শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড ইসলামে নিন্দনীয়

হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুক

সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড ইসলামে নিন্দনীয়

সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান স্পৃষ্ট। ঐশী মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা কর না।’ (আনআম-১৫১)। আর হাদিসের মাধ্যমে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন- একজন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ  এবং ইজ্জত সম্মানে হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু তারপরও যদি কেউ কারও নিরাপত্তার অধিকার লঙ্ঘন করে তার জানমালের ওপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করে এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তাহলে সেজন্য ইসলাম দিয়েছে শাস্তির বিধান। দুনিয়াতে নির্ধারণ করেছে কিসাস, আর পরকালে রয়েছে জাহান্নামের আজাব। তাই তো কোরআনে ঘোষণা হয়েছে, হে ইমানদাররা! তোমাদের জন্য নিহতের ব্যাপারে কিসাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস-দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। এরপর যদি কেউ তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু মাফ করে দেয়, তাহলে সে যেন তা ন্যায়সঙ্গতভাবে করে এবং সৎভাবে পৌঁছে দেয়। এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সহজতা ও রহমত। এরপর যে বাড়াবাড়ি করবে তার জন্য মর্মান্তিক শাস্তি রয়েছে। (সূরা বাকারা : ১৭৮)। আর অন্য জায়গায় ঘোষণা হয়েছে- আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করেছি জানের পরিবর্তে জান, চোখের পরিবর্তে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বদলায় দাঁত এবং প্রত্যেক জখমের বিনিময়ে নির্ধারণ করা হয়েছে কিসাস (সূরা মায়েদা : ৪৫)। বর্তমানে কিছু লোক রয়েছে যারা কিসাসকে বাঁকা চোখে দেখে। প্রকৃতপক্ষে বাঁকা চোখে দেখার কারণেই কিসাসের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘হে জ্ঞানী সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য কিসাসের মাঝে রয়েছে জীবন’, অন্যত্র আল্লাহ হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হলো অভিশপ্ত জাহান্নাম। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিশম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন। (সূরা নিসা : ৯৩)।

আরেক জায়গায় ঘোষণা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজের হেতু ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। (সূরা মায়েদা : ৩৫)। আর মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারও ওপর অস্ত্র প্রয়োগ করল, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বর্তমান এ পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় হলো- হত্যা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার করা, যখন মানুষ এ বিষয়গুলো বুঝতে পারবে, তখন তারা এ জঘন্য পাপ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হবে। কারণ যখন পাপ করার জন্য উদ্যত হবে তখনই তার হৃদয়ে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হবে। আল্লাহর ভয় যদি কারও মনে জাগ্রত হয় তাহলে তার দ্বারা কোনো মানুষ কখনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে না, তার থেকে সবাই নিরাপদে থাকে। আল্লাহর ভয় যদি কারও মনে না জাগে তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরা বসিয়েও ফায়দা হবে না, বরং তাদের অপকর্মের মাধ্যমে মানুষ আরও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ আমাদের হেফজাত করুন।  আমিন।

সর্বশেষ খবর