বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইজারার নামে লুটপাট

এ সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে

হাটবাজার, ঘাট, বালু ও জলমহালের ইজারা নিয়ে হরিলুট যেন দেশের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের দাপটওয়ালাদের দ্বারা ইজারা নিয়ন্ত্রিত হয়। টেন্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকে তাদের একচ্ছত্র দাপট। বাইরের কারও পক্ষে ইজারার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। টেন্ডারের আগেই সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারণ হয় কাকে দেওয়া হবে ইজারার কাজ। ফলে এসব ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরই সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে। ইজারার ওপর ক্ষমতাসীন দলের মতলববাজ নেতা-কর্মীদের অশুভ নিয়ন্ত্রণ থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইজারা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আইনি বাধা থাকায় যেসব হাটবাজার, ঘাট, বালু ও জলমহালের ইজারা দেওয়া সম্ভব হয় না সেগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সুবিধাভোগী চক্রই ভোগ করার সুযোগ পায়। ইজারার জন্য জেলায় জেলায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন এমনকি মূল দলেও চলে র‌্যাট রেস। কোথাও কোথাও ইজারার দ্বন্দ্বে ঘটছে খুনখারাবির ঘটনা। সরকারি দলের প্রভাবশালী লোকজন বালুমহালগুলো ইজারা নেওয়ায় প্রতিটি বালুমহালে যথেচ্ছভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনা ঘটছে। হাটবাজার ও ব্রিজে যে পরিমাণ টোল আদায় হচ্ছে তার একটি ক্ষুদ্র অংশ জমা পড়ছে সরকারি কোষাগারে। ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয় এমন সব অপ্রচলিত পত্রিকায় যেগুলোর কপি পত্রিকা অফিসের বাইরে পাওয়া দায় হয়ে দাঁড়ায়। হাটবাজার, ঘাট, বালু ও জলমহালের ইজারার অর্থ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয় এবং এ অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগানো হয়। কিন্তু ইজারার টাকা হরিলুট হওয়ায় এ খাতে আয় বাড়ছে না। এ খাতটি সরকারি নেতা-কর্মীদের পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহূত হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পে ইজারা থেকে প্রাপ্ত হিস্যার পরিমাণ ক্রমেই কমে আসছে। সরকারি খাতের রাজস্ব বাড়াতে ইজারা প্রক্রিয়ার ওপর ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ হওয়া দরকার।  প্রতিটি ইজারা যাতে প্রকাশ্য টেন্ডারের মাধ্যমে বণ্টন করা হয় সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। ইজারার শর্ত যাতে যথাযথভাবে মান্য করা হয় সে ব্যাপারে থাকতে হবে সরকারের নজরদারি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর