শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব

সিস্টেম লসের নামে চৌর্যবৃত্তিকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে

বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা হরিলুট হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৫ শতাংশই সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়। এ বছর সিস্টেম লস বাবদ বিদ্যুৎ খাতে ১৮০০ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। এ সিস্টেম লসের অর্ধেকেরও বেশি চুরিজনিত কারণে ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকনিক্যাল কারণে সর্বোচ্চ সাত শতাংশ বিদ্যুৎ সিস্টেম লস হতে পারে। বাদবাকি ৮ শতাংশ বিদ্যুৎ বিতরণকারী বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে চুরি হচ্ছে। গড়ে বছরে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হয়। এর একাংশ চুরি হয় সরাসরি অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে। অন্য অংশ বৈধ সংযোগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরির কসরত দেখায়। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই চলে প্রায় প্রতিটি চৌর্যবৃত্তির ঘটনা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রায় প্রতিবছরই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চুরি বন্ধ হলে বিদ্যুতের দাম অন্তত ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু সরকার কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ সে পথে না গিয়ে বিদ্যুৎ চুরিকে সিস্টেম লস নাম দিয়ে এ চৌর্যবৃত্তির বৈধতা মেনে নিয়েছে। বিদ্যুৎ চুরির সঙ্গে বিতরণকারী পাঁচটি সংস্থার কর্মচারী ও সরকারি দলের ক্যাডার এবং মাস্তান নামধারী পাড়া-মহল্লার সন্ত্রাসীরা জড়িত। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বাবদ বিদ্যুৎ কর্মীদের পকেটে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা জমা হয়। ফুটপাথ, বস্তিসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ সংযোগের জন্য রাজনৈতিক টাউট ও মাস্তান নামধারীদের পকেটেও টাকা যায়। ব্যাটারিচালিত অটোবাইক চার্জেও ব্যবহূত হয় অবৈধ সংযোগ। এ খাতেই প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুরি হয়। বিদ্যুৎ চুরি বিদ্যুৎ বিভাগকে শুরু থেকেই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। চুরি বন্ধে নানা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধার কাজটি কেউ করেনি। আমাদের মতে, মাঠ পর্যায়ের বিদ্যুৎ কর্মীদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা গেলে বিদ্যুৎ চুরির বড় অংশই রোধ করা সম্ভব হবে।  চুরির সঙ্গে জড়িতদের বড় আকারের জরিমানার ব্যবস্থা করলে বিদ্যুৎ চোরদের মনে ভয় ঢোকানো সম্ভব হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর