শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা

পুলিশ ও সরকারের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ করছে

সারা দেশে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে বছরের পর বছর কেটে যাওয়া এবং চার্জশিটের দেখা না মেলা তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের ওপর ভুক্তভোগীদের আস্থা যেমন কেড়ে নিচ্ছে, তেমনি অপরাধীদের আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে মদদ জোগাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিবারই বলা হয় তদন্তে অগ্রগতি ঘটছে। মিঠে কথায় চিড়ে ভিজানোর এ প্রয়াস সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারছে না যুক্তিসঙ্গত কারণেই। পুলিশসহ তদন্তকারী সংস্থাগুলোর প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরাচ্ছে মামলা তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা। এর পেছনে কোনো অসত্ উদ্দেশ্য কাজ করছে কিনা সে প্রশ্নও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সুনাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, নন পুলিশিং কাজে পুলিশকে এতটাই ব্যস্ত রাখা হয় যে তাদের পক্ষে মামলা তদন্তের ফুরসত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারও আমাদের দেশে ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন অভিযোগও প্রায়শই করা হয়। স্বভাবতই বলা যায়, চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী মামলার তদন্তে সময়ক্ষেপণের ঘটনা শুধু তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনামের জন্যই বিব্রতকর নয়, ক্ষমতাসীনদের সুনামকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের চার বছর কেটে যাওয়ার পর চার্জশিটের দেখা না মেলা তদন্তকারী সংস্থা শুধু নয়, সরকারকেও অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনার মুখে ফেলেছে। চার বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এক ফ্ল্যাট বাড়িতে রাতে রহস্যজনকভাবে নিহত হন সাগর-রুনি দম্পতি। মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ড সারা দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের ধরা হবে। ৪৮ ঘণ্টা পর পুলিশ প্রধান বলেছিলেন, তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। চার বছর কেটে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, কত বছরে সেই ৪৮ ঘণ্টার অপেক্ষা শেষ হবে। প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির অশ্বডিম্বের দেখাই বা কবে মিলবে। শুধু সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নয়, আরও অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বছরের পর বছর কেটে গেলেও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ।  বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে কিনা সে বিষয়টিও জনমনে আলোচিত হচ্ছে। এ অকাম্য অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর