শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামে মধ্যম পন্থা

মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান

সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

ইসলাম সর্বকালের সব মানুষের জন্য শান্তি ও কল্যাণময় ধর্ম। মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা এতে এমন বিধান দিয়েছেন যা সব ধরনের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে পালন করতে পারে এবং সব মানুষের জন্যই তা বয়ে আনতে পারে শান্তি ও কল্যাণের সুবাতাস। পূর্বকালের উম্মতের জন্য ছিল বিভিন্ন ধরনের বিধান। কারও জন্য ছিল খুবই চরম পন্থামূলক কঠিন ও কষ্টকর বিধান। যেমন হজরত মুসা (আ.)-এর সময়ে তার উম্মতদের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছিল কঠোর বিধান। কাপড়ে নাপাক লাগলে তা কেটে ফেলতে হতো। পাপাচার থেকে তওবা করার জন্য দেওয়া হয়েছিল নিজেদের হত্যা করার বিধান। যেমন ইরশাদ হয়েছে ‘আর যখন মুসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার সম্প্রদায়; গোবৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের ওপর ঘোর অত্যাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার কাছে তওবা কর এবং তোমরা নিজেদের হত্যা করো’ (২:৫৪)। আর হজরত ঈসা (আ.)-এর সময়ে ছিল তুলনামূলকভাবে নরম পন্থামূলক ঢিলেঢালা বিধান। তিনি শুধু নসিহত করেই ক্ষান্ত হতেন। কাউকে শাস্তি দেওয়া বা রূঢ় কথা বলা তার দীনের মধ্যে ছিল না। একবার এক লোক এসে অভিযোগ করল, অমুকের পশু আমার ফসলের ক্ষেত বিনষ্ট করে ফেলেছে। তিনি বললেন, ‘আরে মিঞা! তোমার এর সালিশ বিচার করার জন্য কি আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে?’

শেষ নবী হজরত রসুলে কারিম (সা.)কে মধ্যম পন্থামূলক দীন ও বিধান দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন : এভাবে আমি তোমাদের এক মধ্য জাতিরূপে প্রতিষ্ঠা করেছি (সূরা বাকারা : ১৪৩)। হাদিসে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘অর্থাৎ মধ্যম পন্থাই হলো উত্তম পন্থা। আর চরম ও নরম উভয়টিই বর্জনীয়।’ সুতরাং হজরত রসুলে কারিম (সা.)-এর দীন হলো সর্বোত্তম দীন। এর সব বিধি-বিধানেই মধ্যমপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, আচার অনুষ্ঠান, বিয়ে-শাদী সর্ব ক্ষেত্রেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা আমাদের কর্তব্য এবং এর মধ্যেই আমাদের উভয় জগতের কল্যাণ নিহিত। কারণ হিসেবে বলা যায়, আল্লাহ তার দীন পালনে এ উম্মতের কাছে সহজ পন্থাই চান, কঠিন পন্থা চান না। যেমন ইরশাদ হয়েছে— ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তাই চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)

আর রসুল (সা.) বলেন, ‘দীন হলো সহজ। কেউ তা কঠিন করে নিলে সে পরাজিত হবেই।’ অর্থাৎ সঠিকভাবে সে দীন পালন করতে পারবে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মধ্যম পন্থায় দীন পালন করাই সহজ। তাই আল্লাহ মধ্যমপন্থার বিধান এ উম্মতের জন্য বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন, যাতে আমরা সহজভাবে আল্লাহর বিধান পালন করতে পারি। তাই আসুন আমরা আমাদের জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং উভয় জাহানের কামিয়াবি লাভ করি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর