শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওয়ান-ইলেভেনের লব কুশ এবং ক্রিকেট

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

ওয়ান-ইলেভেনের লব কুশ এবং ক্রিকেট

টাঙ্গাইল-৪, কালিহাতী উপনির্বাচন নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আমার আপিলে আজ আলোচনা হবে। সে নিয়ে আমার ভাবনা নেই, আমার ভাবনা একই দিনে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারের রায় আছে। যে কারণে ভারত-বাংলাদেশ ফাইনালের মতো দেশবাসী মুখিয়ে আছে। ভাবনা আমার সেখানে।

এশিয়া কাপ টি-২০ বেশ কিছুদিন দেশের মানুষকে মাতিয়ে রেখেছিল। বেশ ভালো খেলা হয়েছে। সেদিন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২-২-২.২ মানে ২ রান, ২ উইকেট, ২ ওভার ২ বল। আমাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা এক বিরাট গৌরবের ব্যাপার। আবার পাকিস্তানের ১ রান, ১ উইকেট, ১ ওভার ১ বল। পাকিস্তান আর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের পরাজয় তাদের জন্য যেমন অপমানের, আমাদের কাছে তেমন মহাগৌরবের। কিন্তু এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, বিশ্বসেরা আমাদের গৌরব সাকিব আল হাসানকে যখন শাস্তি দিয়েছিল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমি তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিন্দা করেছিলাম। কিন্তু সেদিন সাকিব আল হাসানের আচরণে বড়ই ব্যথিত হয়েছি। কোনো জাত খেলোয়াড় অমন করতে পারে না। আউট হয়ে উইকেটের ওপর রাগ কোনো ভালো খেলোয়াড়ের মানায় না। সাকিব আল হাসান না হয়ে অন্য কেউ হলে কিছু মনে করার ছিল না। এ আচরণ ক্রিকেট দুনিয়ায় আমাদের ভীষণ অসম্মানিত করেছে। জানি না কেন সে অমন করেছে। মায়ের মতো প্রধানমন্ত্রী খেলোয়াড়দের সন্তানের মতো ভালোবাসেন— এটাওটা উপহার দেন। তাই কি অমন বেপরোয়া? শোনা যায় এর মধ্যেই ভাতিজা সাকিব আল হাসান নাকি ৩০০-৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। হেলিকপ্টারে এ সময়-ও সময় গ্রামের বাড়ি যায়। জাতীয় খেলা ফেলে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর কাছে আমেরিকায় যাওয়া— এসব তার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে কিনা বলতে পারব না। তেমনটা হলে ভবিষ্যতে বিড়ম্বনা আছে। ভালো গায়ক, নায়ক মানুষের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে মাথা থেকে নিচে ফেলতে বেশি সময় নেয় না। আফ্রিদি বাংলাদেশের সঙ্গে শূন্য রানে আউট হওয়ায় পাকিস্তান তার মৃত্যু কামনা করেছে। সেখানে তার নাম এখন শহীদের তালিকায়। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিততে না পারলে পাকিস্তান ফেরা তার জন্য মুশকিল হয়ে যেত। ক্রিকেটার সৌরভের কত নাম, হতাশ হয়ে ভক্তরা তার বাড়িতে একবার আগুন দিয়েছিল। তাই ভাতিজা, খেলাধুলায় মানুষের মন জয় করা যতটা কঠিন, সেটা দীর্ঘদিন রক্ষা করা আরও কঠিন। সময় থাকতে হাবভাব না বদলালে পরিণাম খারাপ। কত মানুষ শুধু দুই বেলা ভাতের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, জন্মের পর কত দিন চলে যায় সন্তানের মুখ দেখে না। আর বাবারা হেসেখেলে আল্লাহর দয়ায় শত কোটির মালিক। দেশের জন্য চিন্তা কর। মানুষের মন ভেঙো না। আল্লাহর শুকুর গুজার কর।

এশিয়া কাপ টি-২০-তে দাপটে বাংলাদেশ ফাইনালে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানকে হারিয়ে সারা দেশের ক্রিকেট অনুরাগীর প্রত্যাশা হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়ার পরপরই গভীর রাতে এক পাঠক ফোন করেছিলেন, আপনি তো ক্রিকেট নিয়ে লিখেছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফাইনালে তলে তলে তো আপস হবে না? ভারতের প্রশ্নে আমাদের কী মারাত্মক আস্থার অভাব। এটা জাতির জন্য ভয়ঙ্কর অশনিসংকেত। আমি অনেক সময় আমাদের ক্রিকেট টিম নিয়ে হতাশ হয়েছি। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে টসে হেরেও বাংলাদেশ যে অসাধারণ খেলা খেলেছে তাতে অভিভূত না হয়ে পারিনি। ভারতের সঙ্গে প্রথম খেলায় বাংলাদেশের পরাজয় নিয়ে আমার ক্ষোভ ছিল, কিন্তু ফাইনালে পরাজয়ে বিন্দুমাত্র ক্ষোভ বা হতাশা নেই। বরং খুশিই হয়েছি ১৫ ওভারে মোটামুটি ভারসাম্যময় ১২০ রান করায়। ভারতের ক্রিকেট দল অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী। আমাদের দল যেমন খেলে হেরেছে, তারাও এবার খেলে জিতেছে। আমার মনে হয়েছে এতে কারও পরাজয় হয়নি বরং ক্রিকেটের জয় হয়েছে, দর্শকরা ভরপুর আনন্দ নিয়ে খেলা দেখেছে। আমি আশায় বুক বেঁধে থাকলাম, একদিন বিশ্ব ক্রিকেটে আমরা প্রথম স্থান করব— সে টি-২০, ওয়ানডে আর টেস্ট খেলাতেই হোক। ভাবীকালে সারা বিশ্ব গর্বভরে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের নাম নেবে।

বহুদিন পর জাতীয় জাদুঘরে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গিয়েছিলাম ‘আমরা সূর্যমুখী’র দাওয়াতে। ব্যাঙের ছাতার মতো বহু প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলে তখন আমরা সূর্যমুখী তাকে নিয়ে এটাওটা করত। একসময় বেশ ভালো একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। একের পর এক অনেকবার দাওয়াত পেয়ে সেদিন গিয়েছিলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত আইনবিদ বাছেত মজুমদার। অনুষ্ঠানটি ছিল স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিন। আমি যখন যাই তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বক্তৃতা করছিলেন। আমি যাওয়ায় তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন তা তার বক্তৃতায় ফুটে উঠেছিল। জনাব ওবায়দুল কাদের চমৎকার বক্তব্য রেখেছেন। তার বক্তব্যের প্রধান প্রতিপাদ্যই ছিল ওয়ান-ইলেভেনের লব কুশ। গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনীতির স্বার্থে ওয়ান-ইলেভেনের লব কুশদের কেন বিচার হলো না, তাদের বিচার হওয়া উচিত ছিল। সত্যিকার অর্থেই কেন যে লব কুশদের বিচার হলো না, মাথায় আসে না। সময়টা গেছে বড় অসময়, বড় অন্ধকার। কোথাও কোনো ঝিঁঝিঁ পোকার আলোও দেখা যায়নি। অথচ কারও কোনো বিচার হয়নি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কারাগারে থাকলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকলেন, প্রবীণ নেতারা কী নির্যাতনই না সহ্য করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের সঙ্গে যখন কথা হতো অমন হৃদয়বান একজন মানুষ যিনি ওয়ান-ইলেভেনের নির্যাতনের কথা বলতে গেলে চোখে পানি রাখতে পারতেন না। জনাব শেখ সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম কী নির্যাতনই না সহ্য করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলতে গেলে মরেই গিয়েছিলেন। আজ অনেকেই সুস্বাস্থ্যে থাকলেও আমার ধারণা ওয়ান-ইলেভেনের নির্যাতন-অপমান আমাদের অনেক জাতীয় নেতাকে অসময়ে দুনিয়া থেকে নিয়ে গেছে। তার মধ্যে আবদুল জলিল যে প্রধান এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি। কী দাপটই না দেখিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার বারী, ব্রিগেডিয়ার আমিন। লোকের মুখ বন্ধ করা যায় না। কতজন বলছেন মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ওয়ান-ইলেভেনের লব কুশদের মধ্যে বেশ বড়সড় একজন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে চার না পাঁচবার সময় বৃদ্ধি পেয়েছেন। ভদ্রলোক খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা। সে হিসেবে তারেকের আত্মীয়। তারেকের প্রতি নির্মম অত্যাচার করাই নাকি তার বার বার সময় বৃদ্ধি এবং চাকরি শেষে দেশে ফিরে টাকার স্তূপে বসে ফাইভ স্টার হোটেল পরিচালনা সে তো এক আবরণ।

একসময় চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে ওয়ান-ইলেভেনের আবির্ভাব হয়। অশান্ত জনতা প্রথম প্রথম ওয়ান-ইলেভেনকে অনেকটা স্বাগত জানায়। যেমন জানিয়েছিল ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল লকে। ৭ অক্টোবর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা দেশে মার্শাল ল জারি করেছিলেন। ২৭ অক্টোবর সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে ঘাড় ধরে বিলেতের পথে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে পাকিস্তানের সর্বেসর্বা হয়ে বসেছিলেন। ১০ বছর পাকিস্তানের জনগণের বুকে জগদ্দল পাথর হয়ে বসে ছিলেন। ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিনরাও তেমনটাই ভাবছিলেন। নির্বাচন করবেন না, কিন্তু মইন উদ্দিন প্রেসিডেন্ট হবেন। তিন-চার বার আমার বাবর রোডের ভাঙা বাড়িতে দল বেঁধে জেনারেলরা এসেছিলেন। তার মধ্যে ভদ্রলোকের সন্তানরাও দু-চার জন ছিলেন। তাদের এক কথা মইন উদ্দিনকে কী করে রাষ্ট্রের প্রধান বানানো যায়। বলেছিলাম, আমাদের সঙ্গে আলাপ করে কী হবে? ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে বলুন, তিনি মইন উদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ দিয়ে সরে গেলেই হলো। না, তিনি জনসমর্থিত রাষ্ট্রপতি হবেন।

বলেছিলাম, সেও সোজা। সংসদ নির্বাচন করতে হবে। চুরি-চামারি যা করেই হোক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই হলো। যদি নির্বাচনে যেতে না চান পুরান সংসদ দিয়ে প্রস্তাব পাস করিয়ে নিলেও হবে। প্রয়োজনে ভেঙে দেওয়া সংসদ আবার জীবিত করা যেতে পারে— এসব বিধান সংবিধানেই আছে। দু-তিন বার আলাপ-আলোচনায় জেনারেলদের আমাদের কথা পছন্দ হয়নি। একদিন দুপুরে কোথায় যেন গিয়েছিলাম। হঠাৎ জেনারেল মতিনের ফোন, মুক্তিযোদ্ধাদের ইফতারির দাওয়াত সেনাকুঞ্জে আপনাকে আসতে হবে। তারা যে ফাঁদ পেতেছিলেন লম্বাচওড়া মানুষ, খুব একটা বুঝতে পারিনি। সেনাকুঞ্জে জেনারেল মতিনের পাশে বসতে দিয়েছিলেন। একটু পর সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আহমেদ এসে বসেছিলেন। মানে একপাশে জেনারেল মতিন, অন্যপাশে জেনারেল মইন উদ্দিন আহমেদ, আমার পিষ্ট হওয়ার অবস্থা। বিনীতভাবে বেশ কিছু কথাবার্তা বললেন। তারপর ইফতার করলাম। ইফতার শেষে দেখলাম সেনাপ্রধানের পাশে আমার জায়নামাজ পাতা হয়েছে। প্রয়োজন হলে ক্ষমতাবানরা কী যে করে, ওসব তারই নমুনা। নামাজ শেষে আবার কিছু কথাবার্তা হলো। সেনাপ্রধান আবার আলাদাভাবে কথা বলার উৎসাহ দেখালেন। বললাম, কোনো অফিসে যাব না। ধরে নিয়ে যেতে পারেন। বললেন, না অফিসে যেতে হবে না। ক্যান্টনমেন্টের কোনো বেসামরিক ব্যক্তির বাড়িতে আলোচনা হবে। এর চার-পাঁচ দিন পর খুব যত্ন করে নিয়ে গেল। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা আলাপ হলো। তত দিনে কিংস পার্টি গঠন হয়ে গেছে। সেখানে আমার দলের সাধারণ সম্পাদক ভাটি বাংলার গৌরব ফজলুর রহমানকে গিলে ফেলেছে। এ জন্য ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর প্রতি বেশ বিরক্ত ছিলাম। সিরাজুল আলম খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, কে এম ওবায়দুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক— এরা ছিলেন একসময় বাংলাদেশের যুব আন্দোলনের পথিকৃৎ। তখনো তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কদ্দুস মাখন পাদপ্রদীপের নিচে আসেননি। সে হিসেবে ফেরদৌস আহমদ কোরেশী আমার কাছে খুবই সম্মানী ছিলেন। আমার আবার মারাত্মক দোষ, পক্ষে থাকলে ভালো, বিপক্ষে গেলেই ভালোকে ভালো না বলে খারাপ বলতে হবে অমনটা বিবেক সায় দেয় না। তাই ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর দক্ষতা-যোগ্যতা, কর্তৃত্ব-নেতৃত্বকে আমি বেশ সম্মানের চোখে দেখতাম। কিন্তু সেটা ওয়ান-ইলেভেনের মধ্য দিয়ে অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। পাঁচ-সাত বার আলাপ-আলোচনা করেও যখন দেখলেন খুব একটা কাজ হলো না।

বিশেষ করে ইসলামী নেতা মিছবাহুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিলেতে চলে যান। ভদ্রলোক আগাগোড়াই জামায়াতবিরোধী কথাবার্তা বলেন। ওয়ান-ইলেভেনের এক চরম সময় মিছবাহুর রহমান তার দিলখুশার অফিসে আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। বার বার অনুরোধ করায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। বেশ কয়েকজন সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং অনেক ইসলামী নেতা। কদিন থেকেই মনে প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া প্রায় চার-পাঁচ মাস কারাবন্দী। তাই বলেছিলাম, আমি একজন আইনবিদের ছেলে। বাবার কোলে বসে আইনের যেটুকু দেখেছি বা শুনেছি তাতে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার নামে এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে তাতে তাদের কারাগারে রাখার কোনো অধিকার নেই। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার গোলাম আযম, নিজামীরা সানন্দে বাইরে ঘোরাফেরা করবে আর স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া জেলে থাকবেন— এটা হতে পারে না। দুজনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুজনই মহিলা, ষাটোর্ধ্ব, তাই অনতিবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়া হোক। বক্তব্যটা নাকি সেদিন টক অব দ্য ডে বিবেচিত হয়েছিল। তখন চ্যানেল ওয়ান ছিল। সেখানে গভীর রাতে তাদের টক অব দ্য ডে-তে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানেও বলেছিলাম, অনতিবিলম্বে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হোক। তাদের মুক্তি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। পরদিন ব্রিগেডিয়ার বারী, ব্রিগেডিয়ার আমিন বাবর রোডের বাড়ি এসে হুমকি দিয়েছিলেন, আপনার জেলের ভয় নেই? মরার ভয়? বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, না। আমি তো সংসদে বলেছি, রাজনীতি করি। আমার কাছে সংসদ, বাড়িঘর আর জেলখানা একই সমান। আর মরার ভয়? একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি হায়াত-মউতের মালিক দয়াময় আল্লাহ। তিনি যতক্ষণ দুনিয়ায় রাখবেন ততক্ষণ থাকব। ওর চার-পাঁচ দিন পর দেখা গেল হত্যার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের ভাঙা পুলগুলো ঠিকঠাক করতে ’৭২ সালে জয়েন স্টকে রেজিস্ট্রি করা সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থা (প্রা.) লি.-এর রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজে ৭০-৮০ কোটি টাকার কাজ ছিল। সব বন্ধ। ৮ কোটি জরিমানা। পত্রিকায় একই খবর পরপর দু-তিন বার, আট কলাম ব্যানার হেডিং। অমন হেডলাইন ’৭২-এ কয়েকবার পেয়েছি। ১৬ বছর পর ’৯০-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরেও অমন আট কলাম হেডিং পাইনি। সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থা (প্রা.) লি.-এর কল্যাণে সেটাও কয়েকবার পেয়েছি। কোনো এক পত্রিকা হেডলাইন করেছিল ‘কাদের সিদ্দিকী ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে’। কী অবাক কাণ্ড! ২৩ কোটি টাকার কাজে ২৩ কোটিই লাভ। ২৩ কোটিতে ২ কোটি ৩০ লাখ লাভ হতে পারে। সেই ২ কোটি ৩০ লাখ লাভ করতে কোটিখানি বেতন দিতে হয়, ব্যাংকের সুদ দিতে হয় আরও ৪০-৫০ লাখ। ইনকাম ট্যাক্স ভ্যাট দিয়ে বছর শেষে ৩০-৪০ লাখ থাকতে পারে। রাজনীতি করা মানুষ আমরা, ছেলের মুসলমানি, মেয়ের বিয়ে, ধর্মসভা সবাই যেন পাওনাদার। তাই প্রকৃত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জীবন খুব নিরাপদ নয়। একটা না একটা লেগেই থাকে। কিন্তু যারা শুধু ঘটিবাটি নিয়ে কলকাতা থেকে এসেছিল এখন যাদের কোটি কোটি টাকা, যাদের চার পয়সার সামাজিক দায়দায়িত্ব নেই, তাদের পত্রিকা আমাদের সম্পর্কে অমন লিখলে কে ফেরাবে?

     লেখক : রাজনীতিক

সর্বশেষ খবর