শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের অযৌক্তিক দাবি

সমুদ্রসীমা নিয়ে নতুন বিতর্ক দুঃখজনক

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছিল এবং তা দুই দেশই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সে নিষ্পত্তিকে পাশ কাটিয়ে মিয়ানমার বাংলাদেশ অংশের মহীসোপানের একাংশের ওপর অযৌক্তিকভাবে নিজের অধিকার প্রত্যাশা করে সম্প্রতি জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছে। গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের কাছে পাঠানো ওই আবেদনকে সঙ্গত কারণেই প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ওপর মিয়ানমারের এই শ্যেন দৃষ্টি শুধু অপ্রত্যাশিত নয় গর্হিত এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের পরিপন্থী বলেও অভিহিত করা যায়। যে কোনো  প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে স্থল বা জলসীমা নিয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে এবং তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছে এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের শরণাপন্ন হয়। দুই প্রতিবেশী দেশও ট্রাইব্যুনালের রায় মেনে নিয়ে সুবুদ্ধির পরিচয় দেয়। সে রায় পাশ কাটিয়ে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের মহীসোপানের একাংশের ওপর অযৌক্তিকভাবে মিয়ানমারের দাবি উপস্থাপন দুর্ভাগ্যজনক। স্মর্তব্য, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি হয় জার্মানির হামবুর্গের সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে ও সুইজারল্যান্ডের হেগের সালিশি আদালতে। নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া বিষয়াদি নতুনভাবে পর্যালোচনার কোনো সুযোগই নেই। জাতিসংঘে দেওয়া পাল্টা চিঠিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে। সবারই জানা দুই দেশের সম্পর্ক ২০০৮ সালে অবনতি ঘটেছিল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার একাংশকে মিয়ানমার নিজের দাবি করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চেষ্টা চালালে দুই দেশের যুদ্ধজাহাজ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং সীমান্তেও সৈন্য মোতায়েনের অকাম্য পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে দুপক্ষই রাজি হয়। আমরা আশা করব, সৎ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের পরিচয় দিয়ে মিয়ানমার বাংলাদেশের মহীসোপানের ওপর অযৌক্তিক দাবি থেকে সরে দাঁড়াবে। যা উভয় দেশের জন্যই মঙ্গলজনক বলে বিবেচিত হবে।

সর্বশেষ খবর