মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বন্ধ হোক অর্থ পাচার

মীরজাফরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশ টাকা পাচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। কলকাতার শীর্ষ বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৩ কোটি ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের ৩৭টি দেশ বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া এ অর্থ ভোগ করছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, ব্রিটেন, জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া, তুরস্ক, বেলারুশ, মরিশাস। প্রতিবেদনমতে, বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। আয়ের ৮০ শতাংশ নানা পথে বিদেশে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশের অধিকারী পোশাকশিল্প-সংশ্লিষ্টরাই মূলত বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। আমদানি শুল্ক না থাকায় কম দামে যন্ত্রপাতি ও মালামাল কিনে বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হচ্ছে হামেশাই। ভারতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানেও প্রকাশ পেয়েছে অর্থ পাচারের তাক লাগানো ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আর্থিক খাতের লুটপাটের প্রায় পুরো অর্থই পাচার হয়ে গেছে বিদেশে। লুটের চক্রের সদস্যরা বিপুল অর্থ নিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম। অনেকেই ইউরোপের দেশে দেশে নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানেই ফেঁদে বসেছেন শত শত কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। কেউ কেউ অন্য দেশে ব্যাংক পর্যন্ত খুলে বসেছেন। আবার টাকা পাচারকেই ব্যবসা হিসেবে নেওয়া সিন্ডিকেটগুলো এলসি, ওভার-আন্ডার ইনভয়েস, হুন্ডির পাশাপাশি চেইন শপ বা চেইন রেস্টুরেন্টের মতো স্থায়ী পদ্ধতি খুলে অর্থ পাচার করছে। দেশের মানুষের ঘাম পানি করা শ্রমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ায় দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে কাঙ্ক্ষিতভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। দেশে সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। অস্তিত্বের স্বার্থেই লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে সরকারকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত অসৎ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার সম্মুখীন করাও জরুরি। দেশ-জাতির সঙ্গে যারা মীরজাফরিতে জড়িত, তাদের প্রতি কোনো ধরনের অনুকম্পা পরিদর্শনের সুযোগ থাকা উচিত নয়।

সর্বশেষ খবর