মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেবার নামে যন্ত্রণা

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির মহোৎসব বন্ধ হোক

নগরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির উৎসব নাগরিকদের বিপর্যস্ত অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজধানীর এমন কোনো সড়ক নেই যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে না। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানজটের ঢাকা কার্যত অচল নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এ প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল আরেক প্রতিষ্ঠান। সে কাজ শেষ হতেই আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে সড়ক খনন করছে। নগরবাসীকে উন্নত রাস্তাঘাট, পরিচ্ছন্ন নর্দমা বা সুষ্ঠুভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির সেবা পৌঁছে দেওয়ার নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হলেও তাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নাগরিক জীবন। প্রতিদিন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে নগরজুড়ে উড়ছে ধুলাবালি। নোংরা হয়ে উঠছে পরিবেশ। শ্বাসকষ্টসহ নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় রয়েছে প্রায় ২২০০ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, যার ৮০ ভাগেই উন্নয়নকাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আর এ উন্নয়ন করতে গিয়েই কয়েক মাস ধরে রাজধানীর রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে বিপন্ন। এ উন্নয়নের খপ্পরে নগরবাসী পড়েছে মহাবিপাকে। শুষ্ক মৌসুমে এসব উন্নয়নকাজ শুরু হলেও বর্ষা মৌসুম প্রায় চলে আসার পরও থেমে নেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিটি সড়কেই যানজট প্রায় স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। যান্ত্রিক যানবাহনে যে পথ সাধারণ অবস্থায় ১০ মিনিটে অতিক্রম করার কথা, সে পথ পাড়ি দিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুণ সময়ও লাগছে। উন্নয়নকাজের সমন্বয়হীনতার কারণে জনভোগান্তি যেন স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। রাজধানীর মৌচাক, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরে ফ্লাইওভারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। গুলশানে ওয়াসার পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। কাজ শেষ হওয়ার পরও রাস্তা মেরামত না হওয়ায় চলছে ভোগান্তি। রাজধানীর একাংশে চলছে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের কাটাছেঁড়া। সেবার নামে নগরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির যে বাড়াবাড়ি চলছে তাতে নগরবাসীর অবস্থা দাঁড়িয়েছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মতো। নগরবাসী অবশ্যই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মানসম্মত সেবা চায়। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন কিংবা ওয়াসার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজে সাময়িক ভোগান্তির শিকার হতেও তারা রাজি। কিন্তু তা যেভাবে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। এ অকাম্য অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

সর্বশেষ খবর