রবিবার, ৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

রমজানের শিক্ষাকে পারিবারিক জীবনেও কাজে লাগাতে হবে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। নিজেকে মুমিন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ শিক্ষার মূল্য অপরিসীম। এ পবিত্র মাসে সংযমের শিক্ষাকে ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনেও কাজে লাগাতে হবে। সিয়াম সাধনার এই মাসে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং অপর মানুষের সঙ্গে আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও আমাদের সংযমী ও দরদী হতে হবে। এই পবিত্র মাসে সিয়াম সাধনার অর্জিত শিক্ষাকে বাকি জীবনেও কাজে লাগাতে হবে। অসহিষ্ণুতার মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে হবে জীবন থেকে। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যে আপন পরিবার-পরিজনদের কাছে সবচেয়ে বেশি উত্তম।’ — ইবনে হেব্বান। আরেক বর্ণনায় আছে, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে নিজ পরিবারের সঙ্গে অধিকতর কোমল আচরণকারী।’ স্বয়ং রসুল (সা.) সহধর্মিণীদের সঙ্গে অত্যধিক নরম-কোমল আচরণ করতেন। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক স্ত্রীর দুর্ব্যবহারে সবর এখতিয়ার করবে, সে হজরত আইয়ুব (আ.)-এর ন্যায় পুরস্কার পাবে। আর যে মহিলা স্বামীর দুর্ব্যবহারে ধৈর্য ধারণ করবে, সে ফেরাউনের বিদূষী স্ত্রী আছিয়া বিনতে মুজাহিমের ন্যায় পুরস্কারপ্রাপ্ত হবে।’

বর্ণিত আছে, এক লোক হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে স্ত্রীর দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দায়ের করার জন্য হাজির হলো। লোকটি বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে হজরত ওমরের বের হওয়ার অপেক্ষায় থাকল। এমন সময় শুনতে পেল, হজরত ওমর (রা.)-এর স্ত্রী তাঁকে শক্ত ভাষায় তিরস্কার করছেন। অথচ তিনি স্ত্রীর কোনো প্রত্যুত্তর না দিয়ে চুপ করে সহ্য করছেন। এটা শুনে লোকটি চলে যেতে উদ্যোগী হলো। সে মনে মনে ভাবল, এমন প্রতাপশালী খলিফার অবস্থাই যখন এই, তখন আমি তো কিছুই না। ঠিক সে মুহূর্তে হজরত ওমর (রা.) বাইরে এসে দেখলেন, লোকটি চলে যাচ্ছে। তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেন এসেছিলে, আর দেখা না করে কেনই বা চলে যাচ্ছ? সে জবাব দিল আমীরুল মুমিনীন! স্ত্রী আমার সঙ্গে যে অসদাচরণ করে, কড়া কথা বলে, আপনার সমীপে তার নালিশ জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু শুনতে পেলাম, আপনার স্ত্রীও আমার স্ত্রীর মতোই। তাই চলে যাচ্ছিলাম, আর মনে মনে ভাবছিলাম, স্বয়ং আমীরুল মুমিনীনের অবস্থাই যখন এই, তার তুলনায় আমি তো কিছুই না। তখন হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘দেখ, ভাই! আমার কাছে তার কিছু অধিকার রয়েছে বিধায় তাকে আমি সহ্য করলাম। সে আমার খাবার পাকায়, রুটি তৈরি করে, কাপড় ধোয়, আমার ছেলে-মেয়েদের দুধ পান করায়। অথচ এগুলো তার জন্য অপরিহার্য নয়। সে এসব কাজ করে দিয়ে আমার মনকে অবৈধ উপার্জন থেকে বিরত রাখে। এ কারণেই তাকে আমি সহ্য করি।’ লোকটি তখন বলল, আমীরুল মুমিনীন! আমার স্ত্রীও তো একই রকম করে। হজরত ওমর (রা.) তখন বললেন, ‘তা হলে ভাই! তাকে মেনে নাও।  পার্থিব এ জীবন তো ক’দিনের জন্য মাত্র।’

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর