বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

সোনাইমুড়ীর সহিংসতা

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুন

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে পরস্পরবিরোধী দুটি ধর্মীয় গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহত তিনজন হিজবুত তাওহিদ নামের একটি ধর্মীয় গ্রুপের সদস্য। হিজবুত তাওহিদের অনুসারীরা এলাকায় একটি মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেন বেশ কিছুদিন আগে। তাদের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে এলাকাবাসীর একাংশ। হিজবুত তাওহিদের মতবাদ ইসলাম পরিপন্থী— এ অভিযোগে তারা এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচারণা চালায়। সম্প্রতি হিজবুত তাওহিদের এক সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য থেকে এলাকাবাসীর সঙ্গে হিজবুত সদস্যদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। গত সোমবার দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং দিনভর হামলা-পাল্টা হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হন। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্যও আহত হন। নোয়াখালীতে ধর্মীয় কারণে পরস্পরবিরোধী দুটি গ্রুপের অসহিষ্ণু আচরণে বিপুলসংখ্যক লোকের হতাহত হওয়া এবং অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা শুধু গর্হিতই নয়, নিন্দনীয়। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম শান্তির কথা বলে। জোর করে অন্যের ওপর নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকাই উচিত নয়। অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত করা এবং অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশও নিন্দনীয়। বাংলাদেশের মানুষ উদার ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসী। শত শত বছর ধরে এ দেশের মানুষ তাদের উদার মনোভাবের জন্য নন্দিত হয়েছে। সোনাইমুড়ীর অসহিষ্ণু ঘটনা সে ঐতিহ্যের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। আমরা আশা করব, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সোনাইমুড়ীর সহিংসতার কারণ খুঁজে বের করবে। কাদের ইন্ধনে সেখানে হানাহানির ঘটনা ঘটেছে তা উদ্ঘাটনের সব চেষ্টাই চালাবে। কারা ধর্মের নামে মানুষের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব চেষ্টা চালাবে, আমরা এমনটিই দেখতে চাই।  সোনাইমুড়ীর অসহিষ্ণু ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের সহনশীলতা সম্পর্কে যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এ ভুল ধারণার অবলোপনে হিংসা ও ঘৃণায় বরপুত্রদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যারা ধর্মীয় মতভেদের কারণে রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে সেই বিকৃত মস্তিষ্কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রশাসনের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর