শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

তাবলিগের মেহনত চলুক জীবনভর

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

তাবলিগের মেহনত চলুক জীবনভর

তুরাগ তীরে বয়ে চলেছে মানবঢেউ। এ ঢেউকে বলা যায় প্রশান্তির ঢেউ। মানবাত্মা যা উদগীরণ করে তাই হয় প্রশান্তিময়। মানুষকে আত্মাওয়ালা বানানোর মেহনত করে তাবলিগ জামাত। জিন্দা আত্মা মানুষের এই বিশ্ব ইজতেমা চলবে দুই দফায় ছয় দিন। কিন্তু এর দাওয়াতি কার্যক্রম চলবে কিয়ামততক। তাবলিগ মানে প্রচার করা, প্রসার করা, পৌঁছে দেওয়া, দাওয়াত দেওয়া। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও প্রচার কর।’ (বুখারি।)  এ হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ আল্লামা মোবারকপুরী (র.) লেখেন, ‘কোরআনের ছোট্ট আয়াত হলেও রসুলের পক্ষ থেকে তাঁর উম্মতের কাছে পৌঁছে দাও। (তুহফাতুল আহওয়াজি)। হাদিস বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বাল্লিগু’- প্রচার কর এটি নির্দেশসূচক ক্রিয়া। নবীর পক্ষ থেকে আয়াত পৌঁছানো উম্মতের ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য। আল্লাহর বাণী কোরআনের আয়াত প্রচার-প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করার কারণ হলো— কোরআন প্রচারের মাধ্যমে মানুষ অহির জ্ঞানে জ্ঞানী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘ইন্নামা য়াখশাল্লাহা মিন ইবাদিহিল ওলামা’— ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে।’ (সূরা ফাতের, ৩৫:২৫)। আর এমন আল্লাহভীরু-মোত্তাকি বান্দাদের জন্যই পবিত্র কোরআন পথনির্দেশক। আল্লাহ বলেন, ‘আলিফ-লাম-মীম, জালিকাল কিতাবু লা রাইবাফিহ, হুদাল্লিল মুত্তাকিন’—  এটি আল্লাহর কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহভীরুদের জন্য পথনির্দেশক। (সূরা বাকারাহ, ২:১-২)। আমাদের দেশের অনেক মুসলমান বিশ্ব ইজতেমাকে দ্বিতীয় হজ বা হজের পরে বিশ্ব সম্মেলন বলে থাকেন। অনেকে আবার ইজতেমাকে গরিবের হজ বা ছোট হজও বলে থাকেন। বিশেষ করে টিভি রিপোর্টার ও সাংবাদিক এবং একশ্রেণির নামধারী আলেম এরকম বেশি বলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, হজ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ রোকন। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের স্তম্ভ বা ভিত্তি পাঁচটি। ১. এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রসুল, ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, ৩. জাকাত আদায় করা, ৪. হজ করা ও ৫. রমজান মাসের রোজা রাখা। (বুখারি ও মুসলিম)। ইজতেমাকে কোনোভাবেই হজের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। সামর্থ্যবান কোনো মুসলমান পুরো জীবনে একবারও যদি ইজমেতার ময়দানে না যান তবে তার ব্যাপারে ধর্ম কোনো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেনি। কিন্তু সামর্থ্য থাকার পরও কেউ হজ আদায় না করলে আল্লার কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। কারণ এটি আল্লাহর হক। হজের ফরমান জারি করে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়েছে তা মক্কায় অবস্থিত। একে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছে এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং ইবরাহিমের ইবাদতের স্থান। আর যে এই গৃহের মধ্যে প্রবেশ করবে সে-ই নিরাপত্তা লাভ করবে। মানুষের মধ্য থেকে যারা এই ঘরে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তারা যেন এই ঘরের হজ সম্পন্ন করেন। এটি তাদের ওপর আল্লাহর হক। আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান, ২:৯৬-৬৭)। তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ উন্নত বিশ্বে এখনো প্রযুক্তির ছোঁয়া পায়নি বিশ্ব ইজতেমা। অনলাইনভিত্তিক দাওয়াতি কার্যক্রম থেকে এখনো পিছিয়ে তাবলিগের দীনি ভাইয়েরা।  ইজতেমার বয়ানে দাওয়াতের কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে বয়ান হয় না। রসুল (সা.) তাঁর যুগে প্রচলিত মিডিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটারভিত্তিক দাওয়াতি কাজে তাবলিগের ভাইদের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। বিশ্বের তরুণরা এখন সোশাল নেটওয়ার্ককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছেন। তাদের ধর্মের পথে আনতে হলে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয়গুলো তাবলিগী ভাইদের আন্তরিকতার সঙ্গে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।  আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

     www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর