শিরোনাম
শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বই এবং কাঠের বিড়াল

সাইফুর রহমান

বই এবং কাঠের বিড়াল

একজন লেখকের প্রথম বই প্রকাশের আনন্দ কেমন? এর উত্তরে কোনো কোনো লেখক বলে থাকেন, প্রথম প্রথম প্রেমে পড়ার মতো কিংবা প্রথম সন্তানের জনক হওয়ার মতো অনুভূতি। তবে গড়পড়তা সবার অনুভূতি প্রায় কাছাকাছি হওয়ারই কথা। আমার প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি ছিল অনেকটা প্রথম পিতা হওয়ার আনন্দের মতো। আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় গত বছর একুশে বইমেলায়।  সেটা ছিল আমার কলাম সংকলন। নাম দিয়েছিলাম ‘জানা বিষয় অজানা কথা’। প্রকাশ করেছিলেন প্রকৃতি প্রকাশনের কবি সৈকত হাবিব। এবার এই বইমেলায় বের হলো আমার দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘শরত্চন্দ্রের শরৎ উপাখ্যান ও অন্যান্য গল্প’। এটি প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট গল্পকার পারভেজ হোসেন। যিনি ২০১৪ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা গল্পকারের পুরস্কারটি অধিকার করে নিয়েছেন, তার প্রকাশনা সংস্থা সংবেদ থেকে। এটি আমার একটি গল্প সংকলন। এতে রয়েছে ৭টি গল্প। বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শরৎ চন্দ্রের একটি চমকপ্রদ ঘটনাকে উপজীব্য করে প্রথম গল্পটি ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের পৌত্র শাহাজাদা শাহ সুজার একটি কাহিনীকে অবলম্বন করে লেখা হয়েছে শেষ গল্পটি। একটি অন্যরকম প্রতিশোধ, বীভৎস সৌরভ, বাবর আলীর দ্বিতীয় সত্তা ও অন্যান্য গল্পগুলো বিভিন্ন সময়ে কালি ও কলম ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী ও ঈদ সংখ্যাগুলোতে বিগত বছরগুলোতে ছাপা হয়েছে। যেসব পাঠক আমার লেখার সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন আমি পরিশ্রম করেই লেখার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে মুটে-মজুরের খাটুনিও আমার পরিশ্রমের কাছে নস্যি। কিন্তু আমার সব লেখা আদৌ পদবাচ্য হয় কিনা সেটি পাঠক মাত্রই বিবেচনা করবেন। আমি সাধারণত পাঠকদের কাছে আধা সেদ্ধ কিংবা স্বাদহীন খাবার পরিবেশন করতে চাই না। সাহিত্যের রাজ্যে মামলা-মোকদ্দমার কিংবা র্যাব-পুলিশ-হোমগার্ডদের দৌরাত্ম্য নেই। খাদ্যে ভেজাল ঢোকাও পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। খেলায় খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য খেলা থেকে সেই খেলোয়াড় বাতিল হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উেকাচ গ্রহণ করলে কোমরে দড়ি বেঁধে তাকে গারদে পোরা হয়। কিন্তু লেখকরা যখন সাহিত্যে ভেজাল দেন, খারাপ লেখেন কিংবা পাঠকদের ঠকান তার কোনো বিচার-আচার নেই। কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় না তাদের। বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন— এই পৃথিবীতে লেখক হওয়া সবচেয়ে সহজ, দুই কলম লিখলেই সে লেখক। এর চেয়ে পরিহাসের বিষয় আর কী হতে পারে। আমি লিখি কম। একটু গুছিয়ে লিখতে চাই বলেই বোধহয় বেশি লিখতে পারি না। তাছাড়া একটি কথা আছে এমন— অতিরিক্ত আড্ডা যেমন পড়ার জন্য ক্ষতি ঠিক তেমনই অতিরিক্ত বই পড়াও লেখার ক্ষেত্রে ক্ষতি। আমার পড়তে অনেক ভালো লাগে বলেই লেখা হয় খুব কম। বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্রের মতে, এই পৃথিবীতে তিন ধরনের লেখক আছেন। একদল লেখক আছেন যারা প্রজাপতির মতো গা বাঁচিয়ে ঘুরঘুর করে বেড়ান। লিখতে তাদের আদৌ ইচ্ছা করে না অথচ ভীষণ লোভ ফাঁকি মেরে বিশ্ব জয় করার। দ্বিতীয়ত. একদল লেখক আছেন যারা নিজেদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, প্রতিদিন এত শব্দ তাদের লিখতেই হবে। ফলে ঘেমে নেয়ে কারখানার আউটপুট দিতে গিয়ে অনেক সময় এদের কলম থেকে ছাইভস্ম বের হয়। বিমল মিত্র এখানে লেখার কনসিসটেনসির কথা বলেছেন, কখনো লেটার মার্ক, আবার কখনো গোল্লা পেলে পাঠক অনিবার্যভাবেই সেই লেখক সম্পর্কে ভুল বুঝতে পারে। লেখার স্ট্যান্ডার্ডের একটা ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। তৃতীয়ত. আর একদল লেখক আছেন যাদের জীবনে লেখা ছাড়া আর কিছুই নেই, শয়নে-স্বপনে-জাগরণে শুধু লেখা, লেখা আর লেখা। কিন্তু তার মানে তারা সবসময় বস্তা বস্তা শব্দের জন্ম দিয়ে যান তা কিন্তু নয়। একটি লেখার বক্তব্যকেই শরীরের মধ্যে নিয়ে সারাক্ষণ লালন-পালন করেন এই লেখকরা। তারপর জন্ম দেন মহিমান্বিত কিছু সাহিত্য কর্ম। নিজেকে যে কোন ছকে ফেলব বুঝতে পারছি না। সে যাই হোক, প্রথমদিকে যে কথা বলছিলাম, লেখকের প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের অনুভূতি কেমন হয়? এ প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। এখন একজন বিখ্যাত লেখকের পত্রিকায় প্রথম লেখা ছাপানোর গল্প বলছি। এই বিখ্যাত লেখক আর কেউ নন, দেড়-দুই লাখ কপি ছাপা হওয়া ‘কত অজানারে’ গ্রন্থের জনক কথাসাহিত্যিক শংকরের কথা। তিনি একদিন কলকাতার স্বনামধন্য একটি পত্রিকায় প্রবন্ধ জমা দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কখন এটি ছাপা হবে সেই প্রত্যাশায়। একদিন তিনি ট্রামে উঠেছেন। শরীরটা তার বেশ ক্লান্ত। সেকেন্ড ক্লাসে এক ভদ্রলোক সকালের বাসি বাংলা কাগজটা মন দিয়ে পড়ছেন। পয়সা বাঁচানোর জন্য অনেকেই এমন করে থাকেন। দুপুর দুটো থেকে অর্ধেক দামে কাগজ পাওয়া যায়। শংকর হঠাৎ লক্ষ্য করলেন প্রথম পাতায় ঘোষণা; আগামী রবিবারে প্রধান আকর্ষণ শংকরের রচনা ‘হ্যামিল্টনের হাওয়া’। তখন এক অবর্ণনীয় অনুভূতিতে তার সারা শরীরটি ভরে উঠল। তিনি প্রতিনিয়ত মাথা উঁচু করে পত্রিকাটির ওপর উঁকিঝুঁকি মারতে লাগলেন। যার কাগজ সেই ভদ্রলোকটি শংকরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী হলো মশাই? শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে তো?’ শংকরের কাছে মনে হলো স্কুল-কলেজের বাইরে এমন একটি স্বনামধন্য পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশের আনন্দ কি তা যে না অনুভব করেছে তাকে কীভাবে বোঝানো সম্ভব। দেখতে দেখতে শনিবার এসে গেল। শনিবারের রাত যেন আর শেষই হতে চায় না। ঘনঘন ঘুম ভেঙে যাচ্ছে শংকরের। তার এক ছোট বোন উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল, দাদা ঘুমোচ্ছিস না কেন? শংকরের পরিবারটি ছিল নেহাতই একটি গরিব পরিবার। মেঝেতে টানা বিছানা। শংকর যখন বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন তখনো ভালো করে অন্ধকার কাটেনি। তার ধারণা ছিল অন্ধকার থাকতেই কাগজওয়ালারা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। হালদারপাড়া লেনের মোড়ে কাগজওয়ালাকে না দেখে শংকর হাঁটতে আরম্ভ করলেন কালীবাবুুর বাজারের দিকে। ওখানে কাগজের হোলসেল মার্কেট বসে। শংকর ওখানেই দৈনিক কাগজটা কিনলেন। কাগজটা বগলে করে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার ধৈর্য হলো না। তিনি একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। খুললেন রবিবাসরীয়র দ্বিতীয় পাতাটা। নিজের নামটা ওই পাতায় জ্বলজ্বল করছে। সারা পাতাটাই যেন শংকর, শংকর নামটা নিয়ন সাইনের মতো জ্বলছে, নিভছে। এই লেখার প্রতিটি অক্ষর তো শংকরের কলম থেকে বেরিয়েছে; কিন্তু ছাপার অক্ষরে সেগুলো আকাশের তারার মতো ঝকঝক করছে। শংকরের কাছে সেগুলো একেবারে নতুন বলে মনে হচ্ছে। মা লেখাটা দেখলেন। আশীর্বাদ করলেন। বললেন, ‘তোর বাবাও একবার লিখেছিলেন’। ধন্য সে রমণী যার স্বামীর নাম এবং ছেলের নাম কাগজে ছাপা হয়েছে। তবে রবিবারের সংখ্যায় লেখেননি শংকরের বাবা, তিনি লিখেছিলেন শুক্রবারের পত্রিকায়।

এ তো গেল লেখক শংকরের কথা। বেশ কিছু দিন আগে সম্ভবত সমকালের কালের খেয়া সাহিত্য সাময়িকীতে আমি কথাসাহিত্যিক নাসরিন জাহানের একটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। তিনি তার সেই সাক্ষাৎকারটিতে বলেছিলেন, খুব অল্প বয়সেই তার একটি লেখা পত্রিকায় ছাপা হয়। বোধ করি তার দুই-একদিন পরেই বাসযোগে তিনি দূরে কোথাও ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। তখন তার অনুভূতিটি ছিল এমন— দুনিয়ার মানুষ তাকে আজ কেন দেখছে না যে, তার লেখা একটি প্রখ্যাত পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং তাকে এখন রীতিমতো একজন লেখক বলা যেতে পারে। যে কোনো সৃষ্টিশীল ব্যক্তির অনুভূতি এমনটাই সাধারণত হয়ে থাকে।

এবার লেখক-সাহিত্যিকদের প্রকাশিত প্রথম গল্প, উপন্যাস সম্পর্কে দু-চার কথা বলা যাক। বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য লেখকদের মধ্যে বোধকরি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ই, যিনি একটি ছোট গল্প লিখে সে সময়কার সাহিত্য অঙ্গন একেবারে মাত করে দিয়েছিলেন। তার লিখিত প্রথম গল্পটি ছিল ‘অতসী মামী’। শরত্চন্দ্রের প্রথম উপন্যাস ‘কাশিনাথ’ পাঠকপ্রিয়তা পেলেও ‘অতসী মামীর’ মতো জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এরপর অনেক লেখকেরই প্রথম উপন্যাসই পেয়েছিল পর্বতচুম্বী জনপ্রিয়তা। তার মধ্যে জরাসন্ধের (চারুচন্দ্র চক্রবর্তী) ‘লৌহকপাট’, শংকরের ‘কত অজানারে’ কিংবা বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, শংকরের ‘কত অজানারে’ এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় দেড়-দুই লাখ কপি। বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ভারতের বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কেরালার একটি অখ্যাত পত্রিকায় যখন এই উপন্যাসটি ধারাবাহিক ছাপা হতে শুরু করে তখন এর বিক্রি ছিল আট হাজার কপি। কিন্তু শুধু সাহেব বিবি গোলাম উপন্যাসটির অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তায় মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সেই পত্রিকাটির কাটতি গিয়ে দাঁড়াল ৮০ হাজার কপি। পশ্চিমবঙ্গে সাহেব বিবি গোলাম এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে যেখানে অতিথিরা এসে তাদের উপহারগুলো সাধারণত রাখে সেখানে নোটিস ঝোলানো থাকত— ‘আর সাহেব বিবি গোলাম লওয়া হইবে না’!

শুধু এদেশে কেন পাশ্চাত্য দেশগুলোতেও অনেক লেখকেরই প্রথম বই অসম্ভব রকমের জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেমন ইংরেজ লেখিকা জেন অস্টিনের ‘সেন্স অ্যান্ড সেন্সেবিলিটি’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। আবার চার্লস ডিকেন্সের প্রথম উপন্যাস ‘পিকউইক পেপারস’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে ধুন্ধুমার অবস্থা। রাতারাতি চার্লস ডিকেন্স খ্যাতির একেবারে শীর্ষে। এ মুহৃর্তে আমার আরেকজন ইংরেজ কবির কথা মনে পড়ছে। যিনি ঘুম থেকে জেগেই জানতে পেলেন যে, লন্ডন শহরে এই মুহৃর্তে তার চেয়ে বড় সেলিব্রেটি আর দ্বিতীয়টি কেউ নেই। আমি যার কথা বলছি তিনি হলেন রোমান্টিসিজমের প্রধানতম কবি লর্ড বায়রন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘চাইল্ড হ্যারল্ড’স পিলগ্রিমেজ’ প্রকাশিত হয় ১৮১২ সালে। এটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লর্ড বায়রন একেবারে রাতারাতি তারকা খ্যাতি পেয়ে যান। মুদির দোকানের মুদিয়াল মনোহারি দ্রব্যাদি বিক্রি করছে অথচ হাতে বায়রনের কাব্যগ্রন্থ চাইল্ড হ্যারল্ড’স পিলগ্রিমেজ। কোনো ইংরেজ নারী তার প্রাণপ্রিয় আত্মজকে স্তন্যপান করাচ্ছেন হাতে বায়রনের কাব্য চাইল্ড হ্যারল্ড। বন্ধু-বান্ধবীরা সবাই একত্রে খোশগল্পে মেতেছেন, তবুও হাতে বায়রনের সেই কাব্যগ্রন্থ। তবে অনেক সময় অনেক মেধাবী ও শক্তিমান লেখককেও প্রকাশক পেতে কষ্ট হয়। বাংলাদেশে যেমন বেশির ভাগ লেখকই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই ছাপেন পশ্চিমা দেশগুলোতে এটি ভাবাই যায় না। সেখানে প্রকাশক ছাড়া কেউই বই ছাপান না। ফরাসি লেখক জুলভার্ন মেধাবী লেখক হওয়া সত্ত্বেও তার প্রথম গ্রন্থ বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ (ঋরাব ডববশং রহ ইধষষড়হ) নিয়ে হত্যে দিতে লাগলেন প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু কেউ তার এই উদ্ভট কাহিনীটি ছাপাতে রাজি হলেন না। একে একে ১৫ জন প্রকাশক ফিরিয়ে দিলেন তার পাণ্ডুলিপি। ক্ষোভে হতাশায় একেবারে মুহ্যমান হয়ে পড়লেন লেখক জুলভার্ন। একদিন রাগে ক্ষোভে তার পাণ্ডুলিপিটি ছুড়ে ফেলে দিলেন জ্বলন্ত আগুনে। জুলভার্নের স্ত্রী দৌড়ে এসে কোনো মতে রক্ষা করলেন পাণ্ডুলিপিটি। সেই সঙ্গে জুলভার্নকে অনুরোধ করলেন শেষবারের মতো পাণ্ডুলিপিটি কোনো একটি প্রকাশকের কাছে পাঠাতে। অবশেষে স্ত্রীর কথাই সত্যি হলো। ষোড়শতম প্রকাশক বইটি ছাপতে রাজি হলেন। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো অবিশ্বাস্য রকমের কাটতি। বছরের বেস্ট সেলারের খ্যাতি পেল বইটি। জুলভার্নের সাহিত্য খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ফ্রান্সের বাইরেও। শুরু হলো অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ। এবার বহু প্রকাশক গদগদ হয়ে এগিয়ে এলেন তার বই ছাপতে। প্রকাশকরা সাধারণত কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। যে লেখকের বই বিক্রি বেশি তারা সাধারণত সেসব লেখকের বই-ই ছাপতে চান। মিত্র অ্যান্ড ঘোষ যখন জরাসন্ধের লৌহকপাট কিংবা নিউ এইজ প্রকাশনা শংকরের কত অজানারে ছাপলেন তখন কিছু তালেবর লেখক প্রকাশকদের বললেন, ‘কি সব আজে বাজে বই ছাপছেন। আপনাদের বদৌলতে কারাগারের কারারক্ষী (জরাসন্ধ) কিংবা ব্যারিস্টারের কেরানিদের (শংকর ছিলেন বাংলার শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার বারওয়েলের বাবু) আপনারা লেখক বানিয়ে দিচ্ছেন’। প্রতিউত্তরে নিউ এইজ প্রকাশনার প্রকাশক বলেছিলেন, “যার বই বিক্রি হবে তার বই-ই আমি ছাপব। সাহিত্য-টাহিত্য আমি বুঝি না, আমি চিনি পাঠককে। বিড়াল কাঠের হলেও আমার কোনো আপত্তি নেই, যদি সেই বিড়াল ইঁদুর ধরে।” আবার ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশকও কিছু আছেন, এমনই একজন প্রকাশক ছিলেন বিখ্যাত সিগনেট প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী দীলিপ কুমার রায় সংক্ষেপে সবাই তাকে ডি এল রায় বলত। তিনি বই পড়ে বুঝতেন কোন লেখকটি প্রতিভাবান। জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ে তিনি ঠিকই বুঝেছিলেন এই লেখক একদিন শ্রুতকীর্ত লেখক হিসেবে খ্যাতি ছড়াবে। তাই মুনাফার কথা বিবেচনা না করেই তার কবিতার বই ছাপিয়ে ছিলেন।  তবে আমাদের আশা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের ভালো ভালো প্রকাশনাগুলো আরও বেশি করে এগিয়ে আসবে যাতে করে গুণগতমানসম্পন্ন গ্রন্থ ও লেখক সৃষ্টি হয়।  আর এভাবেই আমাদের সাহিত্য অঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হবে ও এগিয়ে যাবে।

লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

ই-মেইল :  [email protected]

সর্বশেষ খবর