শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আশুরার দিনে করণীয়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আশুরার দিনে করণীয়

মহররমের ১০ তারিখ। দিনটিকে বলা হয় ইয়াউমুল আশুরা। এ দিনে নির্মমভাবে শহীদ হন নবী (সা.) এর আদরের নাতি হজরত হোসাইন (রা.)। এ ছাড়া আরও অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা দিনটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে পবিত্র আশুরার দিনটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে রসুল (সা.) থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা তওবার ৩৬নং আয়াতে আল্লাহপাক চারটি মাসকে সম্মানিত উলে­খ করে এ মাসগুলোতে পরস্পর অন্যায় ও অবিচার থেকে বিরত থাকতে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামপূর্ব যুগেও এ মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে মানুষ বিরত থাকত। রসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা আল্লাহপাকের কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়। (মুসলিম)

মক্কায় থাকাকালে রসুল নিজে আশুরার দিন রোজা রাখতেন, তবে কাউকে আদেশ করেননি। মদিনায় হিজরতের পর যখন তিনি ইহুদিদের এ মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখলেন তখন তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। ইহুদিরা জানাল, এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহপাক মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ তারিখেই ফেরাউন ডুবে মরেছিল। হজরত মূসা নবী এ দিনটিতে রোজা রাখতেন।

রসুল (সা.) তখন বললেন, আমরাও মূসা নবী আলাইহিস সালামের অনুসরণ করব। তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বরং বেশি। তিনি তখন থেকে মহররমের ১০ তারিখ রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সবাইকে নির্দেশ দিলেন। (বুখারি)

রসুল (সা.) বলেছেন, আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহপাক বান্দার বিগত এক বছরের গোনাহসমূহ মাফ করে দেন। (মুসলিম)। মুসলিম শরিফের বর্ণনায় জানা যায়, ইন্তেকালের আগের বছর রসুল (সা.) ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে ৯ তারিখেও রোজা রাখব। এজন্যই আশুরার রোজার সঙ্গে সঙ্গে এর আগের দিন রোজা রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন উলামায়ে কেরাম। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার হজরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনা উলে­খ করেছেন, যাতে রসুল (সা.) বলেছেন. তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ। তবে এতে যেন ইহুদিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হয়ে যায়। এ জন্য এর সঙ্গে মিলিয়ে আগের দিন কিংবা পরের দিনসহ রোজা পালন কর। 

আশুরার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আলোচিত হাদিস ও ঘটনাবলি দ্বারা সহজেই অনুমেয়। এর গুরুত্ব ও ফজিলত কারবালার ঘটনার বহুকাল আগে থেকেই বিদ্যমান। কিন্তু রূঢ় হলেও সত্য যে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলি না জানার কারণে অনেকে আশুরার দিনকে শুধু কারবালার বেদনাদায়ক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আসল ফজিলত ও মর‌্যাদা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

আশুরার দিনে নফল নামাজ, তেলওয়াতে কোরআন, রোজাদারদের ইফতারি করানো এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণ খরচ করাও সওয়াব। এছাড়া নিজের গোনাহ ও পাপ কাজের জন্য বিনয় সহকারে বেশি বেশি করে তওবা ইস্তিগফার করা। কারণ এ মাসে তওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর