শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

একাত্তরের শহীদদের তথ্যভাণ্ডার চাই

তুষার কণা খোন্দকার

একাত্তরের শহীদদের তথ্যভাণ্ডার চাই

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কোনো জার্মানকে প্রশ্ন করলে সে টুঁ-শব্দ না করে একবারে নিশ্চুপ বনে যায়। হাজার চাপাচাপির মুখে কোনো জার্মানের মুখ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে একটি শব্দও আমি উচ্চারিত হতে দেখিনি। দুনিয়ার সব দেশের মানুষ জার্মানদের এ নীরবতাকে জার্মানদের জাতিগত ট্যাবু বলে মেনে নিয়েছে।  জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গে নিশ্চুপ থাকে বলে কি আমরা ধরে নেব যে জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দুনিয়াজুড়ে তাদের হিংস্র কৃতকর্মের জন্য এখন অনুতপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজি সরকারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জার্মান নাজি বাহিনী নিজ দেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ইহুদি নিধনে মেতে উঠেছিল। জার্মানির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা যুদ্ধ জোটভুক্ত অন্যান্য দেশ যাদের সমবেতভাবে অক্ষ শক্তি বলা হয়ে থাকে তাদের বাহিনীগুলো নৃশংসতা দেখানোর কাজে অনেক সময় জার্মান বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্বর মিত্রদের নৃশংসতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে জার্মানরা লজ্জিত বলে কি তারা যুদ্ধের প্রসঙ্গে নিশ্চুপ থাকে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সাড়ে ছয় বছর ধরে দুনিয়ার বুকে নরক নামিয়ে আনার অপরাধবোধ থেকে কি জার্মানরা মনের মধ্যে জ্বলে-পুড়ে মরছে? তারা নিজেরা এ প্রসঙ্গে মুখ ফুটে দুনিয়াকে এখনো কিছু জানায়নি। কাজেই জার্মানদের নীরবতার কারণ এক কথায় নির্ধারণ করা কঠিন। জার্মানদের নীরবতার কারণ হিসেবে তাদের মনের মধ্যে অনুতাপের অস্তিত্ব আমরা কল্পনা করে নিয়েছি। জার্মানরা কেন নিশ্চুপ থাকে সে প্রশ্নের জবাব আমরা কেউ জানি না। আমরা ধরে নিই, জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর সব কাজ করেছে, যা নিয়ে কথা বলতে তারা লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আদতে বিষয়টি তেমন নাও হতে পারে। ব্যবসার প্রয়োজনে জার্মানদের সঙ্গে আমার সুদীর্ঘ দিনের যোগাযোগ। গত ২০ বছরে জার্মানদের সঙ্গে গড়ে ওঠা ঘনিষ্ঠতার হরেক স্মৃতি আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে। জার্মানদের সঙ্গে অনেক প্রসঙ্গে অনেক রকমের আলাপচারিতার সূত্র ধরে জার্মানদের মনোভাব বিশ্লেষণ করে আমি নিশ্চিত নই যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাজি পার্টির নৃশংসতার স্বরূপ জানতে পেরে জার্মানরা এখন অনুতপ্ত। নাজি পার্টির নেতা হিটলারকে  আজকের দিনে জার্মানরা সম্মান করে নাকি জার্মান জাতি তাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে সেটাও এত বছরে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। জার্মান সমাজে আমার পরিচিত মহলে যাদের বয়স পঞ্চাশের কোঠায় তাদের যখন নাজি পার্টির উত্থান এবং ওই সময়ের জার্মান রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করেছি তখন তারা বলেছে, ‘দুঃখিত। এ বিষয়ে আমি তোমাকে ধারণা দিতে পারব না, কারণ আমার জন্ম পঁয়তাল্লিশ সালের পরে।’ জবাবে বলেছি, ‘মোগল আমলে আমার জন্ম হয়নি এ কথা সত্য। কিন্তু তাতে কী হয়েছে। ভারতে মোগল শাসন সম্পর্কে তুমি কী জানতে চাও বল আমি তোমাকে সে বিষয়ে ধারণা দিচ্ছি।’

১৯৩০-এর দশকের ভোটের হিসাব মিলাতে বসলে দেখা যায় জার্মান জাতের খুব অল্প মানুষ নাজি পার্টির সমর্থক ছিল। শুধু তাই নয়, নাজি পার্টি যখন জার্মানিতে সরকার গঠন করে গদিনসিন হয় তখন নাজিরা সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবিদার ছিল না। জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বোধ টানাপোড়নের ফাঁক গলে হিটলার গদিতে চড়ে গিয়েছিল। কথা এখানেই শেষ নয়। যে হিটলারকে নিয়ে এত কথা সেই হিটলার জার্মানির মূল ভূখণ্ডের সন্তান নয়। হিটলার অস্ট্রিয়ার বাসিন্দা। ১৯২০ সালে একজন তালা-চাবির মিস্ত্রি অ্যান্টন ড্রেক্সলার জার্মানিতে নাজি পার্টির সূচনা করেছিলেন। ১৯২১ সালে অস্ট্রিয়ান হিটলার সেই নাজি পার্টির হাল ধরেছিলেন। ১৯৩৩ সালে হিটলার যখন জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলেছে তখনো তার নাগরিকত্বের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। হিটলার জার্মান নয় এ কথা জার্মানরা জোর গলায় বলে দিলেই তো নিষ্ঠুরতার গ্লানি তাদের গা থেকে মুছে যেতে পারত। কিন্তু এমন কথা জার্মানরা কখনো বলে না। জার্মান জাতের আবাল-বৃদ্ধবনিতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে কেন? নাজি পার্টির গ্লানি গা থেকে মুছে ফেলার জন্য জার্মানদের পক্ষে এত শক্তিশালী যুক্তি থাকার পরেও জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রসঙ্গে নিশ্চুপ মেরে থাকে কেন? আমার বিশ্বাস, জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায় কারণ সেই যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছিল। হিটলার অস্ট্রিয়ার বাসিন্দা হলেও নাজি পার্টির কুশীলবরা কেউ অস্ট্রিয়া থেকে আসেনি। জার্মান সেনাবাহিনী, গেস্টাপো বাহিনী, হিটলার ইউথ এরা সবাই ডয়েসল্যান্ডের সন্তান ছিল। কাজেই নাজি জার্মানির পরাজয়কে জার্মান জাতি নিজেদের পরাজয় বলে মেনে নিয়েছে। হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতার গ্লানি থেকে নয়, যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এ সত্য বোধ হয় তারা আজও মানতে পারে না। আমার বিশ্বাস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি মেনে নেওয়ার কষ্ট ভুলতে জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু বিজয়ীরা কি নিশ্চুপ হয়ে আছে? নিশ্চয়ই নয়। বিশেষ করে ইহুদিরা যারা হিটলারের নির্যাতনের নির্মম শিকার হয়েছিল তারা একদিনের জন্য এ সত্য ভোলেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত প্রত্যেক ইহুদির তথ্য তারা সযত্নে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করেছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলে পাকিস্তান যদি নিশ্চুপ মেরে থাকত তাহলে আমি তাদের দোষ দিতাম না। আমি জানি, স্বাভাবিক নিয়মে পরাজিত জাতি তাদের ইতিহাসের গ্লানির অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতে সঙ্কুচিত বোধ করে। পাকিস্তানের জন্য বিষয়টি আদপে তেমন ঘটেনি তার প্রমাণ আমরা মাঝেমধ্যেই টের পাই। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আমরা বাঙালিরা গর্বিত, কারণ আমরা বিজয়ী জাতি। বিপরীতে যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের ইতিহাস আত্মসমর্পণের গ্লানি মাখা। দুনিয়ার সামনে নিজেদের দেশের ইতিহাসের পাতা মেলে ধরা পাকিস্তানের জন্য কঠিন। পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালের যুদ্ধ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটে থাকা। আমরা বাঙালি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা আমাদের ইতিহাসের প্রতিটি পাতা দুনিয়ার সামনে নিসঙ্কোচে মেলে ধরার সাহস রাখি। আমি বিশ্বাস করি, বাঙালি জাতির ইতিহাসের পাতাগুলো শহীদের রক্ত দিয়ে ধোয়া। আজকের দিনে কেউ চাইলেও  ইতিহাসের পাতা থেকে রক্তের দাগ মুছে বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে রক্তশূন্য একটি ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবে না। ১৯৭১ সালে আমরা জয়ী হয়েছি এটি যেমন সত্য, তেমনি বিজয়ের মূল্য বাবদ আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি এ তথ্যও সত্য। আমরা আমাদের শহীদদের কথা ভুলিনি। রাজনীতিকরা আমাদের শহীদদের কতটুকু মনে রেখেছেন সেটি আমার জানা নেই। গদিতে যাওয়ার লোভে রাজাকারের নোংরা হাতে যারা চুমু খেয়েছে তারা এ দেশেরই রাজনীতিক। কারা কখন কীভাবে রাজাকারের হাতে চুমু খেয়ে গদিতে চড়েছে সে কথা দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আরেক দল রাজনীতিকের বদান্যতায় আমাদের চোখের সামনে রাজাকাররা এদেশে মন্ত্রী হয়েছে। মন্ত্রী হওয়ার গর্বে জনসমক্ষে তারা যেসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলেছে সেগুলো মনে পড়লে আমরা সাধারণ মানুষ লজ্জায় ক্ষোভে মাটিতে মিশে যাই। তবে রাজাকারের সঙ্গে আপস না সংঘাত সেই ছলচাতুরির অঙ্ক রাজনীতিকদের বিষয়, যার সঙ্গে এদেশের সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক ছিল না কিংবা আজও নেই।

১৯৭১ সালে যারা সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন কিংবা পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের নৃশংসতায় প্রাণ দিয়েছেন তারা সবাই শহীদ। সে সময় এক কোটি মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের অনেকগুলো রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের একটা বড় অংশ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পেয়েছিলেন আবার অনেকে ভারতে বসবাসরত আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করেছেন। শরণার্থী শিবিরে এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যারা অভাব, অনাদর কিংবা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তারাও শহীদের মর্যাদার দাবিদার। যুদ্ধের ময়দানে কিংবা বধ্যভূমিতে অস্ত্রের আঘাতে তারা প্রাণ না হারালেও যুদ্ধের কারণে তাদের দুর্দশায় পড়ে মারা যেতে হয়েছে। সব শহীদের জন্য ইতিহাসের পাতায় সুনির্দিষ্ট মর্যাদার আসন থাকতে হবে যেটি সংখ্যা উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যেতে পারে না। এই মাটির প্রতিটি সন্তান যারা বাংলাদেশ নামের দেশটির জন্ম দিতে গিয়ে নিজেরা মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন তাদের সম্পর্কে যেটুকু তথ্য যেখানে যেভাবে পাওয়া সম্ভব সেটি সংগ্রহ করে রাখতে হবে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জন্ম পরিচয় ছিল, পরিবার ছিল, পরিবারটির বসবাসের জন্য ছিল একটি গ্রাম, থানা এবং জেলার গণ্ডি। মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের বুকের মধ্যে নিখাঁদ সুন্দর একটি স্বপ্ন বিলি কাটত। কিন্তু আমরা, স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বাধীনতার পরে তাদের নাম-পরিচয় জানার কোনো চেষ্টা কি করেছি? স্বাধীনতার পরে এতগুলো বছর কেটে গেলেও দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে যাওয়া মানুষগুলো সংখ্যার গণ্ডিতে আটকে আছে। শহীদের নাম-পরিচয় ঠাঁই ঠিকানা নিয়ে কোনো তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার দায়িত্ব আমরা কেউ পালন করিনি বরং শহীদের সংখ্যা গণনার নামে একটি নতুন রাজনৈতিক বাহানা জুড়ে বসেছি। রাজনীতিকরা ভাবছেন, শহীদের সংখ্যা গণনার ছুঁতা ধরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা গেলে মন্দ কি! আমাদের কাছে শহীদের সংখ্যা গণনা মুখ্য নয়, আমরা শহীদের বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ রাষ্ট্রীয় তথ্যভাণ্ডার চাই। বর্তমান সরকারের সময় শহীদদের তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা এবং সেই তথ্যভাণ্ডার জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা জরুরি। নতুন প্রজন্ম যেন হাত বাড়ালেই একজন শহীদ সম্পর্কে অনলাইনে সব তথ্য পেতে পারে। ১৯৭১ সালে নিজ পরিবারে কিংবা গ্রামে কিংবা এলাকায় কে কোথায় কার হাতে কীভাবে নিহত হয়েছে সেসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে এখনো জীবিত আছেন। আর কিছু দিন গেলে প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের অনেকে আর জীবিত থাকবেন না। তখন আমরা চাইলেও একটি তথ্যভাণ্ডার গড়তে পারব না। কাজেই এ কাজে দেরি করার মতো যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে নেই।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে এটি পাকিস্তানিরাও অস্বীকার করেনি। তারা বলেছে, যুদ্ধে বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে তবে তাদের সংখ্যা আমরা বলতে পারব না। ১৯৭২ সালে পাকিস্তান সরকারের পোষ্য হামিদুর রহমান কমিশন মিনমিনে গলায় বলেছিল, পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশে ছাব্বিশ হাজার সিভিলিয়ানকে হত্যা করেছে। হামিদুর রহমানের উদ্ভট মিথ্যাচার পাকিস্তানিরাও বিশ্বাস করেছিল কিনা সন্দেহ। কারণ পাকিস্তান এ বিষয়ে পরে আর উচ্চবাচ্য করেনি। আমাদের দেশে যারা ভয়ঙ্কর রাজাকার, যারা গণহত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তারা তাদের মতো করে যুক্তি সাজিয়ে বলে থাকে, ‘একাত্তর সালে বেশ কিছু হিন্দুকে আমরা মেরেছি কারণ তারা কাফের ছিল। আর যেসব মুসলমান বিপথগামী হয়ে ভারতের তাঁবেদারি করছিল তাদের অনেককে আমরা হত্যা করেছি।’ রাজাকাররা তাদের হাতে ঘটে যাওয়া বর্বর হত্যাযজ্ঞের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু হত্যাযজ্ঞের সত্যতাকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখায়নি। জীবিত এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম-শক্তি-সাহস এবং ত্যাগের সঙ্গে গণমানুষের রক্তস্রোত মিশে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মারপ্যাঁচে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার শুদ্ধতা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হলেও আমি বলি, তবুও এটি মন্দের ভালো। মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কে কতটুকু পাচ্ছেন তার চেয়ে বড় কথা তারা মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকৃতির সম্মানটুকু পেয়েছেন। কিন্তু একাত্তর সালের যুদ্ধে যারা তাদের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়ে আমাদের একটি দেশ উপহার দিয়ে গেলেন তাদের নাম-ধাম সংখ্যা কিছুই আমাদের জানা হলো না।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। বর্তমান সরকার চাইলে ১৯৭১ সালের নয় মাসে শহীদদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে পারে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করার আগে সরকারকে বলতে হবে যে, শহীদের তালিকার সূত্র ধরে কেউ কোনো ফায়দা নিতে পারবে না— এটি শহীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে চিরকাল সংরক্ষিত থাকবে। জনসমক্ষে এ কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে পারলে শহীদের শুদ্ধ তালিকা তৈরির কাজ সহজ হয়ে যাবে।  চল্লিশ বছরে অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে তবুও শহীদদের পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী, চেনাজানা মানুষের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

লেখক : কথাসাহিত্যিক।

সর্বশেষ খবর