সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে-স্কেল নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। শতভাগ বেতন বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে চাকরিজীবীদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাসের ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে এমনটিই আশা করা হয়েছিল। কিন্তু টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে নেওয়া এবং প্রশাসন ক্যাডারদের সব ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখার অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত চাকরিজীবীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। প্রশাসন ক্যাডারদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দ্বন্দ্বও চলে এসেছে প্রকাশ্যে। দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার যে সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে তা অবশ্যই একটি ইতিবাচক ঘটনা এবং প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু নতুন পে-স্কেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদমর্যাদার যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারকে দৃশ্যত বেকায়দায় ফেলেছে। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদায় নতুন পে-স্কেল যেভাবে আঘাত হেনেছে তা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। নতুন পে-স্কেল যে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন তাতে সন্দেহ প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। তবে যারা পে-স্কেল প্রণয়ন করেছেন তাদের মধ্যে সদিচ্ছার ঘাটতি ছিল কিনা তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। ক্যাডার নন-ক্যাডারদের মধ্যে যেভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না। ফলশ্রুতিতে নন-ক্যাডাররা বেতন বৃদ্ধি নয়, মর্যাদার প্রশ্নে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এবং তাদের একাংশ আন্দোলনেও নেমেছেন। শিক্ষকরাও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন আন্দোলনের পথ। পে-স্কেল প্রণয়নে সতর্ক হলে এমন বিসংবাদ যে এড়ানো যেত সহজে অনুমেয়। আশার কথা সরকার বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভের বিষয়টি আমলে নিয়েছে এবং কীভাবে বিদ্যমান অসন্তোষ দূর করা যায় তার চেষ্টাও চলছে। আমরা আশা করব বেতন বৃদ্ধির যুগান্তকারী ঘটনার সুফল ঘরে তুলতে যেসব ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে তার সমাধানে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে। তবে একই সঙ্গে পে-স্কেলের বৈষম্যের জন্য যাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে তাদেরও সহনশীল হতে হবে। বিষয়টির সম্মানজনক সমাধানে কোথায় কোথায় বৈষম্য রয়েছে তা যেমন সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে, তেমনি অসহিষ্ণু না হয়ে তা বিবেচনার জন্য সময় দিতে হবে। আমরা আশা করব সব পক্ষের দায়িত্বশীলতায় এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এবং নতুন পে-স্কেল সবার সন্তুষ্টি বিধানের প্রতীক হয়ে উঠবে।