বুধবার, ৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মেরাজ রজনীর উপহার নামাজ

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

মেরাজ রজনীর উপহার নামাজ

মেরাজ শব্দের অর্থ উপরে ওঠা, ঊর্ধ্বালোকে গমন করা। প্রিয়তম রসুলকে মহান আল্লাহ পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বালোকে নিয়ে যে সম্মান দিয়েছেন, বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন ইসলামী ইতিহাসে তা মেরাজ বা ঊর্ধ্বালোকে ভ্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রসিদ্ধ মতামত অনুযায়ী রজব মাসের ২৭ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। রসুল (সাঃ)-এর মেরাজের সফরে দুটি পর্ব বয়েছে। একটি হলো, মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত সফর। আর অপরটি হলো, বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে বিভিন্ন আসমানে আরোহণ ও ভ্রমণ। প্রথম পর্বকে ইসরা বলে। আর দ্বিতীয় পর্বকে মেরাজ বলে। ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর এবং মেরাজ বা ঊর্ধ্বালোকে ভ্রমণ উভয় সফর এক সঙ্গেই হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি।

যাতে আমি তাঁকে কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ সূরা : বনী ইসরাইল, আয়াত : ১। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে সশরীরে এবং জাগ্রত অবস্থায় রাত্রিকালীন সফর করিয়েছেন। তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে, মেরাজের ঘটনা এই যে, নবী কারিম (সা.) এই সফর রাত্রিবেলায় জাগ্রত অবস্থায় করেছেন। তিনি মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস (মুসলমানদের প্রথম কেবলা যা বর্তমানে ইসরাইলের দখলে আছে) পর্যন্ত বোরাকযোগে সফর করেন। বোরাক হলো এক প্রকার জান্নাতি প্রাণী যা প্রিয় রসুল (সা.)-কে বহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি এক প্রকার স্বর্গীয় সিঁড়ির মাধ্যমে আসমানে গমন করেন। সিঁড়িটির মধ্যে ধাপ ধাপ করা ছিল। একের পর এক সব আসমানে তিনি গমন করেন। প্রত্যেক আকাশে ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রত্যেক আসমানে অবস্থানরত নবীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রত্যেক নবী বিশ্বনবীকে সাদর সম্ভাসন জানান। জিবরাইল প্রত্যেক নবীর সঙ্গে বিশ্বনবীকে পরিচয় করিয়ে দেন। অতঃপর রসুলে পাক (সা.) এমন এক ময়দানে পৌঁছেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ দেখেন যেখানে আল্লাহর নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিল। এখানে রসুল (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)-কে স্বরূপে দেখেন। তাঁর ছয়শত পাখা ছিল। সেখানেই তিনি দিগন্তবেষ্টিত সবুজ রঙের রফরফ দেখতে পান। রফরফ বলা হয় এক প্রকার পাল্কিকে। তিনি বায়তুল মামুরও দেখতে পান। বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আল্লাহকে সেজদা করেন। যারা একবার সেখানে প্রবেশ করে তারা কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সেজদা করার সুযোগ পাবে না। এরপর রসুল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। সেখানে মহান আল্লাহ প্রিয় রসুলকে উম্মতের জন্য প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। এরপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। রসুল (সা.) মেরাজে থাকা অবস্থায় নামাজ ফরজ হওয়ার দ্বারা নামাজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। কারণ অন্যান্য আমল ফরজ হয়েছে রসুল (সা.)-এর কাছে জিবরাইলকে পাঠানোর মাধ্যমে। আর নামাজ ফরজ করা হয়েছে স্বয়ং রসুল (সা.)-কে আসমানে ডেকে নিয়ে। এর দ্বারা নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্যান্য এবাদতের তুলনায় যে বেশি তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এরপর রসুল (সা.) জমিনে অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাসে ফিরে আসেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য নবীও দুনিয়াতে আসেন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর