বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুন্দরবন সুরক্ষা

বনরক্ষীদের প্রহরা ব্যবস্থায় ঘাটতি কাম্য নয়

সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের ঘাটতি না থাকলেও তার বাস্তবায়নে বিরাজ করছে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো অবস্থা। সুন্দরবনকে বনখেকো, বাঘখেকো ও হরিণখেকোদের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বনরক্ষীদের নিশ্ছিদ্র প্রহরার বিকল্প নেই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাদা বন সুন্দরবনের সুরক্ষায় বন বিভাগের ৭৫টি ক্যাম্প ও স্টেশন অফিস রয়েছে। এসব ক্যাম্প ও স্টেশনের আওতাধীন বিশাল বন এলাকা পাহারা-টহলের জন্য আছে ৯০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলার। এ ট্রলারগুলোর সাহায্যে নিয়মিত পাহারা দিতে প্রতি মাসে প্রয়োজন প্রায় ১৮ লাখ টাকার জ্বালানি তেল। আর বছরে প্রয়োজন প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকার জ্বালানি। সেখানে সারা বছরের জন্য জ্বালানি তেল বাবদ বরাদ্দ মাত্র ১৫ লাখ টাকা। বোধগম্য কারণেই নদী-খালবেষ্টিত সুন্দরবনে নিয়মিত পাহারা-টহল দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বছরজুড়ে অরক্ষিত থাকছে এখানকার বনজ সম্পদ ও প্রাণিকুল। নিয়মিত পাহারা-টহল না থাকায় বনকেন্দ্রিক দস্যুতা বেড়েই চলেছে। বেড়েছে চোরাই শিকারিদের দৌরাত্ম্য। শিকারিদের প্রধান টার্গেট হয়ে উঠেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেই খুলনা শহর, কয়রা ও দাকোপ উপজেলা থেকে চারটি বাঘের চামড়া, দুটি হরিণের চামড়া, ৬৯ পিস বাঘের হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা থেকে উদ্ধারকৃত তিনটি বাঘের চামড়া পাচারে জড়িত ছয় শিকারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। পাহারা না থাকায় সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১০৬টিতে দাঁড়িয়েছে। বাঘ ও হরিণ শিকারের পাশাপাশি চলছে বনজ সম্পদ চুরির মহোৎসব। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও তা নিশ্চিত করার মতো অবকাঠামোগত সুবিধার যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি প্রহরা ব্যবস্থায় রয়েছে ঘাটতি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে এর আলাদা বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য যেসব ব্যবস্থা দরকার তার প্রায় সবকটিই সুন্দরবনে অনুপস্থিত। প্রহরার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্বালানির ব্যবস্থা না থাকা সে সত্যটিই তুলে ধরছে। সুন্দরবন এলাকায় প্রহরা জোরদার করা হলে প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকার গাছ চুরির ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।  অস্তিত্বের সংকট থেকে রক্ষা পাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামের বাঘ। এ এলাকার মৎস্য সম্পদও রক্ষা পাবে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সচেতন হবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর