শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি এহসানুল হক জিলানী পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

ইসলামে চারটি মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত ঘোষণা করা হয়েছে, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেদিন থেকেই চালু আছে, যেদিন আল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের ওপর কোনো জুলুম কর না। (সূরা আত-তাওবাহ ৩৬)। এ চারটি মাসের মধ্যে অন্যতম হলো মহররম মাস আর মহররম মাসের দশম দিবস যা আশুরা হিসেবে পরিচিত। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এ দিনে আল্লাহতায়ালা তার নবী মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী ইমানদারদের ফেরাউনের জুলুম থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার বাহিনীসহ সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল : এটা এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহতায়ালা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুসা আলাইহিস সালাম শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা আলাইহিস সালামের অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। ‘অতঃপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা পালন করলেন এবং সাহাবিদের রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন।’ (সহিহ বুখারি)। আশুরার রোজা পালনের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু কাতাদাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিনে রোজা রাখার উছিলায় আল্লাহতায়ালা আগের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম) ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা পালন কর। আর এ ব্যাপারে ইহুদিদের সঙ্গে পার্থক্য স্থাপন করে আশুরার একদিন আগে অথবা একদিন পরে রোজা পালন কর।’

হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র হজরত হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু কারবালার প্রান্তরে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। যা ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য হৃদয়বিদারক ঘটনা।  বলা যায়, সেদিন থেকেই ইসলামী আদর্শ প্রকৃত প্রাণশক্তি অর্জন করেছে সুতরাং কারবালার স্মৃতি মুসলিম হৃদয়ে কেবল শোকের আবহই জাগায় না বরং সাধনা ও সাফল্যের এক নতুন উদ্দীপনাও জাগিয়ে তোলে। আল্লাহতায়ালা আমাদের আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত বোঝার তাওফিক দিন।  আমিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর