শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইয়াবা আগ্রাসন

গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

ইয়াবার করাল গ্রাসের শিকার হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরা পড়ছে ইয়াবার বিপুল পরিমাণ চালান। ধরা পড়ছে প্রায় প্রতিদিনই কোনো কোনো মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। ইয়াবার আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে শহরে। এমনকি গ্রামগঞ্জেও তার থাবা বিস্তার লাভ করছে। এর মরণনেশায় ক্রমান্বয়ে জিম্মি হয়ে পড়ছে দেশের যুবসমাজ। রাজধানীর এমন কোনো মহল্লা নেই যেখানে এ মরণনেশা থাবা বিস্তার করেনি। বাইরের চিত্রও খুব একটা ভিন্ন নয়। এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে ছাত্র, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও। আনুমানিক হিসাবে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে অন্তত ২০ হাজার মানুষ জড়িত। ইয়াবা আসছে সীমান্ত ডিঙিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে। এর ব্যবহারকারীরা এ ব্যবসায় জড়িত হওয়ায় প্রতিদিনই ইয়াবা গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ইয়াবা আসক্ত ব্যবসায়ীরা নিজেদের খদ্দের বাড়াতে ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীদের ব্যাপক হারে এ নেশার রাজত্বে নিয়ে আসছে। ইয়াবা আসক্তদের মধ্যে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশি। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চললেও এর আগ্রাসন বন্ধে তা যথেষ্ট নয়। নানাভাবে রাজধানীতে এর চালান ঢুকছে। নদী, সড়ক ও রেলপথ— এ তিন পথেই ইয়াবা আনছে শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। কক্সবাজারের টেকনাফে বিজিবির কড়া অবস্থান ভেদ করেও ইয়াবার চালান নানা কৌশলে ঢাকায় আসছে। ইয়াবা এমন এক মাদক যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে। সেবন করলে তাত্ক্ষণিকভাবে হূত্স্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং মস্তিষ্কের কিছু কোষের তাত্ক্ষণিক মৃত্যু ঘটে। এ মাদক সেবনে হূৎ দুর্বল ব্যক্তিদের হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সহিংস যৌনতাও ইয়াবা সেবনের একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদিও এক বছর নিয়মিত এই মাদক সেবন করলে যৌনক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ট্রলার থেকে ১০ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। গাজীপুরে উদ্ধার করা হয়েছে ৭৬ হাজার পিস। এ মাদক নেশার আগ্রাসন কতটা যে বিস্তৃত এ পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ।  যুবসমাজকে এর আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে ইয়াবাবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা দরকার। একই সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর