সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভালো জীবনযাপন নিয়ে কিছু কথা

আবুল কাসেম ফজলুল হক

ভালো জীবনযাপন নিয়ে কিছু কথা

এই দেশ, এই পৃথিবী, অনেক পুরনো হলেও প্রত্যেকের কাছেই তা নতুন। প্রত্যেকের জীবনও প্রত্যেকের কাছে নতুন। আমাদের কর্তব্য হলো, এই দেশে এই পৃথিবীতে আগে যারা জীবনযাপন করে গেছেন, তাদের জীবনধারা ও পরিবেশকে যতটা সম্ভব জানা। এতে আমরা আমাদের জীবনযাপনের উত্কৃষ্ট উপায় সম্পর্কে কার্যকর উপলব্ধি লাভ করব। অতীতে বিভিন্ন সময়ে কী করা যেত আর কী করা হয়েছে, কী হতে পারত, আর কী হয়েছে, তা যতটা পারা যায় জানা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।  মানুষের স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করাও খুব দরকার। সমাজে আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকটাই নির্ভর করে মানুষ সম্পর্কে আমাদের ধারণার ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর। মানব প্রকৃতি পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল।

উন্নত নতুন ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য আদর্শ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি অবলম্বন করতে হয়, আর অতীত সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকেও পুনর্গঠিত করতে হয়। মনকে প্রচলিত ধারণায় আচ্ছন্ন রেখে ভালো জীবনযাপন করা যায় না এবং উন্নত নতুন ভবিষ্যৎ সৃষ্টির দিকেও এগোনো যায় না। চারপাশে কখনো কখনো ভুল, মিথ্যা ও অন্যায়ের ছড়াছড়ি দেখা যায়। চারপাশকে যথেষ্ট ভালো অবস্থায় কোথাও কোথাও কদাচিৎ পাওয়া যায়। আজকের পৃথিবীতে আমরা সে রকম অবস্থা পাচ্ছি না। হীন-স্বার্থপরতা, জুলুম-জবরদস্তি, বিভেদ-বিভ্রান্তি, সামাজিক বিযুক্তি, ঘৃণা-বিদ্বেষ, হিংসা-প্রতিহিংসা, হত্যা-আত্মহত্যা, যুদ্ধ, গণহত্যা ও নিরাপত্তাহীনতা সবার জীবনকেই অস্বাভাবিক করে রেখেছে। অথচ জীবনকে অনেক ভালো, অনেক সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতিময় করা সম্ভব। ধর্মের নামে মিথ্যা ও অনাচার, গণতন্ত্রের নামে মিথ্যা ও অনাচার, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যা ও অনাচার বাংলাদেশে আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত ও বিকৃত করে রেখেছে। কার্যকর কোনো আদর্শ নেই, নীতি নেই, পরিকল্পনা নেই, কর্মসূচি নেই।

আদর্শ বাস্তব নয়, আদর্শ হলো কল্পিত বাস্তব। অস্তিমান বাস্তবে অবস্থান করে যে বাস্তবে আমরা উত্তীর্ণ হতে চাই, আদর্শ হলো সেই বাস্তব। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র— এগুলো বাস্তব নয়, আদর্শ। কল্পনা ও আদর্শ ছাড়া জীবন অর্থপূর্ণ হয় না। ভালো জীবন ও ভালো পরিবেশের জন্য সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রগতি এসবের গভীর উপলব্ধি ও অবলম্বন দরকার হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্মিলিত জীবনে এসবের উপলব্ধি না থাকলে শান্তি থাকে না, সংঘাত-সংঘর্ষ ও যুদ্ধবিগ্রহ বিরাজ করে। মানব জাতি এখন আদর্শহীন, কর্মনীতিহীন, সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে অগ্রসরমান। সমাজে, রাষ্ট্রে আর্থিক দিক দিয়ে সচ্ছল জীবনযাপনের সামর্থ্য অবশ্যই প্রত্যেকের অর্জন করা অপরিহার্য। এর জন্য যে প্রস্তুতি ও কাজ দরকার তা থেকে দূরে থাকা অন্যায়। সম্মানজনক কর্মসংস্থান লাগবেই। খাওয়া-পরা ঘর-সংসার লাগবেই। তার ব্যবস্থা ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত প্রয়াসে প্রত্যেককে করতে হবে। কেবল ব্যক্তিগতভাবে খুব কম কাজই করা যায়, ভালো জীবনযাত্রার জন্য সম্মিলিত ও সংগঠিত হতেই হয়।

অজস্র কারণে আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে ঋণী। সমাজ, সঙ্ঘ ও রাষ্ট্রকে যতই পীড়নমূলক মনে করা হোক— এসব ছাড়া চলা সম্ভব নয়। সেজন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে ভালো করে তোলার জন্যও প্রত্যেককেই ভাবতে হয় এবং কাজ করতে হয়। সামাজিক দায়িত্ব পালন না করা অন্যায়। ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য কাজ করতে হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা— আবিষ্কার উদ্ভাবন-সৃষ্টি, আর প্রগতির জন্য সামাজিক সংগ্রাম— এসব নিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-আন্দোলন, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ভাবধারা প্রচার, বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছি। এসবের মধ্যে ভালো-মন্দ দুই-ই ঘটেছে। অর্জনটাই বড়। স্বাধীন বাংলাদেশে গত ৪৪ বছর ধরে আমরা অসুস্থ, রুগ্ন, বিকারপ্রাপ্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছি। অবস্থাকে আমাদের উন্নত করতে হবে। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির পরিচালনা কায়েম করতে হবে। তার জন্য যা যা করা দরকার সবই করতে হবে।

কর্তব্য পালন না করলে আমরা উন্নতি করতে পারব না। উন্নতি আপনিতেই হয় না, সাধন করতে হয়। আদর্শ কর্মনীতি, কর্মসূচি ও কাজ প্রকৃষ্ট উন্নতির ও ভালো জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। এসবকে বিবেচনায় না নিয়ে অর্থবিত্ত ও ক্ষমতা প্রতিপত্তি অর্জন করে সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর জীবনযাপন করা যায় না। সুস্থ, স্বাভাবিক সুন্দর জীবনযাত্রার জন্য একসঙ্গে অনেক কিছু লাগে, অনেক কিছু করতে হয়।

সমাজে মিথ্যার প্রবণতা প্রবল হলেও লোকে সত্য অবলম্বন করেই চলতে চায়। মনে হয়, জনসাধারণের চেতনা-প্রবাহে সত্যের প্রতি আকর্ষণ ফল্গুধারার মতো বহমান আছে। সত্য কথাটির নানা অর্থ আছে, সত্য নিয়ে নানা বিতর্ক ও বিভ্রান্তিও আছে। কোন অর্থে সত্য কথাটিকে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে আমাদের গ্রহণ করা উচিত? প্রশ্নটির উত্তর সহজ নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মনোগ্রামে (১৯২১) লেখা ছিল,Truth shall prevail. বাংলায় বলা হতো, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। সত্য বলে বুঝানো হতো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্ট পরম ন্যায়, পরম কল্যাণ ও পরম সুন্দরের সমন্বিত সত্তা। ইংরেজিতে Truth-এরও এ রকম অর্থই করা হতো। ধর্মের জয় অবশ্যম্ভাবী। এ কথাটিও চালু ছিল। ধর্ম বলেও বোঝানো হতো সর্বজনীন ন্যায়, পরম কল্যাণ ও পরম সুন্দরের সমন্বয়ে সৃষ্ট পরম সত্তা। এক্ষেত্রে ধর্ম ও অধর্ম ছিল আন্তরিকবোধের ব্যাপার, শাস্ত্রীয় কিংবা পার্বণিক ব্যাপার নয়। সত্য ও ধর্ম কথা দুটো ছিল সমার্থক। মানুষের নৈতিক চেতনাকে কার্যকর ও অপরাজেয় রাখার জন্য সত্য ও ধর্ম কথা দুটোতে সমাজ চূড়ান্ত গুরুত্ব দিত। ভারতের জনগণের নেতা গান্ধী তখন প্রচার করছিলেন সত্যাগ্রহ এবং সেই সঙ্গে অহিংসা, সর্বোদয় ও সহযোগ (অসত্যানুসারীদের সঙ্গে)। সত্যাগ্রহের সত্যও সর্বজনীন পরম ন্যায়, পরম কল্যাণ ও পরম সুন্দরের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত পরম সত্তা। সত্যকে গান্ধী ঈশ্বরও বলেছেন। সত্য, ধর্ম, ঈশ্বর, গান্ধীর কাছে ছিল এক অভিন্ন। গান্ধী তার জীবনব্যাপী কর্মধারাকে বলেছেন my experiment with truth. গান্ধীর চিন্তা ও কর্মে আমরা সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতিও পাই। সত্য নির্ণয়ের জন্য দরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। আর গণতন্ত্রের জন্য দরকার সর্বোদয় অর্থাৎ সবারই উত্থান ও উন্নতি।

গান্ধী মনে করতেন, মানুষ বুদ্ধিমান-বিবেকবান চিন্তাশীল কর্মঠ প্রাণী। তিনি আরও মনে করতেন, জেনারেশনের পর জেনারেশনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে মানুষ ক্রমেই পাশবিক প্রবণতা পরিহার করে মানবীয় গুণাবলিতে ঋদ্ধ, অহিংস ও সর্বজনীন কল্যাণে আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং সর্বজনীন কল্যাণের মধ্যেই সে নিজের কল্যাণও দেখবে। গান্ধীর ধারণা হয়েছিল যে, ক্রমে মানুষ হয়ে উঠবে নিরন্ত প্রগতিশীল। তার বিশ্বাস ছিল সত্য, কিংবা ধর্ম, কিংবা ঈশ্বরকে অবলম্বন করে এগোতে এগোতে মানুষ পৃথিবীকে স্বর্গে পরিণত করবে। জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে মানুষ সত্যের পথ পরিহার করে চলবে— এটা ভাবার সামর্থ্য গান্ধীর ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার মনোগ্রাম থেকে Truth shall prevail বাতিল করে যখন একের পর এক ভিন্ন কথা গ্রহণ করতে লাগল তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতিও বদলে যেতে লাগল। বাইরে জনজীবনেও ঘটে চলল পরিবর্তন। সত্যাগ্রহ, সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়সন্ধিৎসা, ন্যায়নিষ্ঠা— কিছুই রইল না। দুনিয়া পরিবর্তনশীল। যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও ন্যাটোর পরিচালনায় বিশ্বায়ন নিয়ে মানবজাতি এখন কি সুপথে চলছে?

 

 

সত্য কথাটির নানা অর্থ প্রচলিত আছে। সে বিষয়ে আমি যাচ্ছি না। আমি লক্ষ করছি, postmodernist-রা truthকে কায়েমি শক্তির প্রয়োজনে কায়েমি শক্তির প্রচারের দ্বারা সৃষ্ট Social product বলে থাকেন। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কায়েমি শক্তি নিজেদের কর্তৃত্বের প্রয়োজনে কিছু ধারণা ক্রমাগত প্রচার করে জনমনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। উত্তরাধুনিকতাবাদীরা সেগুলোর সমষ্টিকে বলেন truth. Truth বা সত্য কথাটিকে এ অর্থে ব্যবহার করা একেবারেই সমীচীন নয়। এতে মিথ্যাকে সত্য বলা হয়। এটাকে বলা যায় কায়েমি স্বার্থবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট প্রতারণামূলক ভাবাবর্ত। আমরা যদি সত্যকে সর্বজনীন পরম ন্যায়, পরম কল্যাণ ও পরম সুন্দরের সমন্বয়ে সৃষ্ট পরম সত্তা রূপে হৃদয়ঙ্গম করি এবং সত্যনিষ্ঠ হই— গান্ধীর ভাষায় সত্যাগ্রহী, কেবল তাহলেই সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী হবে। সত্যকে অবলম্বন ও জয়ী করার চেষ্টা সমাজে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় দরকার। এর জন্য জাতীয় জীবনে দরকার নৈতিক অনুশীলন। সত্যকে গান্ধীর মতো করে নয়, আমাদের প্রয়োজনে আমাদের মতো করে আমাদেরই সৃষ্টি করে নিতে হবে। তা করা না গেলে তো জুলুম-জবরদস্তি, শোষণ-পীড়ন, বঞ্চনা ও যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যেই থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠাকালীন মটো ত্যাগ করেছে সত্যকে ত্যাগ করেছিল বলেই। সত্যকে পরম লক্ষ্য জ্ঞান করে সে চলতে পারেনি, চলতে চাইছে না। দেশ-দুনিয়া বদলে গেছে। মানুষ যদি সমাজের ওপর বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারত— ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।’ ‘Truth shall prevail’ তাহলে সবাই-ই শান্তিপূর্ণ সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে পারত। তাতে সে সমাজের প্রতি, জাতির প্রতি, গোটা মানব জাতির প্রতি, সেই সঙ্গে তার নিজের প্রতি, আস্থা ও বিশ্বাস উপলব্ধি করত এবং তার প্রকাশ ঘটত ব্যক্তি জীবনে, সমাজে, রাষ্ট্রব্যবস্থায়। সত্য তখন হয়ে উঠত এক মানুষী শক্তি, মানুষের শক্তি, ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত শক্তি। ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী’— এই বোধ নিয়ে যদি মানুষ চলতে পারত তাহলে ঈশ্বর পরিণত হতো এক মানুষী শক্তিতে, মানুষের শক্তিতে, ব্যক্তির ও সমষ্টির অন্তর্গত শক্তিতে। মানুষ ভাবতে পারত আমাদের ঈশ্বর জনগণের অন্তর্গত এক শক্তি, জনগণের বাইরের কিছু নয়। ভালো জীবনযাপনের জন্য এ সত্য, এ সত্যে আস্থা ও বিশ্বাস একান্ত দরকার। এ সত্যের উপলব্ধি ছাড়া প্রবল ও দুর্বলের আচরণ স্বাভাবিক থাকে না— সমাজ হয়ে দাঁড়ায় জালেম ও মজলুমের সমাজ। সে অবস্থায় জুলুম-জবরদস্তি ও যুদ্ধবিগ্রহ হয় সমাজের গতি নির্ধারক। এ শক্তি অর্জন করতে হলে ব্যক্তি, জাতি ও রাষ্ট্রকে নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত হতে হবে। বাস্তবে ও ইতিহাসে দেখা যায়, অল্পসংখ্যক লোক শক্তিশালী আর অধিকাংশ লোক দুর্বল। যারা দুর্বল তারা শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত প্রতারিত। দুর্বলেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী হতে পারে এবং শোষণ, পীড়ন, প্রতারণা থেকে মুক্ত হতে পারে। দুর্বলদের ঐক্যের জন্য ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী’ এ বোধ অত্যন্ত সহায়ক। এ বোধ তাদের পরম শক্তির অধিকারী করতে পারে। এ বোধ তখনই লাভ করা যাবে যখন রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজের স্তরে স্তরে মূল্যবোধ ও নৈতিক চেতনা প্রবল হবে। মূল্যবোধ, নৈতিক চেতনা, নীতি ও কর্মসূচিই দুর্বলদের ঐক্যের বন্ধন সূত্র। নৈতিক চেতনা, নীতি ও কর্মসূচি ছাড়া দুর্বলদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, নেতৃত্ব সৃষ্টি করার এবং শোষণ-পীড়ন প্রতারণা থেকে মুক্তিলাভের আর কোনো উপায় নেই। যারা প্রবল, যারা জালিম, যারা শোষক-পীড়ক-প্রতারক তাদের নীতি ও কর্মসূচি ভিন্ন প্রকৃতির। বাংলাদেশে এখন অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই মূল্যবোধ  ও নৈতিক চেতনা অত্যন্ত দুর্বল। তাদের কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই, রাজনৈতিক দল নেই। ফলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির মধ্যেও সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অনেক বেড়েছে এবং বেড়ে চলছে। গোটা মানব জাতির অবস্থাই আজ এ রকম। এ অবস্থা বদলাতে হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যায় দমাতে হবে এবং ন্যায়ের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর জন্য সত্যের উপলব্ধি ও অবলম্বন একান্ত দরকার। কেবল ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সম্মিলিত জীবনে। দরকার জনগণের সঙ্ঘশক্তি। বর্তমান বাস্তবতায় যারা নৈতিক প্রশ্নে গুরুত্ব দেন তারা ঐক্যবদ্ধ নন, তারা নিরীহ, গোবেচারা ভালো মানুষ। তাদের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো চিন্তা নেই। তাদের কোনো দল নেই নেতৃত্ব নেই।  জনগণ নিস্পৃহ। তাদের মধ্যে ঐক্য দরকার, সঙ্ঘশক্তি দরকার। আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মসূচি দরকার, দরকার জনসম্পৃক্তি ও জনগণের সংগ্রামী সক্রিয়তা।  নিরীহ, গোবেচারা ভালো মানুষদের দিয়ে কিছু হয় না।

লেখক : রাষ্ট্রচিন্তক, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর