বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আস্ফালন বুমেরাং হতে পারে

নূরে আলম সিদ্দিকী

আস্ফালন বুমেরাং হতে পারে

আমি বারংবার বলেছি, এই সংসদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে অকার্যকর, নিষ্প্রাণ, বন্দনা-অর্চনার পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে (যদিও আমার এ বক্তব্যটি দিগন্তবিস্তৃত মরুভূমির মরীচিকার মতো গুমরে মরেছে। আমার হৃদয়ে কখনো আর্তনাদ, কখনো রক্তক্ষরণের মতো আমাকে নির্দয়ভাবে দগ্ধীভূত করেছে।) রাজনীতিতে বিরোধী দলের অস্তিত্বহীনতা, সৎ, স্বচ্ছ, নির্বিকার, আদর্শবান নেতা ও কর্মীর যে প্রকট সংকট বিএনপিতে রয়েছে, হয়তো সেই কারণটিই বিএনপিকে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা ও পেট্রলবোমার আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে।  ২০ দলীয় জোট নেত্রীর হৃদয়ের গভীরে হয়তো সামান্য হলেও বিশ্বাস ছিল, ওই পথেই তিনি সফল হবেন এবং জনতা রুদ্ররোষে সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা বুমেরাং হয়েছে।

সংসদের অভ্যন্তরে কাকুতি-মিনতি করে, এমন মেরুদণ্ডহীন একটা বিরোধী দল গড়ে তোলা হলো, সেখানেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতেও ব্যর্থ হয়েছে। কোন ভরসায় তারা এ ধরনের স্তাবক বনে গেলেন যে, সংসদের অভ্যন্তরে স্তাবকতা, অর্চনা, বন্দনা ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারলেন না! সরকারে অংশীদারিত্ব ছাড়াও এরশাদ সাহেব স্বয়ং মন্ত্রীর মর্যাদায় বিদেশবিষয়ক বিশেষ দূত হয়ে না পারলেন সেখানেও কোনো সফলতা দেখাতে, না পারলেন সংসদেও কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে। পিঞ্জিরাবদ্ধ বাঘের মতো কালেভদ্রে একটু তর্জনগর্জন শোনা গেলেও ‘যথা পূর্বং তথা পরং’। সংসদের ভিতরে এবং বাইরে এই যখন সার্বিক অবস্থা— ক্ষমতাসীন জোট সেটাকে সাহসিকতা ও সৃজনশীলতার আঙ্গিকে ব্যবহার করতে পারলে দেশটির যে সার্বিক অর্জন হতে পারত তা তো হয়ইনি, বরং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সামাজিক বিপর্যয়কে ক্রমান্বয়ে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে।

সংসদ, জোট, সংগঠন, শাসনতন্ত্র, প্রশাসন— সবকিছুই যখন একটি আঁচলে বাঁধা— তখন ক্ষমতাসীন জোটের আতি, পাতি, উঠতি ও হাইব্রিড নেতাদের হুঙ্কার শুনতে হয়— নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে তো নির্বাচন হবেই না, মধ্যবর্তী নিবাচন দাবি করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আইন প্রণয়নও করা যেতে পারে। অথচ দেশ, জাতির প্রয়োজনে যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন সরকারের জন্য লজ্জার তো নয়ই, বরং সরকারই কখনো কখনো ইচ্ছা করেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করে থাকে।

দুর্নীতি আজ সব মূল্যবোধকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আজকে অর্থনৈতিক যে অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে, তা ভাবলেও ভয়ে শিউরে উঠতে হয়। আমি বুঝি না, আইয়ুব খানের চেয়েও নিরুপদ্রব একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘটনাচক্রে প্রাপ্তিলাভ করেও শেখ হাসিনা সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না কেন! আমদানি-রপ্তানির দৈন্যদশা, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অচলাবস্থা, শেয়ারবাজারের মর্মান্তিক দুরবস্থা, ক্রমাগত শেয়ারের দরপতন শেখ হাসিনাকে এতটুকুও উদ্বিগ্ন করে না কেন! এখন সন্ত্রাস ও বিক্ষিপ্ত কিছু জঙ্গি কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করা ছাড়া সরকারের কর্মক্ষমতা তো অপ্রতিরোধ্য। চুলকে ঘা করার মতো মুক্ত অর্থনীতির গণতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা, বিশেষ করে আমেরিকার তীব্র, তীক্ষ সমালোচনায় ব্যাপৃত থাকা, বৈদেশিক নীতির চরম ব্যর্থতা এবং নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার দাম্ভিক উচ্চারণের পুনরাবৃত্তি ছাড়া সংসদের ভিতরে ও বাইরে ক্ষমতাসীন জোটপ্রধানের আর কোনো সৃজনশীল বক্তব্য শোনা যায় না। ভারতের প্রতি নিছক আনুগত্যবিবর্জিত নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে সৃজনশীল ধারায় ভারতের নীতির ও কর্মযজ্ঞের পর্যালোচনা করলে অবশ্যই শেখ হাসিনা অবহিত হতেন যে, আজ ভারতজুড়ে সর্বক্ষেত্রেই বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পটভূমি তৈরি করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য শক্তিসমূহ তো বটেই, চীন-পাকিস্তানের মতো চিরশত্রুদেরও বশীভূত করে ভারত পৃথিবীকে জানান দিতে মরিয়া যে, বিনিয়োগের জন্য ভারত এখন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। জনশক্তি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ যে কোনো বিনিয়োগকে ধারণ করতে ভারত আজ প্রস্তুত। ব্যাঙ্গালোরকে তারা তো আইটি নগরীতে রূপান্তরিত করেছেই। পদ্মা সেতু নিয়ে লম্ফঝম্প করার ফাঁকে ফাঁকে আমরাও যে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি না, তা নয়। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক শিল্পপতিদের আকৃষ্ট করা তো দূরে থাক, দেশীয় পুঁজি নতুন করে বিনিয়োগ করাই আজকে দুঃস্বপ্নের মতো। গ্যাস, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এমনকি ‘কখন কী হয়’ ধরনের আতঙ্কিত পরিবেশ দেশি বিনিয়োগকেই চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত শেয়ারবাজারে নিয়মিত হারে দরপতন।

এ গুমোটবাঁধা অস্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থায় কখন কী হয়— এ আশঙ্কায় মানুষ যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তখন বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিতান্তই হাস্যকর। দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা; দ্বিতীয়ত— সংসদ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের নিজ নিজ আঙ্গিকে পূর্ণ স্বাধীনতা এবং কেউ কাউকে হস্তক্ষেপ না করার স্বচ্ছ ও বাস্তব পরিবেশ তৈরি করা। বিনিয়োগ দেশি হোক বা বিদেশি হোক, তার আস্থা অর্জনের জন্য উপযোগী অবকাঠামো তৈরি করা, নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে সৎ, দক্ষ মানবসম্পদ প্রস্তুত করা, যাতে বিনিয়োগের দায়িত্বভার আমাদের দেশের জনশক্তি নির্বিঘ্নে বহন করতে সক্ষম হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস নিরবচ্ছিন্ন ও নিয়মিত রাখা অবশ্যই আবশ্যক। তাছাড়া সরকারপ্রধানের কোনো আবেদনেই বিনিয়োগ হবে না— এটা ইতিমধ্যে নিষ্ঠুর বাস্তবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ডাক দেন কিন্তু সাড়া পান না।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক ড. মাহাথির মোহাম্মদের একটি সাক্ষাৎকার খুবই প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রত্যয় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেছেন— ‘বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়ন কম’। বাংলাদেশের আজকের অবস্থান সম্পর্কে বেদনাহত চিত্তে তিনি মন্তব্য করেন, ‘শাসনতান্ত্রিকভাবে গণতন্ত্রের স্বীকৃতি থাকলেও গণতন্ত্র এখানে কার্যকর হয়নি, স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আসেনি। আধুনিক শিল্পোন্নত মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখনো তার নিজের দল ক্ষমতাসীন কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভার বাইরে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দের দাবি করেন এবং সেটা পূরণও করা হয় এ যুক্তিতে যে, বিরাট শিল্পযজ্ঞের উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে হলে মালয়েশিয়াকে জনশক্তিতে প্রস্তুত হতে হবে। তার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রারম্ভে রাস্তাঘাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ, শান্তি-শৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকটি এতই মজবুত করেন যে, পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য শিল্পোদ্যোক্তারা অভিভূত হয়ে মালয়েশিয়াতে ট্রিলিয়নস এ- ট্রিলিয়নস ডলার বিনিয়োগ করেন। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণে তার সরকারের তীক্ষ দৃষ্টি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে মালয়েশিয়া শুধু প্রবেশই করেনি, মুক্ত অর্থনীতির দেশ আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এমনকি বাংলাদেশেও মজবুত বাজার গড়ে তোলে। তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ টুইন টাওয়ার কুয়ালালামপুরে তৈরি হয়। শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ যখন সুপ্রতিষ্ঠিত, পৃথিবীর সর্বোচ্চ অট্টালিকা যখন নির্মিত, তখন এই স্বল্পভাষী সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক দৃষ্টির অধিকারী ঘোষণা দিলেন, ষড়ড়শ ঃড়ড়িত্ফং বধংঃ, অর্থাৎ— প্রাচ্যের দিকে ফিরে তাকাও। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। মালয়েশিয়ার খনিজ ও বনজ সম্পদ বিপুল কিন্তু সংযত ব্যবহারে আজও তা মালয়েশিয়ার একটি বিরাট রিজার্ভ।

একই সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দারিদ্র্যকবলিত মালয়েশিয়াকে শিল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করার কারণে তাকে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়নি কেন? তিনি অতি সহজ ও সরলভাবে এর উত্তরে বলেছেন, আমার কাছে এটি কোনো দিনই আরাধ্য বিষয় ছিল না। আমি মালয়েশিয়াকে এত নিবিড়ভাবে ভালোবাসি যে, মালয়েশিয়ার উন্নয়ন ও জনজীবনে সচ্ছলতা আনা ছিল আমার স্বপ্ন ও সাধনা। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। অনেক দিন হলো আমি প্রধানমন্ত্রী নই।

আজও আমি সাধারণভাবে চলাফেরা করি, শখের জিনিস কেনাকাটা করি নিজেই। মসজিদে— বিশেষ করে জুমায় সাধারণ মুসল্লির মতোই নামাজ পড়তে যাই। সেখানে অসংখ্য মানুষ অকুণ্ঠচিত্তে আমার সঙ্গে হাত মিলায়, বুক মিলায়, হৃদয়ের কাছের লোকের মতো আমার সঙ্গে মেলামেশা করে। তখন আমার হৃদয় আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত জীবনের প্রশান্তি নোবেল প্রাপ্তির চেয়েও অনেক বেশি সুখকর।

তার আরও একটি উক্তি আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘পাশ্চাত্য নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিম নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি এবং নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের পছন্দের লোকদের ক্ষমতায় রাখা, সারা মধ্যপ্রাচ্যের ওপর ইসরায়েলের প্রভাব বিস্তার করা। তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে তারা তালেবান, আল কায়েদা, আইএস সৃষ্টিতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে। আবার প্রয়োজনে জঙ্গিবাদকে রুখতে তারা যে কোনো কৌশল অবলম্বনে কুণ্ঠিত হয় না। মধ্যপ্রাচ্য আজ ক্ষতবিক্ষত এবং অন্তর্কলহে লিপ্ত; এ পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট বুশ এবং টনি ব্লেয়ারেরই সৃষ্টি। এ সম্পর্কে আমাদের নেতৃত্ব যত বেশি সজাগ, সচেতন ও সক্রিয় থাকবেন ততই আমাদের স্থিতিশীলতা বাড়বে।’ মাহাথির মোহাম্মদের সাক্ষাৎকারটির উপজীব্য হলো, আগে শক্তি সঞ্চয় কর, আত্মশক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হও— তারপর বিশ্বকে আপন অবস্থান জানান দাও।

মাহাথির মোহাম্মদের মতো খ্যাতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা বা বিশ্বজোড়া পরিচিতি আমার নেই। তবুও বাঙালি জাতীয় চেতনার বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতার সুদীর্ঘ পথপরিক্রমণে আমার সক্রিয় সম্পৃক্ততা আমাকে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে— শক্তি সঞ্চয়ের আগে যে কোনো ধরনের আস্ফাালন ও সশস্ত্র বিপ্লবের প্রসব-যন্ত্রণা স্বাধীনতা অর্জন তো করেই না, বরং বুমেরাং হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষের রক্তক্ষরণের পরও সাফল্যের সোনালি সৈকতে কখনই পৌঁছানো যায় না। শ্রীলঙ্কার এলটিটি, পাঞ্জাবের (খালিস্তান) স্বাধীনতা আন্দোলন বা সেভেন সিস্টারের স্বাধীনতা-প্রাপ্তির অদম্য প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের ’৭০-এর নির্বাচনের মতো গণম্যান্ডেট তাদের কারোর ছিল না। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস প্রথিতযশা, জগত্খ্যাত সংগঠক। এ অকুতোভয় সিংহ পুরুষটিও বার্মার দ্বারপ্রান্তে এসে ভারতীয়দের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তোমরা রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা এনে দেব।’

প্রবল তেজোদ্দীপ্ত এ অকুতোভয় যোদ্ধার নেতৃত্বের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কারণ, তার কাছে ভারতীয়দের কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছিল না। বিপ্লব ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রচণ্ড খরস্রোতের মুখে ’৭০-এর নির্বাচনটিতে অংশগ্রহণ ও অভূতপূর্ব বিজয় সাধনের অন্যতম কারিগর হিসেবে খ্যাতির চেয়ে প্রশান্তি আমার হৃদয়কে ভরপুর করে রাখে। কী পাইনি, তার হিসাব বা অঙ্ক কখনো আমাকে বিমর্ষ বা বিচলিত করে না।  বাংলাদেশের মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত আমার হৃদয় সর্বদাই আমাকে নিরবচ্ছিন্ন বিমুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে রাখে।

আমি বিশ্বাস করি, আদর্শে আপ্লুত হৃদয় নিয়ে কেউ যদি মানুষের জন্য কাজ করে তবে যুগ-যুগান্তরে তার অবস্থান মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনে সমাসীন থাকে।  এটি আমার কথা নয়, মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি ঐতিহাসিক উক্তি।

     লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর