শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা

বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ পরিণতির জন্য দায়ী

আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অপরাধীদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার বদলে নিজেরাই শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তাকে অশনি সংকেত হিসেবে অভিহিত করলেও অত্যুক্তি হবে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষের আস্থায় যে চির ধরিয়েছে তারই অনিবার্য পরিণতি হলো আইন হাতে তুলে নেওয়ার অকাম্য প্রবণতা। বিশেষত চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার বদলে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। অপরাধীদের চোখ তুলে নেওয়ার মতো বর্বরতাও কখনো কখনো প্রদর্শিত হচ্ছে প্রত্যন্ত জনপদে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই চুরি ডাকাতির অন্তত ১০টি ঘটনায় আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর সারা দেশে শুধু গণপিটুনিতেই নিহত হয়েছে ১৪০ জন। এর মধ্যে রাজধানীতেই নিহতের সংখ্যা ২৯ জন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে বাস্তবে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে আইনের আশ্রয় লাভ, আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ, বিচার পাওয়ার অধিকার ও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ যখন দেখে অপরাধীর প্রত্যাশিত বিচার হচ্ছে না, তখন ক্ষোভ থেকে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। এ অকাম্য অবস্থার অবসানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। অপরাধীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক যে পরিচয়ই থাকুক না কেন, সব কিছুর ঊর্ধ্বে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে আইনের প্রতি এবং আইন প্রয়োগকারীদের প্রতি মানুষের আস্থা আসবে। রোধ হবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা। আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা সভ্য সমাজে একটি অকল্পনীয় বিষয়। শিক্ষাদীক্ষায় দেশ যখন এগুচ্ছে, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের উত্থানের প্রহর যখন গুনছে বাংলাদেশ, তখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দুর্ভাগ্যজনক। আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রুখতে হলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর