বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাল্যবিয়ের প্রবণতা

আইন প্রয়োগকারীদের সক্রিয় হতে হবে

বাংলাদেশের ৭৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় বাল্যবয়সে। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোরম ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা জরিপে এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী শিক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখালেও বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে এ দেশের মেয়েদের রক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়নে অনেক পিছিয়ে থাকলেও এদিক থেকে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর অবস্থাও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার ৩৮ শতাংশ এবং ছেলেদের ৩.৭ শতাংশ। আর পাকিস্তানে মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার ৩৪.৮ শতাংশ এবং ছেলেদের হার ১৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের এ হারকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে উলে­খ করা হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে বাল্যবিয়ে হয় বলে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া চরম দারিদ্র্য, দুর্বল বিচারব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার অভাবকে বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ২ হাজার ৭৪২টি জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেওয়া সবাই ১৮ বছরের নিচের তরুণ-তরুণী। বাল্যবিয়ের মচ্ছব বইলেও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে আইনত নিষিদ্ধ এবং এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স বরের ক্ষেত্রে ২১ এবং কনের ক্ষেত্রে ১৮। এর চেয়ে কম বয়সে বিয়ে হলে সেটি বাল্যবিয়ে বলে বিবেচিত হয় এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধের শামিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাল্যবিয়ে আইন অনুযায়ী অবৈধ হলেও এই আইনের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাদের সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ইউপি মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এমনকি সংসদ সদস্যদের গাফিলতির কারণেই বাল্যবিয়ে বন্ধে কোনো সাফল্য আসছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেও বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। বাল্যবিয়ে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অর্জিত সব সাফল্যকে নিষ্প্রভ করে তুলছে। প্রসূতি স্বাস্থ্যের জন্য এটি বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে।  জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ফেলছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। এ আপদ বন্ধে জনপ্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর