রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর প্রশাসনিক ব্যবস্থা

শাকিল জাহান

আরব দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার পর হজরত মুহাম্মদ (সা.) একে প্রাচীন ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় প্রদেশে বিভক্ত করেন। এ প্রদেশগুলো হলো মদিনা (নয়া ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, এ প্রদেশে অবস্থিত হওয়ায় এখানে কোনো প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন না), খাইবার, মক্কা, তায়িফ, তায়াম, সানা, ইয়েমেন (নাজরান), বাহরায়েন, উমান ও হাযরামাউত। প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে ‘ওয়ালী’ বলা হতো। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক নিযুক্ত হতেন এবং স্বীয় কার্যকলাপের জন্য তার কাছে দায়ী থাকতেন। নবুয়ত সংক্রান্ত কাজ ছাড়া মদিনায় নবী করিম (সা.) যেসব কাজ করতেন, প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে স্বীয় এলাকায় সেসব কাজ করতে হতো। তিনি ছিলেন জামাতে নামাজের ইমাম, প্রধান সেনাপতি, বিচারক ও প্রশাসক। প্রাদেশিক শাসনকর্তা ব্যতীত নবী (সা.) সব উপজাতীয় এলাকায় আমির নিয়োগ করেছিলেন। তার ওপর জাকাত বা মিসকিন কর আদায় এবং সদকাহ বা স্বেচ্ছামূলক খয়রাত সংগ্রহের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। প্রাদেশিক বিচার বিভাগের কার্য পরিচালনার জন্য নবী করিম (সা.) কাজী নিযুক্ত করেছিলেন। মদিনায় বিচার বিভাগের কাজ তিনি নিজেই করতেন।

প্রাক ইসলামী আরবে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তাই সরকারি আয়-ব্যয়ের কথাও কেউ জানত না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বপ্রথম আরবে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে তিনি একটি সুষ্ঠু ও কল্যাণকামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সবার জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং দরিদ্রের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান ছিল তার নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য। তার দ্বারাই মদিনাতে প্রথম সরকারি খাজাঞ্চিখানা স্থাপিত হয়। ইসলামের অনুমোদিত পাঁচটি উৎস থেকে রাষ্ট্রের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করা হতো। এ পাঁচটি উৎস হলো— ১. জাকাত ও সদকাহ্; ২. জিযিয়া; ৩. খারাজ; ৪. খুমস বা যুদ্ধকালে সংগৃহীত মালের এক-পঞ্চমাংশ এবং ৫. আল-ফে। এটাই ইসলামের অনুমোদিত পাঁচ ধরনের কর। কোরআনে নামাজের পরেই জাকাতের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ধনী মুসলমানদের ওপর জাকাত দেওয়া ‘ফরজ’ (অবশ্য কর্তব্য)। বিভিন্ন সম্পত্তির ওপর বিভিন্ন রকম নেসাব (কর) ধরা হয়। জিযিয়া কর অমুসলমানদের কাছ থেকে আদায় করা হতো। এটা সামরিক কর্তব্যের পরিবর্তে এবং জানমালের নিরাপত্তা ও হেফাজতের জন্য গ্রহণ করা হতো। মুসলমানরা অমুসলমানদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হলে সংগৃহীত জিযিয়া কর ফেরত দিত। হজরত মুহাম্মদ (সা.) জীবিতকালে যেসব অমুসলমান জিযিয়া কর দিতে সমর্থ ছিল তাদের প্রত্যেককে বছরে এক দিনার হিসেবে জিযিয়া কর দিতে হতো। এ কর ব্যবস্থা নতুন কিছু ছিল না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আগে এ কর পারস্য ও রোমে যথাক্রমে জিযিট ও ‘ত্রিবুতাম ক্যাপিটিস’ নামে প্রচলিত ছিল। অমুসলমান প্রজাদের জমি ভোগদখলের জন্য খারাজ নামে ভূমিকর দিতে হতো।

 

সর্বশেষ খবর