিঠিগুলো প্রকাশিত হতে থাকে। লেখিকা রেবেকা শিল্ডসকে এই বলে দোষারোপ করতে থাকেন যে, একজন আইনজীবী হয়ে কিভাবে শিল্ডস ইলিয়ন রাজ্যের মানুষের অমঙ্গল হয়- এমন কিছু আইন তৈরিতে ভূমিকা রাখলেন। এ জন্য চিঠিগুলোতে তাকে কাপুরুষ বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং যেহেতু তার পূর্ব পুরুষ আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছিলেন সেহেতু শিল্ডসকে আয়ারল্যান্ড ফিরে যেতে বলেন রেবেকা। জেমস শিল্ডসের ধারণা যে, চিঠিগুলো হয়তো রেবেকা নামের ছদ্মবেশে আসলে আব্রাহাম লিংকন কিংবা লিংকনের প্রণয়কন্যা মেরি টড লিখে পত্রিকায় পাঠাচ্ছেন। এই জন্য তিনি লিংকনকে অসিযুদ্ধে আহ্বান করলেন। রৌদ্রের তেজদীপ্ত আভা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই লিংকনও এসে উপস্থিত হলেন সেখানে। ছয় ফুট চার ইঞ্চি দীর্ঘকায় লিংকনের সামনে জেমস শিল্ডসকে বেশ খানিকটা খর্বকায়ই মনে হচ্ছিল। শিল্ডসকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ক্রোধে তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। অসিযুদ্ধের শুরুতেই অতিকায় লিংকন এক কোপে জেমস শিল্ডসের পাশের উইলো গাছের একটি প্রশাখা কচুকাটা করে দিলেন। এরপরই ঘটল ঘটনাটি। হঠাৎ দৈববাণীর মতো লিংকনের মনে কি যেন এক ভাবোদয়ের সৃষ্টি হলো কে জানে?  তিনি মনে মনে ভাবলেন কেন তিনি আজ শিল্ডসের সঙ্গে এখানে এই অসিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। যদিও সমস্ত দোষ জেমস শিল্ডসেরই। তিনিই লিংকনকে এখানে এই যুদ্ধে আহ্বান করেছেন। কিন্তু তারপরও তিনি কেন তার মনের অবাধ্য এই হিংস্র পশুটির নাগাল টেনে ধরতে ব্যর্থ হলেন। তবে কী জেমস শিল্ডসকে হারিয়ে তিনি তার হৃদয়শ্বরী মেরি টডকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করতে চেয়েছিলেন। ছিঃ...ছিঃ... ছিঃ... নিজেকে আজ যথেচ্ছা ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো তার। লিংকন শিল্ডসকে উদ্দেশ্য করে বললেন দেখতেই পাচ্ছ শিল্ডস। আমি তোমার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমার হাত দুটোও তোমার হাতের চেয়ে বেশ লম্বা। আমি চাইলেই আমার তলোয়ারের এক ঘায়ে তোমার মুণ্ডুটি ধড় থেকে আলাদা করে দিতে পারি। কিন্তু এ যুদ্ধে আমি অংশ নিতে চাই না। আমাকে তুমি শুধু শুধুই সন্দেহ করছ। আমি সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ ও নিরপরাধ। এসো তোমার প্রতি আমি আমার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি। ইত্যবসরে জেমস শিল্ডসও তার ভুল ঝুঝতে পারলেন এবং পরবর্তী দিনগুলোতে তারা বন্ধু হয়েই রইলেন। ঈদুল আজহা উৎসবটি বছরান্তে আমাদের মাঝে ফিরে আসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে। নানা রঙ ও বর্ণের গবাদিপশুর সমারোহে খণ্ড খণ্ড হাট বসে শহর-গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে। হরেক রঙের গরু, মোষ, উট কিংবা ছাগল, ভেড়াগুলোকে দেখে মনে হয় যেন শিল্পীর পটে আঁকা কোনো ছবি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো যে কোনো একটি পশু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দিয়ে থাকি। গরিব দুস্থদের মধ্যে গোশ্ত বিলিবণ্টন ছাড়াও এর অন্য একটি বৃহৎ তাৎপর্য রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই আমরা সেই তাৎপর্যটি বেমালুম ভুলে যাই। একটি কোরবানি সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের মনের পশুটিকেও কোরবানি দিতে হয়। কিন্তু সমাজে আমরা ক’জন সেই মনের পশুটির কথা একটিবার চিন্তা করি। মনের পশু তো অনেক দূরের কথা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে আমরা কোরবানি দিচ্ছি সেটাই ভুলে যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। কেউ কেউ হাটের সবচেয়ে বড় গরুটি কিনে কোরবানি দেন। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর কোরবানি ঈদে ১০ কোটি পশু কোরবানি হয়। তার মধ্যে শুধু পাকিস্তানেই কোরবানি হয় এক কোটি পশু। সত্যি বললে বিশ্বজুড়ে ১০ কোটি কোরবানির পশু থেকে আহরিত গোশ্তের কতটুকু অংশ দুস্থ ও নিরণœ মানুষের ভাগ্যে জোটে- সেটা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে দেখা যায় কোরবানি ঈদের আগেই ফ্রিজ রেফ্রিজারেটর কেনার মহোৎসব পড়ে যায় যাতে করে কোরবানির মাংসগুলো ভালো করে মজুদ করে রাখা যায়। ঈদুল আজহার অর্থ হচ্ছে আÍত্যাগের উৎসব। এই আÍত্যাগ শুধু ভোজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা নয় এই আÍত্যাগ হওয়া প্রয়োজন মনের পঙ্কিলতা, বিদ্বেষ ও হিংস্রতার। ঈদুল আজহার এই তাৎপর্য ও চেতনা আমাদের যেন কিছুই শেখাতে পারছে না আজকাল। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের মনের ভেতরই বাস করে ভয়াবহ দৈত্যবৎ এক হিংস্র পশু যা আমাদের প্রায় প্রত্যেককেই গ্রাস করে রাখে। আজকাল আমরা এতটাই হিংস্র হয়ে উঠেছি যে, কারও কাজে ও কর্মে কিঞ্চিৎ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই আমরা আমাদের সেই অঘোষিত প্রতিপক্ষকে আরও অধিক ও ভয়ানকভাবে আক্রমণ করি। অনেক ক্ষেত্রেই সেই আক্রমণ হয় কাপুরুষোচিত। ছুরি বসিয়ে দিই পেছন থেকে। রাজনৈতিক হীনস্বার্থসিদ্ধির জন্য রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে আসি প্রতিপক্ষের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। চিরদিনের জন্য তাকে পাঠিয়ে দিই অজ্ঞাত কোনো স্থানে। মানুষের মনোজগতের এই যে ব্যাপক পরিবর্তন এটা কিন্তু অতীতে ছিল না। এই তো পঞ্চাশ-একশো বছর আগেও কারও সঙ্গে কারও শত্রুতা থাকলে সেই শত্রুতা নিরসনে একজন আরেকজনকে অসিযুদ্ধে অর্থাৎ ডুয়েলিংয়ে আহ্বান করতেন। ইতিহাসে এরকম শত সহস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে। তবে এই মুহূর্তে আমার কার্ল মার্কসকে নিয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ছে। সেটা ছিল ১৮৩৬ সাল। কমিউনিজম দর্শনটির জন্মদাতা বিশ্ব বিশ্রুত কার্ল মার্কস যখন কলেজের পাঠ চুকালেন তখন তাকে তার বাবা হেনরিক মার্কস পাঠিয়ে দিলেন জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার দুই চোখে স্বপ্ন ছেলে একদিন অনেক বড় আইনজীবী হবে। এটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই যে ছাত্রাবস্থায় কার্ল মার্কস মেধাবী কিংবা মনোযোগী ছাত্র ছিলেন না। আইন পড়ায় মন না দিয়ে ডুবে রইলেন মদ, জুয়া, নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য ও কুসংসর্গে। মার্কসের বাবা ছেলের জন্য যে পরিমাণ টাকা পাঠাতেন তাতে পড়াশোনা ও দৈনন্দিন জলপানির খরচ হয়তো বা কোনো মতে নির্বাহ হতো কিন্তু তার এই জুয়ার টাকা জোগান দেবে কে? আর এ জন্যই কার্ল মার্কসকে টাকা ধারের জন্য হাত পাততে হতো  সতীর্থদের কাছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ধার জমে গেল বিস্তর। ধার শোধ দেওয়ার সামর্থ্য নেই কার্ল মার্কসের। এদিকে বন্ধুরা সব প্রতিনিয়ত তাগাদা দিচ্ছে। অবশেষে এক বন্ধু কার্ল মার্কসকে আহ্বান জানালেন- ধার শোধ দাও নইলে অসিযুদ্ধে অবতীর্ণ হও। প্রতিপক্ষ বন্ধুর ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ ফিরিয়ে দেওয়ার উপায় নেই- কারণ তা না হলে বন্ধুর পাওনা সমুদয় অর্থ শোধ করতে হবে তাকে। সে সামর্থ্যও নেই কার্ল মার্কসের। অবশেষে অসিযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন তিনি। সেই ডুয়েলিংয়ে বেশ ভালোরকম আহত হন কার্ল মার্কস। নাকের ডগা থেকে কান অব্দি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় বন্ধুর তরবারির আঘাতে। সেই ক্ষতস্থান ঢাকতে ১৪টি সেলাই দিতে হয় ডাক্তারকে। মার্কসের বাবা এসব শুনে নিদারুণ মর্মাহত হন। অবশেষে ছেলের যাবতীয় দেনা শোধ করে বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নতুন করে ভর্তি করিয়ে দিলেন বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে সব মানুষ আলোকিত ও বুদ্ধিমান তারা তাদের প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে। এই মুহূর্তে সদ্য অতীত হয়ে যাওয়া দুটি ঘটনা মনে পড়ছে। কিছুদিন আগে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট ও আমার অগ্রজ সুহৃদ গোলাম মাওলা রনি দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর কোপানলে পড়ে বেশ কিছুদিন কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন- ‘এমপির কারাদহন’ শিরোনামে। তার সেই বইটি তিনি সেই শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীর নামেই উৎসর্গ করেন। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এর চেয়ে ভালো চপেটাঘাত কিভাবে হতে পারে আমার জানা নেই।

দ্বিতীয়টি আমার পরম বন্ধু ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলালকে নিয়ে। সুদীর্ঘকাল এক সঙ্গে আছি বলেই জানি আমার এই বন্ধুটি নিরহঙ্কার, বিনয়ী ও মহাত্মা। হেলালের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। ঠিক একই এলাকার একজন ব্যারিস্টার যিনি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত এবং হেলালকে সচরাচর প্রতিপক্ষ হিসেবে জ্ঞান করেন এবং বিভিন্ন স্থানে ওর নিন্দে মন্দ করেন। কিছুদিন আগে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা সন্দেহে সেই আইনজীবীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদটি প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম হেলাল হাটহাজারীতে তার প্রায় সমস্ত নেতা-কর্মীকে ফোন করে নির্দেশ দিচ্ছে অনতিবিলম্বে এই গ্রেফতারের কঠোর নিন্দা জানাতে। ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বললেন- ভাই উনি তো আপনার বিরুদ্ধে প্রায়ই কটু কাটাব্য করে থাকেন অথচ আপনি আজ তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। প্রতিউত্তরে হেলাল বলল, আমরা নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ। আমাদের বিরোধিতার ভাষা এরকমই হওয়া উচিত।

যা হোক, মনের পশু নিয়ে কড়চা অনেক হলো এবার বনের পশু অর্থাৎ কোরবানি ঈদ নিয়ে দু-চার কথা বলা যাক। আরব সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দে রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে সেই যে যখন যুদ্ধ করেছিলেন সেই তখন থেকে শুরু। ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্ম প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এর অনুষঙ্গ হিসেবে ইসলামিক উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠানেরও বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। তবে বাংলাদেশে ঈদুল আজহা তথা কোরবানি শুরু হয় মুঘল আমলে বঙ্গের রাজধানী ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অর্থাৎ ১৬০৮ সালের দিকে। তবে সেই মুঘল আমল থেকে ইংরেজ আমলের অনেক দিন পর্যন্ত গরু কোরবানি হতো শুধু ঢাকায়। সে সময়ে মুসলমানদের জন্য ঢাকার বাইরে কোরবানি ঈদ পালন করাটা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কেননা স্থানীয় হিন্দু জমিদাররা মুসলমান প্রজাদের কোরবানি দিতে বাধা দিতেন। ৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯০ সালের ‘সুধাকর’ পত্রিকাটির মাধ্যমে জানা যায় যে, বগুড়া জেলার নারহাট্টার জমিদারদের আমলারা মুসলমানদের কোরবানি দিতে দেয়নি। মুসলমানদের কোরবানি করতে না দেওয়ার ফলে হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে তিক্ততা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। অন্যদিকে ইংরেজ সরকার তা দেখেও না দেখার ভান করত। কারণ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই দ্ব›দ্ব তাদের শাসনকার্যের সুবিধার্থে বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিল। কোরবানি ঈদের আরেকটি নাম যে ‘বকরি’ ঈদ সেই নামটিও এ কারণেই উদ্ভব হয়। হিন্দু জমিদারের আওতাধীন মুসলমানরা যেহেতু গরু কোরবানি দিতে পারত না সেই জন্য তারা ছাগল কোরবানি দিত।

প্রথাগতভাবে শুধু একটি পশু কোরবানি করে আমাদের দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না। যদিও ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আমরা কোরবানি দিয়ে থাকি কিন্তু এর অন্তনির্হিত তাৎপর্যও আমাদের অনুধাবন করতে হবে। মনের সব জটিলতা, হিংসা বিদ্বেষ দূর করে ঈদকে করতে হবে আরও মানবিক ও অর্থবহ- তবেই ঈদের খুশি হবে সার্বজনীন ও সবার জন্য কল্যাণকর।

 

হলেখক : গল্পকার ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী।

 

সর্বশেষ খবর