বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ক ল কা তা র চি ঠি

দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে ব্যবসা

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে ব্যবসা

ভারতে আগে যা কখনো ঘটেনি তাই এবার ঘটছে। দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে ব্যবসা করতে শুরু করেছে দুটি রাজনৈতিক দল। ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ না আসায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তেলেভাজার শিল্প গড়ে তুলবেন। আর সেই তেলেভাজা শিল্প নিয়েই নাকি এ রাজ্য সবাইকে পেছনে ফেলে দেবে। সম্প্রতি তিনি ঠিক করেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ফাইল নিয়ে ব্যবসা করবেন। চলতি মাসে দিল্লিতে বিদেশি শিল্পপতিদের সম্মেলনে নেতাজি-সংক্রান্ত গোপন ফাইল বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। এই ফাইলগুলো সম্প্রতি প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। আর অন্যদিকে মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকাই অস্বীকার করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। কংগ্রেসের সমালোচনা করতে গিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করতেও ছাড়ছেন না কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং শাসক দলের শীর্ষ নেতারা। বিজেপি নেতারা বলছেন, দেশকে টুকরো করে দিয়ে গেছেন জওহরলাল নেহরু। আর তার পরিবারের বর্তমান সদস্যরা দেশকে আরও টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়নের ঢক্কানিনাদ করে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তা থেকে কয়েক যোজন সরে গিয়ে গো-মাংস নিয়ে মেতে রয়েছেন বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আরএসএসএর নির্দেশে রাজধানীতে এখন তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে কে কোথায় গো-মাংস খাচ্ছেন। এই ধর্মীয় অসিষ্ণুতার প্রতিবাদে ধিক্কার জানিয়ে একের পর এক বুদ্ধিজীবী একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সরকারি পদ ও সম্মান ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদরা পর্যন্ত সমবেত হয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপারের মতো ইতিহাসবিদরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, দেশের বহুত্ববাদী ঐতিহ্য ভাঙার চেষ্টার পাশাপাশি ইতিহাস বিকৃত করার নোংরা খেলায় মেতেছেন বিজেপি ও আরএসএসের নেতারা। খুঁজে খুঁজে খতম করা হচ্ছে দেশের প্রগতিশীল চিন্তাবিদদের। সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানা আটকে দেওয়ার আন্দোলন করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সিঙ্গুরেই অনিচ্ছুক চাষিরাই এখন টাকার দাবিতে মমতা সরকারের বিরুদ্ধেই নতুন করে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের তাণ্ডবে কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। আরএসএসের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল আরএসএস। কংগ্রেস থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডেও হাত থাকতে পারে আরএসএসের। সম্প্রতি বিহার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রচার পর্বে এই আতঙ্ক আরও ছড়াচ্ছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, বিহারের নির্বাচনে বিরোধীরা জিতলে বাজি পুড়িয়ে উৎসব করা হবে পাকিস্তানে। আপাতদৃষ্টিতে এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক তরজা বলে মনে হলেও সূ²ভাবে ধর্মীয় হানাহানির উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলেও অনেকে মনে করছেন। সংখ্যালঘুরাই নন, দেশের সর্বত্র আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষই। কেউ জানেন না দেশের কোন প্রান্তে কখন কোন বুদ্ধিজীবীর ওপর আঁততায়ীর প্রাণঘাতী হামলা হয়।

সর্বশেষ খবর