বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মায়ের প্রতি মহব্বতের মরতবা

মাওলানা মাহ্মূদুল হাসান

আল্লাহপাকের দরবারে মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, জনৈক সাহাবি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু বলুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়ের চেহারার দিকে মহব্বতের নজরে একবার দেখলে একটি মকবুল হজের সওয়াব আমলনামায় লেখা হয়। সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, দুবার নজর করলে? নবীজী বললেন, দুটি মকবুল হজের সওয়াব আমলনামায় লেখা হয়। সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, একশতবার দেখলে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একশত মকবুল হজের সওয়াব আমলনামায় লেখা হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবা হজরত আলকামা (রা.)-এর মা বিশেষ কারণে পুত্রের প্রতি অসন্তুষ্টি ছিলেন। মৃত্যু শয্যায় তার জবান বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে হজরত আলকামা (রা.)-এর মা তাকে ক্ষমা করে দেন। অতঃপর নবীজী হজরত আলকামা (রা.)-কে বললেন, কালেমা পড়। এবার নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে তার জবানে জারি হয়ে গেল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। কালেমা পড়া শেষে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হলো— নবীর উপস্থিতিতে সাহাবি হওয়া সত্ত্বেও মায়ের অসন্তুষ্টির কারণে জবানে কালেমা উচ্চারিত হয় না।

হজরত ওয়াহ্শী (রা.) তখনো কাফের। ওহুদের যুদ্ধে তিনি হরজত হামজা (রা.)-কে শহীদ করেন। হজরত হামজা (রা.) ছিলেন ইসলামের এক সুদৃঢ় পাহাড়, যার শাহাদতে মুসলমানরা এক বিরাট শক্তি হারান। হজরত হামজা (রা.)-এর শাহাদতে হজরত রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মর্মাহত হন। কারণ একদিকে হজরত হামজা (রা.) ছিলেন ইসলামের সুদৃঢ় প্রাচীর, দ্বিতীয়ত তিনি ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা ও দুধভাই। হজরত হামজা (রা.)-কে শহীদ করার কিছু দিন পর হজরত ওয়াহ্শী (রা.) স্বেচ্ছায় নবীজীর দরবারে হাজির হয়ে কালেমা পড়ে মুসলমান হন এবং নবীজীর ধারেকাছে অবস্থান করতে থাকেন। এভাবে কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ওয়াহ্শী (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, হে ওয়াহ্শী! তুমি যদি আমার কাছে না আসতে তাহলে খুব ভালো হতো। কারণ তুমি আমার কাছে এলে তোমাকে দেখে আমার প্রিয় চাচা হামজার শাহাদাতের কথা মনে হয়। তখন আমার অন্তরে অত্যন্ত ব্যথা অনুভব হয়। আমার অন্তরের ব্যথায় তোমার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় কিনা!  তাই তুমি আমার সঙ্গে কম সাক্ষাত্ করতে আসবে। এরপর তিনি সিরিয়াতে চলে যান এবং সেখানে মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীন-ধর্মের কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন। কোনো দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসেননি।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর