বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
পাঠক কলাম

সভাপতি ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপন!

মোশাররফ হোসেন মুসা

একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন প্রখ্যাত শিক্ষকের অফিস কক্ষের সামনে একটি সাদা কাগজে কে বা কারা লিখে রেখেছেন— ‘এখানে সভাপতি ভাড়া পাওয়া যায়’। তার বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী জনৈক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কাম শিক্ষাবিদের বাসার সামনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এরকম কিছু কেউ লিখে রেখেছেন কিনা জানা যায়নি। একটি সমাজে যখন অনাচার-অবিচার বৃদ্ধি পায় এবং শাসক শ্রেণি স্বৈরাচারী হয়ে পড়ে, তখন বুদ্ধিজীবীরা প্রথমে লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করা শুরু করেন। বর্তমানে বুদ্ধিজীবীরা দুই শিবিরে বিভক্ত। তাদের পাণ্ডিত্য নিয়ে তেমন অভিযোগ না থাকলেও আনুগত্য নিয়ে রয়েছে বহু অভিযোগ। তারা দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেন না। অথচ ‘না’ বোধক শব্দ ছাড়া নতুন সমাজের বাস্তবতা তৈরি হয় না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একজন বা কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর দৃঢ় ভূমিকার কারণে পুরো সমাজের পরিবর্তন ঘটে গেছে। ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব, মধ্যযুগের রেনেসাঁ, আমেরিকার গণতান্ত্রিক বিপ্লব, রুশ বিপ্লব ইত্যাদি উদাহরণ হতে পারে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়েছিল কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর নির্লোভ ভূমিকার কারণে। বড় দল দুটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুই একসময় বলেছিলেন, ‘আই এম দ্য স্টেট (আমিই রাষ্ট্র)’। দুই নেত্রী প্রকাশ্যে এমন দাবি না করলেও তাদের আচার-আচরণ এর কাছাকাছি। বুদ্ধিজীবীরা তাদের অভিব্যক্তির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে বুদ্ধিচর্চা করে থাকেন। ধরা যাক, একটি সংগঠন একটি সমস্যাকে সামনে করে ঢাকায় একটি সেমিনার করতে আগ্রহী। সেমিনারে সভাপতি ছাড়াও প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির প্রয়োজন পড়ে। অতিথি মন্ত্রী হলে উত্তম হয়। মন্ত্রী মহোদয় নিমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন কিনা তা নির্ভর করে সভাপতির নাম দেখে। সেজন্য অনেক ভেবেচিন্তে সভাপতির নাম বাছাই করা হয়। সভাপতি নিমন্ত্রণে রাজি হলে হলুদ খাম আগেভাগেই পৌঁছে দিতে হবে। যেহেতু দুই শিবিরের পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিদিন একাধিক সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, সে কারণে তাদের ব্যস্ততা থাকে বেশি। তারা সভায় উপস্থিত হয়ে সারগর্ভ কিছু বলে অন্য সভায় চলে যান। আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে ঢাকা শহরসহ বড় বড় শহরগুলোর দেয়ালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোস্টারে লেখা থাকত— ‘পড়াইতে চাই’, ‘সংগীত শিখাইতে চাই’ ইত্যাদি। বর্তমানে বেকারদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ফার্ম তৈরি হয়েছে। ফার্মগুলোর বিজ্ঞাপনের ভাষা হলো— আমরা টিউটর দিচ্ছি, গৃহপরিচারিকা দিচ্ছি, বাসা বদলের অভিজ্ঞ লেবার দিচ্ছি, বিশ্বস্ত সিকিউরিটি দিচ্ছি ইত্যাদি। হয়তো একদিন লেখা থাকবে— ‘আমরা সভাপতি ভাড়া দিচ্ছি’।

লেখক : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর