সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনার মচ্ছব

আর কত ট্র্যাজেডি জন্ম দেবে

সড়ক দুর্ঘটনা যেন এক জাতীয় ট্র্যাজেডির নাম। গত শনিবার ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশে যেন দুর্ঘটনার মচ্ছব পড়েছিল। এদিন শুধু বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪ ঘণ্টায় আটটি দুর্ঘটনায় ভূমিমন্ত্রীর ছেলেসহ সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। দেশের বৃহত্তম সেতুতে ৪ ঘণ্টায় আটটি দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্পর্শকাতর এ স্থাপনায় প্রথম দুর্ঘটনার পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে অন্যগুলো যে এড়ানো যেত তা সহজেই অনুমেয়। একদিকে ঘন কুয়াশা অন্যদিকে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব দুর্ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী। বঙ্গবন্ধু সেতু এবং সংযোগ সড়কে গত ১৭ বছরে ৪৬৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে ২০১৫ সালে সারা দেশে ছোট-বড় ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৬৪২ জনের প্রাণহানি এবং ২১ হাজার ৮৫৫ জনের আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ হিসাবে গত বছর গড়ে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রতিদিন গড়ে ৫২ জন। ট্রান্সপোর্ট রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। ইউনিসেফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। আহতের সংখ্যা ৫০ গুণ বেশি। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের আনাড়িপনা যেমন দায়ী তেমনি বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাও দায় এড়াতে পারে না। জনসচেতনতার অভাবও দুর্ঘটনায় মদদ জোগায়। বুয়েটের গবেষণায় বাংলাদেশের চালকদের বিষয়ে আলোকপাত করে বলা হয়েছে, চালকদের বেশিরভাগই গাড়ি চালনা শেখেন অন্য এক চালকের কাছ থেকে। স্বভাবতই সেই চালকের ভুলগুলোও শেখেন নতুন চালক। জনসচেতনতার অভাব অর্থাৎ যেখানে সেখানে রাস্তা পার হতে গিয়েও অনেকে দুর্ঘটনায় পড়েন। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই প্রায় অন্তত দুই ডজন পরিবারের জন্য ট্র্যাজেডির জন্ম দিচ্ছে। পাশাপাশি বাড়াচ্ছে পঙ্গুত্বের হার। এ অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না এবং তার লাগাম টেনে ধরা জাতীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও জনসচেতনতা এ বিপর্যয় ঠেকানোর যথার্থ পথ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর