রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কর ফাঁকির মচ্ছব

দেশের অর্থনীতির জন্য বিসংবাদ

দেশে কোটিপতির সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এক সময় যে সংখ্যা ছিল হাতেগোনা তা এখন লাখের অঙ্কে দাঁড়িয়েছে। তবে জাতীয় অর্থনীতিতে এর সুফল অনুভূত না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। কোটিপতিদের কর ফাঁকির কারণে দেশের রাজস্ব আয় বাড়ছে না কাক্সিক্ষতভাবে। সুশাসনের অভাবে কর ফাঁকি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত কেউ পিছিয়ে নেই। অনুমিত হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। কর ফাঁকি দেওয়া এই অর্থ উন্নত দেশগুলোতে পাচার হওয়ায় দেশের অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছে। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে জড়িত বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও। এনবিআরের দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্বচ্ছ লেনদেন ও রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা না থাকায় কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এক শ্রেণির করদাতা। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে করযোগ্য আয় অন্য অধিক্ষেত্রে স্থানান্তরের মাধ্যমে কর ফাঁকি দেয়। দেশীয় কোম্পানিগুলো কর অবকাশ বা করমুক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানে করযোগ্য আয় স্থানান্তর করে কর ফাঁকি দিয়ে থাকে। ভুয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে প্রকৃত আয় গোপন করার মাধ্যমেও কর ফাঁকি দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক’-এর ফাইনান্সিয়াল সিকিউরিটি ইনডেক্স-২০১৫ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে, ১০ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা আমদানি-রপ্তানি পণ্যের মূল্য অবমূল্যায়ন এবং অন্যান্য অবৈধ উপায়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। স্মর্তব্য, সুইজারল্যান্ড, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশ তাদের দেশে সঞ্চিত বিদেশি অবৈধ অর্থের নিরাপত্তা দেয়। যে অর্থ দেশে থাকলে শিল্প স্থাপন ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখত ও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করত তা পাচার হয়ে যাওয়ায় জাতীয় অর্থনীতি সেভাবে বিকশিত হতে পারছে না।  পাশাপাশি সরকার কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের বৃহৎ স্বার্থে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর