শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

নবীজীর আদর্শে জীবন গড়ি

মুফতি আমজাদ হোসাইন

নবীজীর আদর্শে জীবন গড়ি

যারাই নবীজীর আদর্শে জীবন গড়েছে তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার মুখ দেখেছে। তাদের জীবন শান্তিময় হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।’ (সূরা নিসা : ৫৯)। অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর আনুগত্য করল সে যেন আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে ব্যক্তি বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ!) তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।’ ( সূরা নিসা : ৮০)। সূরা নূরের ৬৩নং আয়াতে আল্লাহতায়াল ইরশাদ করেন, ‘রসুলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মতো গণ্য কর না। আল্লাহ তাদের জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদের গ্রাস করবে।’ আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহতায়ালা বান্দার ইবাদত এবং রসুল (সা.)-এর আদেশ অমান্যকারীদের ব্যাপারে সীমারেখা বাতলে দিয়েছেন। আল্লাহ ও রসুল (সা.) কর্তৃক আদেশকৃত হুকুম-আহকামকে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা, জবান দ্বারা স্বীকার করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা বাস্তবায়ন করাই হলো একজন প্রকৃত ইমানদারের কাজ। এ পদ্ধতি অবলম্বন করে যারা ইবাদত করবে তাদের ইবাদতই আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় হবে। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর বাতলানো পথ বাদ দিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তি বা জাতির পন্থা অবলম্বন করবে তা হবে শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার। তাদের দুনিয়াতে আল্লাহতায়ালা বড় শাস্তি দেওয়ার আগে হালকা শাস্তি দেবেন। যদি তারা আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর বিধান মেনে সঠিক পথে ফিরে না আসে, তাহলে তাদের দুনিয়া ও পরকালে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করানো হবে। গভীর দৃষ্টিতে চিন্তা করলে দেখা যায়, আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর প্রত্যেকটি বিধান ও কর্মপন্থার মধ্যে রয়েছে হিকমত এবং নেয়ামতে পরিপূর্ণ। আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর বাতলানো পথে চলার মধ্যে রয়েছে দুনিয়াতে নিরাপত্তা ও পরকালে অনাবিল শান্তি জান্নাত। লেবাস-পোশাক, আচার-বিচার এবং সামাজিক বিবাহ-শাদিসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন উত্তম নিদর্শন। যেমন রসুল (সা.) লেবাসে-পোশাকে যে শালীন পোশাকের বিধান রেখে গেছেন তা মানার মধ্যেই সমূহ কল্যাণ রয়েছে। পুরুষের জন্য এক ধরনের পোশাক আর নারীর জন্য ভিন্ন পোশাক হবে। পুরুষের পোশাক নারী পরিধান করলে কিংবা নারীর পোশাক পুরুষে পরিধান করলে সামাজিক অবক্ষয় নেমে আসবে। যা বর্তমান বিশ্বে অহরহ ঘটছে। নারী হারাচ্ছে ইজ্জত আব্রু, বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য অধিকার থেকে। আচার-বিচারে তিনি ইনসাফের ফয়সালা করতেন, কোনো মুসলিমও যদি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন— তিনি মুসলমানের পক্ষাবলম্বন করতেন না, বরং ন্যায়সঙ্গতভাবে ইনসাফের ফয়সালা করতেন। শুধু তাই নয় সামাজিক প্রতিটি কর্মকাণ্ডে মানুষের জন্য সহজ ও নিরাপদ পদ্ধতি আবিষ্কার করে গেছেন। যেমন : বিবাহ-শাদিতে। নিজ কন্যা হজরত মা ফাতেমা (রা.)-কে হজরত আলী (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়ার সময় অতি উত্তম এক নমুনা দেখিয়ে গেছেন। যার মধ্যে ছিল না বেহুদা খরচাদি। লোক দেখানো আহামরি কোনো মহরও ধার্য করেননি। মাত্র ৪৮০ দেরহাম দেনমোহর ধার্য করেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ দানবীর। কোনো ভিক্ষুককে কখনো ফিরিয়ে দিতেন না। কোনো প্রার্থী তাঁর কাছে কিছু চেয়ে নিরাশ হয়নি। যদি কখনো এমন হতো যে, তাঁর হাত একেবারেই খালি যে প্রার্থনাকারীকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। তখন তাকে কোমল স্বরে বিদায় দিতেন এবং বুঝিয়ে দিতেন অন্য সময়ে দেবেন বলে ওয়াদা করতেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদী। কখনো মিথ্যা কথা বলতেন না। তাঁর স্বভাব ছিল অতি কোমল। কেউ যেন কোনোভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে সার্বক্ষণিক লক্ষ রাখতেন। এমনকি রাতে কখনো কোনো কাজে বের হলে পায়ের পাদুকাটিও পরতেন খুব ধীরে ধীরে। আস্তে আস্তে দরজা খুলতেন। ধীরগতিতে চলতেন। ঘরে প্রবেশ করে গৃহবাসীকে শায়িত দেখলে তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে এই ভেবে চুপিসারে নিজের কাজ নিজেই সম্পাদন করতেন। তিনি সাধারণত নিজের কাজ নিজেই করতেন। গৃহের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। ব্যবহার ছিল নম্র ও ভদ্র, কারও সঙ্গে কর্কশ ভাষায় কথা বলতেন না।  মিশকাত শরিফে এক হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-এর দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত খেদমত করেছি। কখনো তিনি আমাকে এমনটি বলেননি যে, এ কাজটি এমন কেন করেছ বা এমন কেন করনি?  আল্লাহপাক আমাদের রসুল (সা.) এর আদর্শের পুঙ্খানুপঙ্খ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

     লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর