রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্যানারি স্থানান্তরে গড়িমসি

অসুস্থ মনোভাবের অবসান হোক

শিল্পমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সর্বশেষ সময়ের মধ্যেও হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নেওয়া হয়নি। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে সাড়া না পাওয়ার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি শিল্পমন্ত্রী ট্যানারি স্থানান্তরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। সাফ সাফ বলে দেন ১ এপ্রিল থেকে হাজারীবাগে কোনো কাঁচা চামড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। বেপরোয়া ট্যানারি মালিকরা মন্ত্রীর আলটিমেটামকে পাত্তা না দেওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশের চারটি পথে কাঁচা চামড়ার প্রবেশ রোধে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্য কোনোভাবে যাতে কাঁচা চামড়া হাজারীবাগের ট্যানারিতে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর নিয়ে শিল্প মালিকদের নেতিবাচক মনোভাব দুর্ভাগ্যজনক। স্মর্তব্য, চল্লিশের দশকে নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম ট্যানারি শিল্প গড়ে ওঠে। এ শিল্পের পরিসর বাড়তে থাকায় পঞ্চাশের দশকে সরকার এ শিল্পকে হাজারীবাগে সরিয়ে আনে। ১৯৮৬ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ‘সবচেয়ে বেশি দূষণকারী’ শিল্প খাত হিসেবে হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলোকে ‘লাল’ ক্যাটাগরিভুক্ত করে। দূষণ বন্ধে ২০০১ সালে উচ্চ আদালত থেকেও নির্দেশনা আসে। এ প্রেক্ষাপটে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেক সভায় চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সরিয়ে নিতে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সে প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, দফায় দফায় পেছাতে থাকে ‘ডেডলাইন’। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিইটিপি আংশিকভাবে চালু হলেও নানা টালবাহানায় ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়া থমকে আছে। ট্যানারি স্থানান্তরের নির্দেশনা না মানায় ১০ কারখানার মালিককে ২৩ মার্চ হাইকোর্টে তলব করা হয়। চামড়া শিল্প দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং দেশের রপ্তানি আয়ে এ শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু পরিবেশের জন্য এ শিল্প এ যাবৎ যে ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছে তা কোনো আর্থিক লাভের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়।  চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী স্থাপন এবং সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশে শিল্প পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়া সত্ত্বেও শিল্প স্থানান্তরে ট্যানারি মালিকদের টালবাহানা সরকার ও দেশবাসীকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল। এ অসুস্থ মনোভাবের অবসান হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর