দেশের ব্যাংকগুলোতে অলসভাবে পড়ে রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো এ টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। জমাকৃত টাকার জন্য তারা গ্রাহকদের লভ্যাংশ দিচ্ছেন। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ব্যাংকে বিনিয়োগযোগ্য বিপুল অর্থ থাকলেও ঋণ গ্রহীতার অভাবে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। নানা অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে এগিয়ে না আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আর অবকাঠামো সমস্যা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দৃশ্যমান থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশি-বিদেশি সব উদ্যোক্তাই শঙ্কিত। এ সংশয়ের কারণে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। ঋণের জন্য উদ্যোক্তারা ব্যাংকে তেমন কোনো আবেদনই করছেন না। ব্যবসায়ীদের মতে, আস্থার ঘাটতির কারণে দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারের ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্য পূরণে ৮ শতাংশ হারে বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ তো বাড়ছে না, সরকারি বিনিয়োগও পিছিয়ে পড়ছে। বিশাল অঙ্কের অলস টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগে না এলেও আমানতকারীদের সুদ গুনতে হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ অবস্থা থেকে বেরোতে না পারলে কোনো কোনো ব্যাংক লোকসানের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কথায় বলে বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য যত হবে ততই সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশে দৃশ্যত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিদ্যমান পরিস্থিতির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অবস্থাও তেমনি। সরকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতিনিয়তই তারা আশঙ্কায় ভুগছেন। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বিদেশে শিল্প স্থাপনে সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছেন। দেশের বদলে বিদেশে ব্যবসা করার এ আগ্রহের পেছনে নিরাপত্তাহীনতাই যে জড়িত তা সহজে অনুমেয়। দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগী হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাস করে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উত্সাহিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলায় লাগাম পরাতেও নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।