পৃথিবীর সব ভাষাই আল্লাহর সৃষ্টি। ভাষার বৈচিত্র্য মহান আল্লাহর একটি কুদরত। মানুষ সৃষ্টি আর ভাষার ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। মানুষকে আল্লাহ স্বয়ং ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত আদম (আ.) হলেন প্রথম মানব। আল্লাহ তাকে সৃষ্টির পর সৃষ্টির সব কিছুর নাম শিক্ষা দেন। এ শিক্ষা প্রাপ্তির মাধ্যমে হজরত আদম (আ.) ভাষা সম্পর্কে অবহিত হন। সূরা ইব্রাহিমের ৪নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আমি রসুলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে স্পষ্টভাবে তাদের বুঝাতে পারে।’ ভাষার বৈচিত্র্য আল্লাহর কুদরত। আল্লাহকে যে কোনো ভাষায় ডাকা যায়। যে কোনো ভাষায় তাঁর রহমত কামনা করা যায়। বোখারি শরিফের হাদিসে বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সব ভাষা জানেন।’  পবিত্র কোরআনে আল্লাহর এই কুদরতের কথা উল্লেখ করে সূরা রুমের ২২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তার আরও একটি নিদর্শন হলো আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাব প্রকাশের ভাষা ও বর্ণের সৌন্দর্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদের্শনাবলী রয়েছে।’

ভাষা প্রতিটি জাতির নিজস্ব সম্পদ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিটি জাতির জন্য উপহারবিশেষ। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের মাতৃভাষা ছিল আরবি। তার ওপর পবিত্র কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতৃভাষার প্রতি এটি ছিল মহান আল্লাহর সম্মান। আল্লাহর রসুল নিজেই বলেছেন, তিনি তিনটি কারণে আরবি ভাষাকে ভালোবাসেন। প্রথমত আল কোরআনের ভাষা আরবি, দ্বিতীয়ত জান্নাতের ভাষা আরবি, তৃতীয়ত তার মাতৃভাষা আরবি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু তার মাতৃভাষাকে ভালোবাসতেন সেহেতু মাতৃভাষাকে ভালোবাসা রসুল সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। মুসলমান হিসেবে আমাদেরও উচিত  মাতৃভাষাকে ভালোবাসা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। অন্যসব ভাষার মতো এই ভাষাও আল্লাহর দান। আল্লাহর রহমত। এই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। ১৯৫২  সালে যারা মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য লড়েছেন তারা আল্লাহ প্রদত্ত ভাষার হক প্রতিষ্ঠায় লড়েছেন। মুসলমানরা বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে দূর অতীতে সুলতানি আমলে।  ইসলাম চর্চায়ও এ ভাষার বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে।