বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

প্রতারকদের সম্পর্কে সাবধান হতে হবে

রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য কিছুতেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সুসংবদ্ধ এ চক্রের শিকার হচ্ছে বাস, লঞ্চ, ট্রেন যাত্রীরা। সরল সোজা যাত্রীকে টার্গেট করে। তারা পান, ডাব, শরবত, তরমুজ, শসাসহ বিভিন্ন পানীয় ও খাদ্যের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে তাকে ঘায়েল করে। তারপর সংজ্ঞা হারানো যাত্রীর অর্থ ও মালামাল নিয়ে কেটে পড়ে। কখনো কখনো অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা প্রায়ই বেরিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির অসত্ সদস্য এদের সহায়— এমন অভিযোগও ওপেন সিক্রেট। ফলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে এ চক্রের সদস্যরা। বাস, লঞ্চ ও ট্রেন টার্মিনাল এবং অন্যান্য কর্মব্যস্ত এলাকায় হকার সেজে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে তারা। আর এসব খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে চেতনানাশক ওষুধ। এগুলো কিনে কেউ খেলেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। কখনো কখনো চেতনানাশকের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে ওই খাবার খেয়ে প্রতারিতরা মারাও যাচ্ছেন। যাত্রীবেশে পাশে বসে যানবাহনের যাত্রীকে কিছু খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়াও এদের পুরনো কৌশল। এসব চক্রের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রতিদিন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এক বা একাধিক যাত্রী। রাজধানীর বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি পয়েন্টে অজ্ঞান পার্টির চার শতাধিক সদস্য সক্রিয় বলে ধারণা করা হয়। তারা ফেরিওয়ালা সেজে সহজ-সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলার জন্য জুস, ডাবের পানি, খেজুর, ঝাল-মুড়ি, শরবত ইত্যাদি বিক্রি করছে। প্রতারিতরা এসব খেয়ে সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি জীবন হারানোর মতো ঝুঁকিতে পড়ছেন। গত ছয় বছরে ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ডে চার হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৬ জন। অন্যান্য হাসপাতালে চিকিত্সা নেওয়া রোগীর মোট সংখ্যা যে আরও বেশি তা সহজেই অনুমেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরার ব্যাপারে তাদের উদ্যোগের অভাব নেই। তবে পুলিশের একার পক্ষে তাদের সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সাধারণ যাত্রীদেরও সতর্ক হতে হবে। অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কোনো কিছু খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এটি নিশ্চিত হলে অজ্ঞান পার্টির কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে আসবে।  অপরাধ দমনে জনসচেতনতার যে বিকল্প নেই এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। এর পাশাপাশি অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা আইনের ফাঁক গলিয়ে যাতে ছাড়া না পায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর