বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরকারি প্রকল্পের চালচিত্র

প্রতিটি উন্নয়ন কাজই মানহীন

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারি অর্থের বরাদ্দ প্রতিবছরই বাড়ছে। আগামী অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ লাখ কোটি টাকার অঙ্ক ছাড়াবে। উন্নয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দ যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লুটপাট। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তারা দেশের যতগুলো প্রকল্প প্রদর্শনে গেছেন সবকটিতেই অনিয়ম ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ভৈরব সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ নিয়েও উঠেছে একই ধরনের অভিযোগ। এ প্রকল্পটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত বালুর মধ্যে পলি মেশানো রয়েছে আর পাথরের মধ্যে রয়েছে পাতলা ও ভঙ্গুর পাথর। বিটেইনিং ওয়ালের ঢালাইয়ে স্টিল শাটার ব্যবহারের কথা থাকলেও কাঠের শাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এক বছর আগে নির্মিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইতিমধ্যে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের ছাদ মেঝেসহ বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা উঠে গেছে এবং দেখা দিয়েছে ফাটল। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজেও একই ধরনের কারচুপির কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজে নিশ্চিত হয় জাতীয় অগ্রগতি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় অগ্রগতি বা সাধারণ মানুষের কল্যাণ নয়, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছত্রছায়ায় প্রতিপালিত ঠিকাদার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত অসৎ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেট স্ফীত করার জন্যই উন্নয়ন কাজ করা হয়। উন্নয়ন কাজে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকাংশই চলে যায় অসৎ ঠিকাদার এবং কাজ তত্ত্বাবধানের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেটে। বাদবাকি যে অর্থ দিয়ে কাজ করা হয় সে কাজের কোনো মান থাকার প্রশ্নই ওঠে না। উন্নয়ন কাজের নামে দেশজুড়ে গত কয়েক দশক ধরে এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাইয়ের যে কারবার চলছে তা জনস্বার্থে বন্ধ হওয়া দরকার। উন্নয়ন কাজের মানহীনতা প্রমাণিত হলে শুধু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নয় তত্ত্বাবধানকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। লুট বন্ধে সেটিই হতে পারে প্রকৃষ্ট উপায়।

সর্বশেষ খবর