মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুর্নীতি দমন প্রসঙ্গ

সুশাসনের পূর্বশর্তও পূরণ করতে হবে

দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় পূর্বশর্ত হলো সুশাসন। দুর্নীতি দমন কমিশনের একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ সত্যটি সামনে এনেছেন এ উদ্দেশ্যে আয়োজিত আলোচনা সভার বিদগ্ধজনেরা। দুর্নীতি দমন ও সুশাসন যে একে অন্যের পরিপূরক সে বিষয়টি স্পষ্ট করে তারা বলেছেন, দুর্নীতিহীন প্রশাসন না থাকলে সুশাসন সম্ভব নয়। আলোচকদের মতে, বাংলাদেশের ৫ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ সচেতন হলেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। সরকার যদি একান্তভাবে দুর্নীতি দমন করতে চায়, তবেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। দুর্নীতি শতভাগ দমন কোনো সমাজেই সম্ভব না হলেও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আলোচনা সভায় বলা হয়, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্নীতি লাঘবের জন্য। দাতাগোষ্ঠীর চাপে ২০০৪ সালে এ কমিশন গঠিত হয়। কমিশন গঠন করা হলেও তাকে নির্জীব করে রাখা হয় এবং দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ডই সে সময় পরিলক্ষিত হয়নি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিরাজনৈতিকীকরণে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা হয়। দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সুধীজনদের দেওয়া বক্তব্য তাৎপর্যের দাবিদার। দুদক নিঃসন্দেহে সাংবিধানিকভাবে পরিচালিত একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তবে অন্যসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতোই তা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সরকার নিয়ন্ত্রণকারী একটি অদৃশ্য চক্র দুদককে দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করিয়েছে। রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের চরিত্রহনন এবং হয়রানির মাধ্যমে সে সময়ের দুঃশাসনের হোতাদের ইচ্ছা পূরণ করেছে। দুর্নীতি দমন জাতীয় প্রত্যাশার পরিপূরক হলেও দুর্নীতি দমনের নামে অযথা কারও চরিত্রহনন কিংবা হয়রানি কাম্য নয়। সুশাসনের ব্যত্যয় ঘটলে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও কাজ করা যে কঠিন হয়ে পড়ে বিগত জোট সরকারের আমলের নিষ্ক্রিয়তা তারই নজির। ক্ষমতাসীন অবৈধ চক্রের দাপটে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে দুদককে ব্যবহার করার নজির স্থাপিত হয়েছে ওয়ান-ইলেভেন আমলে। দুদককে দুর্নীতি দমনের ওয়াচডগ হিসেবে ব্যবহার করতে হলে দুদকের জবাবদিহিতা বাড়ানোর পাশাপাশি সুশাসনের শর্ত পূরণেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকে সেভাবে সাজানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এটি সবারই কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর