বাংলাদেশ মূলত সমতল ভূমি— সারা দেশে পাহাড় টিলার সংখ্যা সত্যিকার অর্থেই কম। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় টিলাগুলো দেশের পরিবেশকে বৈচিত্র্যময় করেছে। কিন্তু একশ্রেণির মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড এগুলোর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে বিবেচিত সিলেটের পাহাড় টিলা প্রতিদিনই কমছে পাহাড়খেকোদের অপতত্পরতায়। ফলে সিলেটের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পাহাড় কাটা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তা দেখার কেউ নেই। টিলা কেটে প্রতিদিনই বিক্রি করা হচ্ছে মাটি এবং সমান্তরাল হয়ে যাওয়া স্থানে প্লট করে তা আবাসনের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ অবৈধ ব্যবসায় কোটিপতি বনেছে বিপুলসংখ্যক লোক। তারা তাদের অর্জিত অর্থের একাংশ ব্যয় করছে প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের পেছনে। ফলে একের পর এক টিলা কেটে সমান করা হলেও আইন তা প্রতিরোধে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। সবুজ বনবনানী, চা বাগান শোভিত সিলেটের পাহাড় টিলাগুলো বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে প্রশাসনের দেখেও না দেখার অবিমৃষ্যকারিতায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে সিলেটের যে পরিচিতি রয়েছে তা ব্যাহত হবে। পর্যটন আকর্ষণের ক্ষমতা হারাবে এ জনপদ। গত পাঁচ বছরে পরিবেশ অধিদফতর সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পাহাড় টিলা কাটার অভিযোগে ৯২টি মামলা এবং ৭টি অভিযান পরিচালনা করে ২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা আদায় করলেও এ তত্পরতাকে আইওয়াশ বলে অভিহিত করলেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ছাড়া পাহাড় টিলা কাটার দায়ে তারা দৃশ্যত নীরব। নদী থেকে পাথর উঠানোর ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে একই ধরনের নীরবতা। সিলেটের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষায় পাহাড় টিলা কাটা এবং মেশিন দিয়ে পাথর উঠানো বন্ধ করতে হবে। এসব ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারীরা দায়বোধের পরিচয় দেবেন এমনটিই কাঙ্ক্ষিত।