সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

রেলে এখনো কালো বিড়ালের দাপট!

কাজী সিরাজ

রেলে এখনো কালো বিড়ালের দাপট!

রেলের কালো বিড়াল নিয়ে কথা যেন শেষই হতে চায় না। গত ১৩ ও ১৬ এপ্রিল মনে হলো ওই কালো বিড়ালের পেট আরও মোটা হয়েছে। এতই মোটা হয়েছে যে ওই পেট ভরার জন্য ইদানীং এসির বাতাসও খাওয়া শুরু করেছে। অর্থাৎ এসব খাতে মেনটেইন্যান্সের সব বরাদ্দ লোপাট হয়ে যাচ্ছে। রেল যাত্রীসাধারণকে সেবা দিতে দিতে ভাসিয়ে ফেলছে বলে প্রায়শই মন্ত্রীকণ্ঠে প্রচার শোনা যায়। শুনতে ভালোই লাগত; শত হোক আমার এলাকার মন্ত্রী। তার মন্ত্রিত্বকালে রেল সার্ভিসে যদি যাত্রী দুর্ভোগ লাঘব হয় এবং নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে, সে হাওয়া একটু-আধটু আমাদের গায়েও লাগার কথা। কিন্তু দুই দিন এমন হাওয়াই লাগল যে গায়ে ফোসকা পড়ার দশা। ১৩ এপ্রিল আমার শ্যালককন্যা স্বর্ণার বিয়েতে গিয়েছিলাম খুলনা। রেলের যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন প্রচারে প্রলুব্ধ হয়ে চিত্রা এক্সপ্রেসে এসি চেয়ারকোচের টিকিট কেটেছিলাম। সঙ্গে আমার ছোট মেয়ে, তার বর এবং সাড়ে চার বছর বয়সের নাতি ঋদ্ধ। কমলাপুর স্টেশন থেকে যখন রাত সোয়া ৭টায় যাত্রা শুরু করি, ভাবিনি পথে কী দুঃসহ যন্ত্রণা অপেক্ষা করছে। বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়ার পরই অনুভব করতে থাকি যে, কোচের ভিতর আস্তে আস্তে উত্তাপ বাড়ছে গরমের। স্নিগ্ধা নামের ‘খ’ নম্বর কোচে যাত্রী আমরা ৮০ জন। এর মধ্যে কয়েকটা শিশুও রয়েছে। বাচ্চারা মোটেই গরম সহ্য করতে পারে না। রীতিমতো চেঁচামেচি শুরু করল বাচ্চারা। একদিকে বাচ্চাদের অস্থিরতা, অপরদিকে অভিভাবকদের এবং অন্য যাত্রীদের মধ্যেও গরমের ছটফটানি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলল। কোচের অ্যাটেনডেন্টকে বলার পর নির্বিকারভাবে জানাল, এসি তো চলছে, রুম ঠাণ্ডা না হলে কী করা যাবে? সব যাত্রীরই মেজাজ তখন খারাপ। সবাই এসি ঠিক করার জন্য চাপ দিল রেলের লোকজনকে। পাশের রুম থেকে একজন দৌড়ে এসে বলল, ‘আমি দেখছি’। তিনি দেখলেন। কী দেখলেন তিনিই জানেন। ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর’ মতো জানালেন, চারটা মেশিনই চালু করে দিয়েছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আমরা অপেক্ষা করলাম। কিন্তু রুমের উত্তাপ কমল না। বরং আরও বাড়ল। এভাবে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা কাটার পর আবার চেঁচামেচি শুরু হলে রেলের লোকজনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হলো। কিছুক্ষণ চেষ্টার পর মনে হলো ত্রুটি সারানো গেছে এবং বদ্ধ কক্ষটায় টিকে থাকার মতো একটা অবস্থা হলো। রেলের দু-একজন ফিসফিস করে বলল, এসি মেশিনের যে জরাজীর্ণ দশা, মাঝে মাঝে যে সচল হয় সেই তো আপনাদের ভাগ্য। অনেক যাত্রীর গায়েই জামা-কাপড় তখন প্রায় ছিল না। যাদের ছিল গরমে ভিজে একাকার। মহিলা ও শিশুদের কষ্ট হয়েছে বেশি। আমার নাতিটা তো অসুস্থই হয়ে গেল। আরও দু-একটা বাচ্চার একই অবস্থা প্রায়। এসি কোচে অসহ্য গরমে নরক যন্ত্রণার মধ্যে গাজীপুর স্টেশনে যুক্ত হলো আরেক মহাযন্ত্রণা। ট্রেন স্টেশনে থামার সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড় করে ৮০ জন বসতে পারার কোচে ঢুকে পড়ল আরও প্রায় ৭০/৮০ জন যাত্রী। এরা টিকিট কেটে উঠেছিল কিনা জানি না। যদি টিকিট কেটেই থাকে, ডাবল টিকিট ইস্যু হলো কীভাবে? টিকিট ছাড়া যদি ঢুকে থাকে, কীভাবে ঢুকল? রেলের এবং বিশেষ করে এসি কোচের জন্য নিযুক্ত ব্যক্তিরা কী করছিল? দু-একজনের হাতে অস্ত্র দেখে বোঝা গেছে, ওরা রেল পুলিশ। যাত্রীদের সেবার জন্যই নাকি এরা নিয়োজিত! শুধু এসি কোচের ভিতরেই নয়, ছাদেও উঠে গেল শত শত মানুষ। রেলের লোকজনের সহযোগিতা না পেলে এসব কী করে সম্ভব? এসি কোচে ৯৮৬ টাকায় মানুষ ঢাকা-খুলনা বা খুলনা-ঢাকার টিকিট কিনে দীর্ঘ পথটা একটু আরামে যাওয়ার জন্য। রেলের সেবা এখন এমন যে, সে আরাম এখন হারাম। ভিতরের যাত্রীদের ভয়ার্ত চিৎকার চেঁচামেচিতে রেলের বন্দুকধারীরা তত্পর হলো এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বের করল। ছাদ থেকে কাউকে নামাল না। অজুহাত খাড়া করা হলো, ছাদে লোকজন উঠে পড়ায় এসি কাজ করছে না। এ এক বিপজ্জনক যাত্রা। পথিমধ্যে হুড়মুড় করে ভিতরে এসি কোচে ঢুকে পড়া এবং ছাদে উঠে পড়া লোকজন ট্রেনের সব যাত্রীর জানমালই বিপন্ন করতে পারত। গভীর রাতে যাত্রীরা কী করতে পারত? সেদিন ট্রেনের ছাদে এবং বিভিন্ন কম্পার্টমেন্টে যত লোক উঠে ও ঢুকে পড়েছিল তাদের তুলনায় রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুবই দুর্বল। ১৬ এপ্রিল ফিরলামও সেই চিত্রা এক্সপ্রেসেই। তবে এবার দিনের বেলায়। সকাল সাড়ে ৮টায় ট্রেন ছাড়ল। ভেবেছিলাম এই পালায় পুরনো অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু একই ঘটনা ঘটল এদিনও। এসির একই সমস্যা। এসি রুম থাকে এয়ারটাইট। জানালার গ্লাস খোলা যায় না। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার দশা। সমস্যার কথা বললে দু-একজন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে একে-ওকে ডেকে আনে। জবাব দেয়, এসির মেশিন তো চলছে। ঠাণ্ডা একটু কম হচ্ছে। অথচ মোটেই ঠাণ্ডা হচ্ছে না। যাত্রীসাধারণের চেঁচামেচি-হৈচৈয়ের পর আবার রেলের এসির ‘ডাক্তার কবিরাজরা’ কিছুক্ষণ নিষ্ফল ঘাঁটাঘাঁটি করে মেশিনপত্র। ফলাফল সেই ‘নিম্নচাপ।’ এদিন শিশু ও ছোটদের সংখ্যা একটু বেশি ছিল। অভিভাবকদের উত্কণ্ঠা এবং হৈচৈয়ের মাত্রাটাও বেশিই হলো। রেলের ‘বন্দুকধারীদের’ দৌড়াদৌড়িও বাড়ল। এক সময় এলেন এক ‘বড়বাবু’। তাকে সামনে রেখে দশ-বারোজন নানা পদের রেল কর্মচারী ‘বীরের’ মতো এসি কোচটায় ঢুকল। মনে হলো স্কুলের নিচু ক্লাসের ছাত্ররা খুব গোলমাল করছে। ক্লাস টিচারকে মানছে না, তাই হেডমাস্টার মশাই হনহন করে ঢুকলেন আরও কিছু শিক্ষক-কেরানি-দফতরি নিয়ে। তিনি ঢুকেই এমনভাব দেখালেন যেন ওই কোচের যাত্রীরা মস্তবড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন। একজন ফিসফাস করে বলল, উনি রেল ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু তাতে এসি রুমে ঘর্মাক্ত যাত্রীদের কী আসে যায়। সবাই তাকে উদ্দেশ করে এক কথাই বার বার বলছেন, আপনার ‘ওয়াজ’ শোনার ধৈর্য নেই আমাদের; এসি ঠিক করে দেন। তিনিও রেলের অন্য কর্মচারীদের মতোই বললেন, এসি তো চলছে। সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই একসঙ্গে বলে উঠলেন, এসি চললে রুম ঠাণ্ডা হচ্ছে না কেন? তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, ‘ঠাণ্ডা একটু কম হচ্ছে, এই আর কী।’ ভদ্রলোক নিজেও তখন ঘামছিলেন। একজন যাত্রী বললেন, কোচ ঠাণ্ডা হলে আপনি ঘামছেন কেন? তিনি জবাব দিলেন, ‘ঘামানো আমার অভ্যাস।’ মনে হলো যেন যাত্রীদের সঙ্গে তিনি হয় ইয়ার্কি করলেন, নতুবা ক্ষমতা দেখালেন। একজন মহিলা যাত্রী বললেন, এসি না চলায় আমার বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চট করে লোকটি বলে বসলেন, ‘আপনার বাড়িতে এসি আছে নাকি?’

কী ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রশ্ন। বোঝা গেল তার শিষ্টাচারজ্ঞান সীমিত, তা না হলে এমন প্রশ্ন কেউ করে? প্রতিবাদ করলেন যাত্রীরাই। বললেন, এটা তো ভদ্রলোকের আচরণ হলো না। ভদ্র মহিলাকে আমি চিনি। তার ঘরের প্রতি কক্ষেই এসি আছে। কোনো যাত্রীর বাসায় এসি আছে কিনা তা জিজ্ঞেস করা কি রেল ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার আওতাভুক্ত বিষয়, নাকি তার আওতাবহির্ভূত? তা ছাড়া কোনো যাত্রীর বাসায় এসি আছে কী নেই সেটা রেল কর্তৃপক্ষের জানার বা তাদের জানানোর বিষয় নয়। একজন যাত্রী এসি কোচের টিকিট কাটেন তার পুরো যাত্রাপথে এসির সুবিধা পাওয়ার জন্য। শোভন শ্রেণির চেয়ে এসি কোচের চেয়ারের টিকিটের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। বেশি টাকা দিয়ে টিকিট তো কাটা হয় বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য। বাড়তি টাকা নিয়ে যাত্রীকে সেই বাড়তি সুবিধা দিতে রেল কর্তৃপক্ষ বাধ্য। সেটা না দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে সভ্যতাবর্জিত ব্যবহার করা কি উচিত? ভদ্রলোক আরও একটি বাজে কথা বলেছেন— ‘এসি সার্ভিসে রেলের লস, শোভন শ্রেণিতে লাভ। আপনাদের সুবিধার জন্য রেল এ সার্ভিস দিচ্ছে।’ ভাবখানা এমন যে, কিছু যাত্রীর সুবিধার জন্য ভদ্রলোক বা রেলের অন্য কেউ বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দিয়ে লস কভার করছে। এসি সার্ভিস যদি রেলের ‘লুজিং প্রজেক্ট’ হয় তা তুলে দিলেই পারে। কেউ তখন ডাবলের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে এসি চেয়ারকোচ বা পাঁচগুণ দাম দিয়ে বার্থ-এর টিকিট কিনে এসি সুবিধা আর চাইবে না। সার্ভিসও দেবে না আবার যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করবে, এটা কি মানা যায়? এর একটা বিহিত না হলে যাত্রীদের সঙ্গে রেলের লোকজনের দুর্ব্যবহার চলতেই থাকবে। যে দুই দিনের ঘটনা উল্লেখ করলাম ওই দুই দিন চিত্রা এক্সপ্রেসের ‘খ’ নম্বর কোচে কারা কোন দায়িত্বে ছিলেন, দুই দিনই এসি কোচের যাত্রীরা কেন এসি সুবিধা যথাযথভাবে পেলেন না, অন্যান্য দিনও যাত্রীসেবা কতটা নিশ্চিত হয় চাইলেই মন্ত্রী সাহেব তা জেনে নিতে পারেন। মাননীয় মন্ত্রী কি দয়া করে তা জানবেন এবং দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? আর রেল ম্যাজিস্ট্রেট বলে যার পরিচয় পেলাম এবং তার আচরণের যে বিবরণ দিলাম তার ব্যাপারেও কি একটু খোঁজখবর নেবেন? তার এত ক্ষমতার উৎস কী?

শুধু এসির সমস্যাই নয়। মাননীয় মন্ত্রী, দয়া করে এসি কোচগুলো একটু সরেজমিন দেখার ব্যবস্থা করুন। এসি চেয়ারকোচের চেয়ারগুলোর এতই বেহাল দশা যে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা যায় না। চেয়ারে মাথা রাখার জায়গায় বালিশের মতো একটা কিছু আছে, অনেক চেয়ারে নেই। কোনো কোনো চেয়ারে পা রাখার একটা ব্যবস্থা আছে, অনেক চেয়ারে তা নেই। কেউ কি এসব দেখার নেই রেলে? রেল সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশন কিন্তু ভালো নয়। বলা হয় দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে এখানে। নিয়োগ, ট্রান্সফার, পোস্টিং ইত্যাদিতে অনিয়মের কথা শোনা যায়। টিকিটের কালোবাজারির কথা তো আছেই। স্বাভাবিকভাবে টিকিট পেতে তো আমাদের কষ্ট হয়। অন্যদের কী অবস্থা মাননীয় মন্ত্রী বঝুন তো!

এত অব্যবস্থাপনা, দুর্ভোগ সৃষ্টির পরও রেলের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বার বার। কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা, সংসদে কোনো প্রকার আওয়াজ ছাড়াই ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া বেড়েছে ৭.৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ। মন্ত্রী বলেছেন, লোকসান কমানোর জন্য এই ভাড়া বৃদ্ধি। ২০১২ সালে লীগ সরকারের আমলেই লোকসানের কথা বলে ভাড়া আরেকবার প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছিল।

লোকসান দেখানো হয়েছিল ৮০০ কোটি টাকা। এবারও বলা হয়েছে লোকসান ৯০০ কোটি টাকা। তাহলে যাত্রী ও পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর টাকাটা গেল কার পেটে। সেবা তো বাড়েনি মোটেও। আরও মজার খবর আছে রেলের। ‘পূর্ব পাকিস্তান’ রেলে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার, এখন তা ২৭ হাজার। কর্মচারী কমেছে কিন্তু বেড়েছে অফিসার। কর্মচারী সংকটে ১৬০টি রেল স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনা-বাগেরহাট লাইনের মতো অনেক যাত্রীবহুল লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাস মালিকদের ব্যবসার স্বার্থে। সৈয়দপুরে রেলের একটি বড় কারখানা আছে। সেখানে ওয়াগন ও কোচ তৈরি করা যায়। জানা যায়, সেখানে একটি কোচ তৈরিতে খরচ পড়ে ৮০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু এখানে তা তৈরি করা হয় না। প্রায় ৪ কোটি টাকা করে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ছাতকে স্লিপার তৈরির একটি কারখানা আছে। সেটিও বন্ধ প্রায়। স্লিপারও আমদানি করা হয়। চীন থেকে ডেমু ট্রেন আমদানি করে লোকসান দেওয়ার পরও আবারও ৩০ সেট ডেমু ট্রেন ২০১৬ কোটি টাকায় আমদানি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব কার স্বার্থে হয়, কেন হয় তা না বোঝার মতো ‘নাদান’ নয় বাংলাদেশের মানুষ। সারা দুনিয়ায় রেল একটি শক্তিশালী ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। ভারতসহ অনেক দেশে তা লাভজনক। আমাদের দেশে তা হচ্ছে না কেন? এই লীগ আমলই শুধু নয়, বিএনপি আমলেও রেলের একই হাল ছিল। রেলে পর্যায়ক্রমে ‘কালো বিড়ালের’ বংশ বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

রেলের লাভের গুড় যাচ্ছে ওই কালো বিড়ালের পেটে। সরকার দেশে উন্নয়নের যে বাদ্য বাজাচ্ছে, রেলের মতো কিছু প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে বোঝা যায়, উন্নয়নের এই জোয়ারে কিছু লোক ভাসছে, কিন্তু তা সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করছে না।

রেলের কথা দিয়েই শেষ করি। এটি একটি জরুরি সেবা খাত। সরকার বা রাষ্ট্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা করপোরেট হাউস নয়। এখানে লাভ-লোকসানের হিসাব দেখানো অন্যায় এবং জনগণকে সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের লঙ্ঘন। রেল এমন একটি খাত, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব এবং সুনীতি-সুব্যবস্থাপনা থাকলে এ খাতে লোকসান হওয়ার কথা নয়। এটি একটি জনপ্রিয় সার্ভিসে পরিণত হতে পারে। শুধু ঢাকা-খুলনা লাইন নয়, প্রায় সব লাইনেই অভিযোগ প্রায় এক। সারা দেশে সব শ্রেণির যাত্রীর দুর্ভোগ কমিয়ে সহনশীল ভাড়ায় রেল সার্ভিস নিশ্চিত করার দাবি জনগণের দাবি। তবে রেলকে কালো বিড়ালমুক্ত করা না গেলে তা সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর