শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

দল ভাঙার লাভক্ষতির সাতকাহন!

গোলাম মাওলা রনি

দল ভাঙার লাভক্ষতির সাতকাহন!

বছরখানেক ধরে রাজনীতির বাজারে জোর গুজব— বিএনপি ভেঙে যাচ্ছে! প্রথমে বলা হতো, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ভেঙে যাবে— জামায়াত বের হয়ে আলাদা রাজনীতি করবে এবং জাতীয় পার্টি সরকার থেকে বের হয়ে যাবে। বিএনপিকে একঘরে বন্দী করে জাতীয় পার্টি, জামায়াত এবং অন্য ছোট ছোট দল কৃত্রিমভাবে রাজপথ গরম করার চেষ্টা করবে এবং একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করবে। অনেক পুতুলসদৃশ রাজনৈতিক ভাঁড়ের নাচন-কুর্দনে যখন জনগণ বেশ আনন্দিত এবং আহ্লাদিত বোধ করবে তখন আরও উঁচুমাত্রার বিনোদন ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন নামক হোমযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। বাংলাদেশের রাজনীতির রাজজ্যোতিষীদের কুষ্ঠি বিচার বলতে গেলে মাঠে মারা গেছে। কারণ গত দুই বছরে ২০-দলীয় জোট থেকে একটি নামসর্বস্ব দল নিয়ে শওকত হোসেন নিলু নামের জনৈক ব্যক্তি বের হয়ে কী করেছেন তা দেশবাসী তো দূরের কথা, ঢাকাবাসীর মধ্যে প্রেসক্লাবের আশপাশের লোকজনও জানে না। অতিসম্প্রতি আবদুল লতিফ নেজামী নামের অন্য এক ভদ্রলোকের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও কোনো টুঁ-শব্দ না হওয়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ভাঙার প্রসঙ্গটি সামনে চলে এসেছে।

বিএনপি কখন ভাঙবে, কারা ভাঙবে এবং কীভাবে ভাঙবে এসব নিয়ে আজ কোনো আলোচনা করব না। আজ বরং রাজনৈতিক দলগুলোতে ভাঙনের প্রকারভেদ এবং এসব ভাঙনের ফলে শেষ অবধি কার কতটুকু লাভ-ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। প্রথমেই বলে নিই দল ভাঙার কারণ, সাধারণত আদর্শিক কারণেই এ উপমহাদেশের বেশির ভাগ দল ভেঙে গেছে এবং অনেক উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। হাতে গোনা দু-একটি টিকে আছে এবং বাকিরা হারিয়ে গিয়ে নিজেদের ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে। আদর্শিক কারণের বাইরে ব্যক্তিগত হানাহানি, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, পদ-পদবির লোভ এবং টাকা-পয়সা ধন-সম্পত্তির বিলি-বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে অনেক বড় বড় দল ভেঙে যায়। উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছিল মূলত হিন্দু-মুসলিম জাতিগত সত্তা এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে। অন্যদিকে, মুসলিম লীগের প্রথম ভাঙন হয়েছিল স্বাধীন পাকিস্তানে আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে।

আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ হওয়ার পরও দলটির ভাঙন ঠেকানো যায়নি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে সদলবলে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে যান অনেকটা অপমানিত হয়ে। তার বের হয় যাওয়ার কারণ হিসেবে নীতি ও আদর্শের বহু কথা বলা হলেও তিনি সে আমলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে নেতৃত্বের বিরোধে কোণঠাসা হয়ে পড়ার কারণে চলে গিয়েছিলেন তা কম-বেশি সবাই জানে। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে জাসদের জন্ম হয়েছিল মূলত আদর্শিক কারণে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কিংবা সংঘাত হয়তো ছিল কিন্তু তার চেয়েও বেশি ছিল আদর্শিক দ্বন্দ্ব। সেদিন যদি জাসদের জন্ম না হতো তাহলে হয়তো আমাদের ইতিহাস ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতা লাভ করত।

স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক দলের গঠন ও ভাঙন হয়েছে স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি, ন্যাপ, জাসদ, বাসদ প্রভৃতি দলের ভাঙনের জন্য বাইরের কাউকে কিছুই করতে হয়নি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পদ-পদবির লড়াই, পারস্পরিক হিংসা-দ্বেষ, রেশ এবং লোভ-লালসার কারণে দলগুলোয় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে দলের নেতা-কর্মী তো বটেই, সাধারণ লোকজনকেও রক্ত দিতে হয়েছে।

দল ভাঙার নানারূপ তেলেসমাতির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে রাজপথ কাঁপানো প্রধান প্রধান বিরোধী দল ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার অপচেষ্টা। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব শাহির জমানায় রাষ্ট্রীয় মদদে সর্বপ্রথম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা হয়। ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ১৯৬০-৬৩ সালের দিকে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুকে বেশির ভাগ সময় জেলে থাকতে হয় এবং সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ওপর সৃষ্টি করা হয় প্রচণ্ড মানসিক চাপ। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিত্সার জন্য চলে যান বৈরুতে। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি সেখানেই ইন্তেকাল করেন।

সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু খুব দ্রুত ক্ষমতার পাদপীঠে চলে আসেন। তার অগ্রযাত্রা, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং অসম্ভব জনপ্রিয়তা ক্ষমতাসীনদের ভাবিয়ে তোলে। আইয়ুব খান পুনরায় চেষ্টা চালান আওয়ামী লীগকে ভেঙে ফেলার জন্য। দলের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে কোণঠাসা করার জন্য অথবা তাকে রাজনৈতিকভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে দেওয়ার জন্য শুরু হয় নতুন চক্রান্ত। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একমাত্র কন্যা বেগম আকতার সোলায়মানকে আওয়ামী নেতৃত্বের শীর্ষপদে বসিয়ে তাকে দাবার ঘুঁটি বানানোর চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে দল ভাঙার খেলাধুলা শুরু হয়েছিল এরশাদ আমলে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রহননের কাজটি শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে এবং পদ-পদবির টোপ দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে নিজ দলে নিয়ে আসার যে প্রকল্প তিনি হাতে নিয়েছিলেন বর্তমান জমানায় এসে তার সেই কীর্তি মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। জিয়া-পরবর্তী ক্ষমতাসীনরা মূলত জিয়ার আদর্শ ধারণ করে এবং তাকে মানস পিতার আসনে বসিয়ে ভিনদলের নেতা-কর্মীদের লোভ দেখিয়ে নিজ দলে আনার যে প্রতিযোগিতা করেছেন তা দেখলে স্বয়ং জিয়াউর রহমান সাহেব অবশ্যই লজ্জা পেয়ে যেতেন।

এরশাদ আমলে আওয়ামী লীগের ওপর প্রথম আঘাতটি আসে প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের কাছ থেকে। তিনি দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে যান এবং ‘বাকশাল’ নামের নতুন দল গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় আঘাতটি আসে ১৯৯২ সালে। ড. কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখের নেতৃত্বে গঠিত হয় গণফোরাম। গণফোরাম গঠিত হওয়ার অনেক আগে মোস্তফা মহসীন মন্টুর নিয়ন্ত্রণাধীন ছাত্রলীগের শক্তিশালী গ্রুপটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক তত্পরতা চালায়। বিভক্ত হয়ে যায় ছাত্রলীগ। মন্টু সাহেবের অনুসারীরা ছাত্রলীগ মিলু নামে আত্মপ্রকাশ করে। আওয়ামী লীগের ওপর তৃতীয় এবং সবচেয়ে ভয়াবহতম আঘাতটি আসে ১/১১-এর সময়ে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতা ‘সংস্কারবাদী’ নাম ধারণ করে ক্ষমতাসীনদের মদদে এমন তাণ্ডব শুরু করেন যাতে দলীয় সভানেত্রীর পক্ষে অস্তিত্ব বজায় রাখাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। নিজ দলের সংস্কারবাদীদের চক্রান্তে তাকে শেষ পর্যন্ত জেলে গিয়ে দায় মেটাতে হয়।

আওয়ামী লীগের ভাঙনের ইতিহাসের চেয়ে বিএনপির ভাঙন প্রক্রিয়া নির্মম, নিষ্ঠুর এবং অভিনব। এরশাদ শাহি প্রাণান্ত চেষ্টা করেছিল বিএনপিকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য। পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার সব আয়োজন পাকাপোক্ত করা হয়েছিল। জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে এরশাদ বিএনপির বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাকে পদ-পদবি, লোভ-লালসা এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে নিজ দলে নিয়ে আসেন। এরপর দলটিতে প্রথম ভাঙন ধরান কে এম ওবায়দুর রহমান। পরে ডা. বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা দল ছেড়ে ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামক একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন। হাল আমলের নাজমুল হুদার ‘তৃণমূল বিএনপি’ এবং ‘নতুন বিএনপি’র উত্পাত শুরু হওয়ার আগে দলটি মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছিল গত ১/১১-এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।

এবার জাতীয় পার্টি সম্পর্কে কিছু বলে নিই। তারপর শিরোনাম প্রসঙ্গে আলোচনা করে উপসংহারে চলে যাব। জাতীয় পার্টি তার শাসনামলে বিএনপি-আওয়ামী লীগকে নাচানোর জন্য যে বাঁশের বাঁশি বাজিয়েছিল, তার চেয়েও বাঁকা বাঁশের তৈরি বাঁশি ও নাকি নাকি এবং চোয়া চোয়া সুর তুলে ক্ষমতাসীনরা গত ২৫ বছরে অন্তত ২৫ বার হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো জাতীয় পার্টির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-গৌরী-বুড়িগঙ্গাসহ পাঁচশটি নাম-করা নদ-নদীতে চুবিয়ে এনেছে। ফলে দলটির শরীরে কোনো প্রাণশক্তি আজ অবশিষ্ট আছে কিনা তা খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না। অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা-হামলা, ভয়ভীতি এবং অতিরিক্ত প্রেম-ভালোবাসার কারণে এই দলের অনেক নেতানেত্রীর মাথা আউলা-ঝাউলা হয়ে গেছে। তাদের চিত্ত বড়ই চঞ্চল, মন দুর্বল এবং শরীর অবিশ্বাস্য রকম নুয়ে পড়েছে। গত ২৫ বছরে জাতীয় পার্টি কমপক্ষে ২৫ বার ভেঙেছে— আবার বেশ কয়েকবার জোড়াও লেগেছে। তবে ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিকাল হিসেবে জাতীয় পার্টি গত দুই বছর ধরে ভয়ানক একটি অস্বস্তিকর সময় পার করছে এবং নিজেদের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের দল ভাঙার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, ভাঙা-গড়ার খেলায় কেউ লাভবান হয় না, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবাই। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে কেন এত রাজনৈতিক নোংরামি হয়ে থাকে। এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে মানুষের আভিজাত্য, উন্নত চিন্তা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং মাধুর্যময় চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলা যাক। একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে বংশপরম্পরায় শিক্ষা-দীক্ষা, ভালো কাজ এবং ভালো চিন্তার অব্যাহত অভ্যাসকেই বলা হয় আভিজাত্য। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে জাতি যা আশা করত এবং জাতি যা পেয়েছিল তা কোনো ভুঁঁইফোড় রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে আশা করাটাই অবান্তর। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস গত ৭০ বছরে এতটাই আঁকাবাঁকা সর্পিল গতিতে চলে আসছে যে, এ পথের যাত্রীদের মধ্য থেকে সহজ-সরল এবং সুন্দর মনের মানুষ পয়দা হতে পেরেছে খুবই সীমিত সংখ্যায়। ফলে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৌজন্য, নম্রতা, ভদ্রতা এবং বিনয় অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ ভারতের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যক্তিত্ব, রুচি, পারিবারিক সুনাম এবং ভালো মানুষের ভাবমূর্তির সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমান জমানার জন্য আফসোস করা ছাড়া কীই বা করার আছে। আগেকার দিনে নেতারা অবশ্যই তাদের অনুসারী এবং সাধারণ মানুষের চেয়ে সব ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতেন। বর্তমানে হয়ে গেছে ঠিক বিপরীত। সারা জীবন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া লোকটিকে তার জীবনের এক প্রান্তে এসে এমন এক লোককে নেতা হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে যে কিনা ছাত্রজীবনে কোনো দিন সামনের বেঞ্চে বসতে সাহস পায়নি এবং ম্যাট্রিক পাস তো দূরের কথা অষ্টম শ্রেণির ফাইনালে ফেল করতেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে।

আমরা আজকের নিবন্ধের একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। কেন একটি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলে ভাঙন ধরায় এমনতর প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়— কেবল বিশ্বাস এবং আস্থার সংকট থেকে তারা এসব কাজ করে থাকে। ক্ষমতাসীনরা প্রথমত নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। দ্বিতীয়ত, তারা নিজেদের পতনের বা পরাজিত হওয়ার শঙ্কায় মারাত্মক উত্কণ্ঠাবোধ করে। তারা জনগণকে বিশ্বাস করতে পারে না, অন্যদিকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিশ্বাস করার মানসিক শক্তিও হারিয়ে ফেলে।

এবার একটি সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্নের জবাব দিই। প্রশ্নটি হলো— কেন ক্ষমতাসীনরা নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং জনগণসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বিশ্বাস করতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা যখন কাজের চেয়ে প্রচার-প্রপাগান্ডা বেশি করে, কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবর্তে খামখেয়ালির আশ্রয় নেয় এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তখন নিজেদের প্রতি আস্থার সংকট আরম্ভ হয়। জনগণ এবং বিরোধী দলকে অবিশ্বাস করার প্রধান কারণ হলো তাদের দুর্বল, বোকা এবং ভীতু হিসেবে মূল্যায়ন করা। শাসক যদি অহরহ মিথ্যা বলে, ভাঁওতাবাজি করে এবং সবাইকে ঠকায় তবে তার পক্ষে কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে অত্যাচার, অনাচার, অনিয়ম, দুর্নীতি, জুলুম এবং চিরদিন ক্ষমতায় থাকার অবারিত বাসনা শাসককে প্রবলভাবে অবিশ্বাসী এবং অহংকারী করে তোলে।

আজকের বিষয়ের আলোচনার উপসংহার একেবারেই সংক্ষিপ্ত, দল ভাঙার অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়— এটা ভালো কাজ নয়। ও কাজে নিজেদের ক্ষতি হয় বেশি এবং অতীতের সরকারগুলো ক্ষমতা হারানোর ঠিক অল্প কদিন আগে বিরোধী দল ভাঙার মন্দ খেলায় মেতে উঠেছিল।

তারপর ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে তাদের শত্রুদের নাজেহাল করার আগে নিজেরাই ভয়ানক নাজেহালের শিকার হয়ে ছিটকে পড়েছিল ক্ষমতা থেকে।

লেখক : কলামিস্ট

সর্বশেষ খবর