বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

পথিকৃৎ নূরজাহান

তিনি বেঁচে থাকুন উত্তরসূরিদের মাঝে

দেশের নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ‘বেগম’ সম্পাদক নূরজাহান বেগম আর নেই। সোমবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। ৯১ বছরের পরিণত বয়সে জীবনের পরপারে চলে গেলেন দেশের নারী জাগরণের এই আলোকবর্তিকা। মৃত্যুর শীতল ছায়া নূরজাহান বেগমকে কেড়ে নেওয়ায় দেশের নারী আন্দোলনের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। নারীদের জাগিয়ে তুলতে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদের আত্মমর্যাদাশীল হয়ে উঠতে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস। নূরজাহান বেগমের সাংবাদিকতা ও সাহিত্য সাধনার শুরু তার বাবা বাঙালি মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের হাত ধরে। ১৯৫২ সালে তিনি কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান দাদাভাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দেশের শিল্পসাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই দম্পতির পৃষ্ঠপোষকতা ছিল কিংবদন্তির মতো। দেশে আজ যারা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত তারা প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে তাদের কাছে ঋণী। নূরজাহান বেগম মাত্র ২২ বছর বয়সে বেগম পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে কলকাতায় বেগমের প্রকাশনা শুরু হয়। ১৯৫০ সালে বেগম কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। সেই পঞ্চাশের দশকে বাঙালি মুসলমানদের নেতৃত্বে মহিলাদের সচিত্র পত্রিকা প্রকাশ ছিল রীতিমতো সাহসী কাজ। বলা যায়, দেশের নারী লেখিকাদের প্রায় সবার হাতেখড়ি বেগম পত্রিকার মাধ্যমে। নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনরা শোক প্রকাশ করেছেন। তারা নারী জাগরণে এই মহীয়সীর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। নারী জাগরণে তার সম্পাদিত বেগম পত্রিকার অবদানও স্মরণ করেছেন তারা। সামাজিক কূপমণ্ডূকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বেগম যে সাহসী ভূমিকা রেখেছে তা আজকের এই সময়েও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। আমরা দেশের নারী জাগরণের এই আলোকবর্তিকার মৃত্যুতে গভীর শোক জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ থাকায় সমাজ জীবনে তার উপস্থিতি সেভাবে অনুভূত না হলেও তার এই বিদায় দেশ ও জাতির জন্য এক মহাক্ষতি। আমরা আশা করব নূরজাহান বেগমের অনুসারীরা এ শূন্যতা পূরণে সচেষ্ট হবেন।  তিনি বেঁচে থাকুন উত্তরসূরিদের মাঝে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর