সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্বায়নের সঙ্গী হোক বাংলা

ইউনিভার্সাল ভাষায় রূপান্তরের উদ্যোগ নিন

রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল। বাঙালির সেই আত্মত্যাগ আজ বিশ্ব ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। এ আত্মত্যাগ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বিশ্ব সমাজকেও অনুপ্রাণিত করেছে। রক্তে লেখা ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি সারা দুনিয়ায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। রক্ত দিয়ে বাঙালিরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করলেও ভাষা আন্দোলনের ৬৪ বছর পর প্রশ্ন উঠছে বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার ব্যাপারে আমরা কতটুকু তত্পর। বিশ্বায়নে বাংলা ভাষা পিছিয়ে পড়ছে আমাদের দায়িত্বশীলতার অভাব আর মানসিক দৈন্যতার কারণে। বাংলা ভাষাকে বিশ্বের ১৫২টি ভাষার সঙ্গে ইউনিভার্সাল ভাষায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সময়ের চাহিদাকে মনে রেখে। এটি সম্ভব হলে ইউনিভার্সাল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিষয়বস্তুকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করা যেত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। ইন্টারনেটভিত্তিক এ প্রোগ্রামে প্রোগ্রামভুক্ত যে কোনো ভাষার টেক্সট স্বয়ংক্রিয়ভাবে রূপান্তর করা যায়। ইংরেজি, ফরাসি, চীনা, আরবি, হিন্দিসহ পৃথিবীর ১৫২টি ভাষা ইতিমধ্যে এ প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত হলেও বাংলা বিশ্বায়নের আওতার বাইরে রয়ে গেছে অর্থাভাবে। এ প্রোগ্রামে যুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট ভাষাগুলোর যে কোনো তথ্য-উপাত্ত বাংলাভাষীদের আওতায় চলে আসত। তেমন বাংলা ভাষার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করতে পারত সারা বিশ্বের মানুষ। ১৯৯৬ সালে এ প্রোগ্রাম উদ্ভাবন করেন টোকিওর ইউনাইটেড নেশন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘের আওতায় এ প্রোগ্রামটি প্রসারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গঠিত হয় ইউএনডিএল ফাউন্ডেশন। কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষাকে ইউএনডিএলে রূপান্তরে ফাউন্ডেশন অনুমোদন ও সহায়তা দেয়। বাংলা ভাষাকে ইউএনডিএলের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ কাজ শুরু করে। সে সময় সোসাইটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। এ কাজের জন্য সরকারের আর্থিক সহায়তা চেয়েও কোনো আশ্বাসই পায়নি প্রকল্পের উদ্যোক্তারা। পরিণতিতে এ মহতী  প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৫২টি ভাষা বিশ্বায়নের সঙ্গী হওয়ার গৌরব অর্জন করলেও বিশ্বের চতুর্থ ভাষা তার আওতার বাইরে থেকে যায়। আমরা আশা করব বাংলা ভাষাকে ইউনিভার্সাল ভাষায় পরিণত করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর