শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শান্তি প্রতিষ্ঠায় উলামাদের ভূমিকা

মুফতি আমজাদ হোসাইন

শান্তি প্রতিষ্ঠায় উলামাদের ভূমিকা

‘শান্তি’ ক্ষুদ্র একটি শব্দ হলেও মর্মার্থ অত্যন্ত ব্যাপক। আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ শান্তির পেছনে দৌড়াচ্ছে। অনেকে মহান আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের ফর্মুলা দিচ্ছে। নমরুদ, ফেরাউন, হামান, কারুন, সাদ্দাদ, আবু জেহেল, আবু লাহাব, উত্বা, শাইবাসহ অসংখ্য কাফের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর ফর্মুলা বাদ দিয়ে নিজস্ব ফর্মুলা গ্রহণ করেছিল। তাদের ধ্বংসাত্মক পরিণাম ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মানুষ তাদের নামের সঙ্গে লা’নাতুল্লাহি আলাইহে (আল্লাহর লা’নত তাদের ওপর বর্ষিত হোক) যোগ করে। পক্ষান্তরে মহান রাব্বুল আলামিন নবী-রসুলদের প্রেরণ ও ইসলামের মাধ্যমে জমিনবাসীর জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার যে ফর্মুলা দিয়েছেন, যারাই আল্লাহ প্রদত্ত উক্ত ফর্মুলা গ্রহণ করেছেন তারাই যুগে যুগে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। শান্ত পরিবেশে বসবাস করেছেন। ইতিহাস তাদের পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। মানুষ তাদের নামের সঙ্গে রহমতুল্লাহে আলাইহে (আল্লাহর রহমত তাদের ওপর বর্ষিত হোক) বাক্য উচ্চারণ করেন। আল্লাহর বিধানে অন্যায়-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন নেই। শুধু মানুষ কেন কোনো প্রাণীকেও অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন করার বিধান নেই। সবাই এক আল্লাহর গোলাম। এক আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে থেকে তাঁর কাছে মাথা ঝুঁকাবে। নিজের আকুতি-মিনতি আল্লাহর কাছে পেশ করবে। আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা.) কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য কোরআন ও হাদিস রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার পর আমি তোমাদের জন্য দুটি বিষয় রেখে যাচ্ছি। একটি হলো কোরআন অপরটি হলো হাদিস। যারাই এ দুটি বিষয়কে আঁকড়ে ধরবে তারা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।’ (বুখারি-মুসলিম) বস্তুত কোরআন ও হাদিসের সঠিক জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান। এ সঠিক জ্ঞান আল্লাহ পাক তাঁর পছন্দনীয় বান্দাদের দান করেন। রসুল (সা.)-এর পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহেদিন, সালাফে সালেহিন, পীর-আউলিয়া, গাওছ-কুতুব এবং হক্কানি উলামায়ে কেরামরা বিভিন্নভাবে মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠার সঠিক দিকনির্দেশনা বাতলিয়ে দিয়েছিলেন এবং বর্তমানে দিচ্ছেন। বিশেষ করে মসজিদের মিম্বর থেকে তারা কোরআন-হাদিসের সঠিক তালিম দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের জন্য শান্তির বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। দিয়ে যাচ্ছেন কোরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা। পেশ করছেন কোরআন-হাদিসের ওপর আমল করার সঠিক দিকনির্দেশনা। তারা অন্যায়-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন ও উগ্রতার পথ পরিহার করে শান্তি ও সঠিক পথে চলার জন্য মানুষদের আল্লাহর বিধান শুনিয়ে যাচ্ছেন। শুধু মানুষ কেন কোনো প্রাণীকেই অন্যায়ভাবে জুলুম করার বিধান ইসলামী শরিয়তে নেই। ইমাম-খতিবরা আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন যে, কেউ জুলুম-নির্যাতন করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে কি আজাব হবে এবং সঠিক পথে চললে  ও মানুষদের শান্তিতে রাখলে আল্লাহর পক্ষ থেকে কি পুরস্কার পাবে দলিলভিত্তিক আলোচনা করে যাচ্ছেন। মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ, জিনা, ব্যভিচার ও দুর্নীতির খারাপ পরিণাম সম্পর্কে  কোরআন-হাদিসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। বস্তুত মাদকদ্রব্য সেবন, মদ, জুয়া, জিনা ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

লেখক : মুহাদ্দিস

মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর