শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা

মাওলানা মুহম্মদ জিয়াউদ্দিন

সূরা আল-ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যাহারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করিবে এবং সত্কার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কার্যে নিষেধ করিবে; ইহারাই সফলকাম।’ উক্ত আয়াতে উম্মতদের মধ্যে একটি জামাত থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যে জামাত ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করবে। যারা মানুষকে সৎ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে। অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য মানুষকে সাবধান করবে। মুজাদ্দেদীনে ইসলাম হজরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত তাবলীগ জামাত শুরু থেকে এ দায়িত্ব পালন করছে। তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশ্য আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করা। আল্লাহর হুকুমকে আত্মস্থ করা, আল্লাহ মুমিনদের যে পথে যেতে মানা করেছেন সে পথ থেকে দূরে থাকা।

তাবলিগ জামাত তাদের দীনি দায়িত্ব পালনে সত্যিকার অর্থেই অতুলনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দুনিয়াদারি লাভ লোকসান এবং আত্মপ্রচারকে উপেক্ষা করে তারা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরছে মানুষের সামনে। বিপথগামী মানুষকে সুপথে আনার জন্য তারা নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। বিশ্ব ইজতেমায় যারা অংশ নেন তাদের সবাইকে এক চোখে দেখা হয়। সামাজিকভাবে তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের পার্থক্য থাকলেও এখানে সবাই হাজির আল্লাহর বান্দা হিসেবে। তারা একে অপরের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বিশ্ব ইজতেমায় আত্মপ্রচার এবং আত্মগরিমার কোনো স্পর্শ থাকে না। এ মহাসম্মিলনে যারা যোগ দেন তারা দাওয়াতি কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার শপথ নেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা হা-মিম-আস সাজদার ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— ‘কথায় কে উত্তম ওই ব্যক্তি অপেক্ষা যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে এবং বলে আমি তো অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।’ উক্ত আয়াতে যারা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাদের প্রশংসা করা হয়েছে এ জন্য যে, তারা শুধু আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বানই করে না নিজেরাও নেক আমল করে এবং নিজেদের মুসলমানদের মধ্যে একজন ভাবে। পবিত্র কোরআনের আরও কিছু আয়াতে মুমিনদের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজেও উপস্থিত মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা যেন যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে তার বাণী পৌঁছে দেয়। বস্তুত এই আহ্বানের মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরা হয়েছে। তাবলিগের দাওয়াতি কার্যক্রম লাখ লাখ মানুষকে আল্লাহ ও তার রসুলের বাতলে দেওয়া পথে ফিরিয়ে এনেছে তাদের সৎ কর্মের সঙ্গী করেছে। অসৎ কর্ম থেকে দূরে থাকার ইমানি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শক্তি জুগিয়েছে।  বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে লাখ লাখ মুসল্লি সে পথকে আঁকড়ে ধরার ওয়াদা করছেন। মহান আল্লাহ তাদের সদিচ্ছাকে পূরণ করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর