বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

মৃত্যুর পথে চলা

সামিয়া রহমান

মৃত্যুর পথে চলা

সেদিন ছিল ২৭ মে। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রাক্তন অধ্যাপক শাহনিমা রহমান। হঠাৎ করেই তার জ্বর আর ডায়রিয়া। সামান্যই জ্বর। কিন্তু ছেলে-মেয়ের মন মানে না। মার চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হলো খুলনারই স্থানীয় একটি ক্লিনিকে। জ্বর উঠানামা করছিল। তাই সবার পরামর্শে ছেলে আরও ভালো চিকিৎসা, আরও একটু ভালো সেবার জন্য মাকে নিয়ে গেল খুলনারই একটি আরও ভালো  ক্লিনিকে। নাম তার গাজী ক্লিনিক। সেই ভর্তিই বোধহয় হলো কাল। জ্বর কমলেও শুরু হলো শ্বাসকষ্ট। জরুরি সেবার জন্য হাতের কাছে ভরসা আইসিইউ। কিন্তু সেখানে সব সময়ের ভরসা শুধু ইন্টার্ন ডাক্তার আর সিস্টার। নেই কোনো অধ্যাপক, নেই কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার। তাদেরই নির্দেশে ছেলে মায়ের জন্য তুলা কিনতে গিয়েছিল। ফিরে এসে অবাক বিস্ময়ে দেখে মায়ের হাত বাঁধা। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার শিশুর মতো বৃদ্ধ মাকে অপরাধীর মতো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দোষ কি তার? এই হাসপাতালে তারা চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিল, সেটিই তাদের দোষ? নাকি ডাক্তারের কাছে রোগী অসহায়? প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল শাহনিমা রহমানের। কিন্তু তাকে চিকিৎসার নামে সেবা দেওয়া হচ্ছিল হাত বেঁধে প্রবল হুমকি ধমকির সঙ্গে। ৬৫ বছরের শাহনিমা রহমান ছেলেকে আকুতি নিয়ে বললেন, ওরা আমার সঙ্গে এত দুর্ব্যবহার করছে কেন? ছেলে আইসিইউ-এর সিস্টারদের সঙ্গে রীতিমতো মারামারি করেই মায়ের বেঁধে রাখা হাত খুলে দিতে পেরেছিল। কিন্তু এতটা নির্মমতা, এতটা অপমান বোধহয় নিতে পারেননি অধ্যাপক শাহনিমা রহমান। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। মাত্র ছয় মাস আগেই মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে হারিয়েছিলেন তিনি। দুঃস্বপ্নেও কি তার সন্তানেরা ভেবেছিলেন উন্নত চিকিৎসার নামে তারা মাকে আসলে হারাতে এসেছিলেন।

জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। এখানে আমাদের মতো ক্ষুদ্র মানবসত্তার করণীয় কিছু নেই। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু, ক্ষতি বা সেবার নামে নির্মমতা— সে দায়ভার কার?

আজ বোধহয় এ দেশে ‘বেঁচে থাকাই বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ।’ চাপাতির মৃত্যু, গুলিতে মৃত্যু তো এখন নস্যি। এমনকি অসুখ-বিসুখে সামান্য জ্বরজারি হলেও রেহাই নেই। মৃত্যুর ওপারে কি আছে জানি না। ধর্ম অনুযায়ী হয়তো বেহেশত দোজখ। কিন্তু জীবদ্দশাতেই যদি দোজখের দুনিয়া দৃশ্যমান হয় তবে এই বেঁচে থাকা তো দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ঙ্কর।

আমি ডাক্তার নই। রোগী হিসেবে বহুবার হাসপাতালে গিয়েছি। ডাক্তার নানার সুবাদে সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসাসেবা পেয়েছি। আর এখন সামর্থ্যের কারণে বা পরিচিতি থাকার সুবাদে যথেষ্ট সুবিধাভোগী শ্রেণিতে পরিণত হয়েছি। তারপরও এই ‘আমারও’ রেহাই মেলেনি। এ্যাপোলো হাসপাতালে একটি ভুল চিকিৎসার জের আমাকে আজীবন টানতে হচ্ছে। এ্যাপোলো হাসপাতালের ডাক্তার মৃণাল কুমার আমার ভুল চিকিৎসার জন্য, তার ভুল অপারেশনের জন্য শুধু মৌখিক একটি স্যরি বলেছিলেন। তার জন্য বোধহয় সেটি যথেষ্ট ছিল। এমনকি আমাকে জানানো পর্যন্ত হয়নি যে তারা ভুল ডায়াগনোসিস করে ভুল অপারেশন করেছে। বোধহয় তারা ভেবেছিলেন হিস্টো প্যাথলজি রিপোর্ট আমি দেখব না অথবা প্রতিবাদ করার সাহস পাব না। হাসপাতাল থেকে রিলিজের আগে বায়োপসি রিপোর্ট দেখার জন্য আমি জোরজার করায় শেষ পর্যন্ত তারা রিপোর্টটি হাতে দেন। তখনই জানতে পারলাম আমিও বাংলাদেশের আর বেশিরভাগ জনগণের মতো আরও একটি ভুল চিকিৎসার শিকার। হায়রে সুবিধাভোগী শ্রেণি! তাও তো ভালো, বেঁচে তো আছি। আমার সন্তানদের কাছে তো আছি।

আমি ডাক্তার নই। ডাক্তারি শাস্ত্রের বিন্দু বিসর্গ জানি না। বিশ্বাস করি ‘সেবাই পরম ধর্ম’ এ তাদের ব্রত। আমার নিজের নানা ডাক্তার ছিলেন, আমার নিজের খালাতো বোন ডাক্তার— যাদের আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতাম এবং এখনো করি। তারা তাদের পেশাকে শুধু পেশা হিসেবে নেননি। বরং তাদের ধর্ম হিসেবেই মানতেন, মানেন। আমার এবং অন্য যে কোনো দশজনের বিপদে আপদে দিন-রাত এগিয়ে আসেন। আমি সব বিপদে আপদে তাদের ভরসা পাই, চিকিৎসা পাই। ডাক্তারদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা। কিন্তু কেউ কি বলবেন, এ কেমন ডাক্তারি বিদ্যা যেখানে সামান্য জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে তার হাত বেঁধে রাখা হয়! রোগীর স্বস্তির বদলে তাকে দুঃসহ কষ্টের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়! আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার কি এ ধরনের আধুনিকায়ন ঘটেছে?

বাংলাদেশ প্রতিদিনের খুলনা প্রতিনিধি শামছুজ্জামান শাহীনকে অনুরোধ করেছিলাম এ বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য। যা জানলাম তা আরও ভয়ঙ্কর। গাজী ক্লিনিকের মূল চিকিৎসাই হলো আইসিইউ ব্যবসা। এমনকি সাধারণ টয়লেট না হওয়া রোগীকেও তারা বাধ্য করেন আইসিইউতে ভর্তির জন্য। আইসিইউ/সিসিইউ থাকলেও গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকে না। সেখানে ভর্তির পর অগ্রিম টাকা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে বাইরে থেকে ডেকে আনা হয়। ওই চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত চিকিৎসা ছাড়াই রোগীকে ভর্তি রাখা হয় আইসিইউ বা সিসিইউতে। এতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। বহুবার রোগীর স্বজনরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ভাঙচুরও করেছে এখানে। কিন্তু টনক নড়েনি তাদের। এদিকে নামে বিশেষায়িত হলেও খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগীদের জন্য জরুরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সেবা নেই। একই অবস্থা খুলনার সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের বাধ্য হয়েই এসব বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়, যার সুযোগ এ হাসপাতালগুলো পুরোটাই নিচ্ছে। এখানে প্রতিদিন আইসিইউর ভাড়া পাঁচ থেকে ১২ হাজার টাকা। গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য যা অনেকটা দুরূহ। কেউ বুঝে বা না বুঝে সেই বেসরকারি হাসপাতালে গেলে সহায় সম্বল বিক্রি করে হাসপাতালের খরচ মেটাতে হয়। শামছুজ্জামান শাহীনের সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ১ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একই গ্রামের ১৩ জনকে হাসপাতালে আনার পর জরুরি চিকিৎসা ও আইসিইউ সেবার অভাবে সেদিনই একে একে পাঁচজন মারা যায়। হাসপাতালে ভর্তির পর তাদের শুধু স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়। জরুরি চিকিৎসায় দ্রুত অপারেশনের কোনো ব্যবস্থাই নেই সেখানে। হাসপাতালের কর্মচারীরাই পরামর্শ দেয় বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার। সরকারি তিন প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার-কর্মচারীদের দিয়ে চলছে খুলনা নগরীর শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি হাসপাতালের লোকজন বেসরকারি ওইসব প্রতিষ্ঠানে বেতনভুক্ত হওয়ায় তাদের কাছে জিম্মি সাধারণ রোগীরা। সরকারি হাসপাতালে প্যাথলজি পরীক্ষার খরচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কয়েকগুণ কম হলেও ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায় নানা অজুহাতে রোগীদের বাইরে থেকে প্যাথলজি পরীক্ষা করে আনতে বলা হয়। এক্স-রে ও প্যাথলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান ও বহির্বিভাগের ডাক্তাররা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনই নেই জেনারেল হাসপাতালে। এখানে চারটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও ২০১০ সাল থেকে দুটি নষ্ট। যে এক্স-রে মেশিন দিয়ে ১৯৩৫ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার হদিসও কেউ জানে না। শেখ আবু নাসের হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে একশ রোগী আলট্রাসনো করতে এলেও কখনোই ২৫/৩০ জনের বেশি রোগীর পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। বাকি ৭০/৭৫ রোগীকে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয় বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এখানকার এমআরআই মেশিন প্রায়ই নষ্ট থাকে। আর চিকিৎসক সংকটে রিপোর্ট পেতে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ দিন। অথচ হাসপাতালের সামনে বিশাল সাইনবোর্ডে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এমআরআই রিপোর্ট দেওয়ার বিজ্ঞাপন টাঙানো আছে। আড়াইশ শয্যার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিকে পাঁচশ শয্যা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ১৫০ শয্যার খুলনা জেনারেল হাসপাতাল মেডিসিন, প্যাথলজি, রেডিওলজি বিভাগের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হলেও খুলনার স্থানীয় জনগণের কেমন যেন আস্থা নেই। এখানে রেডিওলজিস্ট না থাকায় এক্স-রে রিপোর্ট করছেন টেকনিশিয়ানরা। সার্জন ছাড়া জরুরি বিভাগে ছুরি-কাঁচি চালায় ওয়ার্ড বয়, সুইপাররা। চিকিৎসক না থাকায় মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকে সার্জারি বিভাগ।

আমার শুধু জানতে মন চায়— আর কত ব্যবসা হলে, আর কত রোগীর মৃত্যু হলে এ হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকদের এ ধরনের ডাক্তার, কর্মচারীদের মানবিক বোধ জাগ্রত হবে?

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রই নাগরিকদের জীবন-মৃত্যুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক। রাষ্ট্র চাইলে আইনত জীবন নিতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ রাষ্ট্রের নেই। অবশ্যই রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিটি নাগরিককে ব্যক্তিগতভাবে দেখভাল সম্ভব নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যারা দায়িত্ব নেন, তারা যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করেন বা তাদের কারণে নাগরিকদের জীবন যদি বিপন্ন হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের ওপর বর্তায় না?

একটি মৃত্যু কি শুধু চলে যাওয়া? এত স্মৃতি কি শুধুই দীর্ঘশ্বাস? সুখের সময়গুলো শুধু অপরাধ ভোগে ভোগায় কেন এই হতভাগ্যের দেশে প্রিয়জনকে চিকিৎসা দিতে গেলাম!

ফেসবুকে কোথায় যেন দেখেছিলাম কথাগুলো—

  জীবন একদিন মৃত্যুকে জিজ্ঞেস করলো,

- সবাই আমাকে এত ভালোবাসে

  কিন্তু তোমাকে ঘৃণা করে কেন?

  মৃত্যু উত্তর দিল,

- মানুষ তোমাকে ভালোবাসে কারণ তুমি হচ্ছো সবচেয়ে সুন্দর মিথ্যা!!

  আর আমাকে ঘৃণা করে কারণ

  আমি হচ্ছি সবচেয়ে বেদনাদায়ক সত্য...!

সুন্দর মিথ্যাগুলো আজ বেদনাদায়ক সত্য হয়ে, আমাদের কষ্টের স্মৃতি হয়ে দুঃস্বপ্নের মতো ঘাড়ে চেপে বসে পড়ে। এই বিভ্রান্তির পৃথিবীতে পাওয়া না পাওয়ার গোলকধাঁধায় আমার বাবা কাজী মাহমুদুর রহমানের লেখা একটি কবিতার কিছু অংশ আজ খুব মনে পড়ছে।

    হাঁটতে থাকো...

    এই সামনের পথ ধরে হাঁটতে থাকো- উত্তর, দক্ষিণে, পূর্ব, পশ্চিমে

    হাঁটতে থাকো... পৌঁছে যাও শেষ প্রান্তে

    তারপর?

    তারপর সেই পথটার শেষ প্রান্ত থেকে আবার শুরু করো,

    নিজেকে অতিক্রম করো বারবার...

    শুরু আর শেষ... হাঁটতেই থাকো অবিরাম।...

    অলৌকিক বিশ্বাস আর প্রার্থনার জটাজালে

    মিথ্যে হয়ে যায় তত্ত্ব, তথ্য, বিজ্ঞান।

    তবুও তাতে আনন্দ, যদি পাও অনুভবে আত্মার ঘ্রাণ...

    ক্রমশ চুম্বকের মতো তোমাকে টেনে নিয়ে যাবে

    পথের সর্বশেষ প্রান্তে... শেষ ঠিকানায়...

    যদিও জানা নেই তা পারিজাত স্বর্গ কিংবা পাপগুহা অন্ধকার নরকের দ্বার।

    সুতরাং হাঁটতেই থাকো... অবিরাম...

পথের সর্বশেষ প্রান্তে কি আমরা পৌঁছে গেছি? তবে কেন ক্ষণস্থায়ী এ জীবন নিয়ে এত লোভ, এত ঈর্ষা, এত বাণিজ্য! জানা নেই আর কতটা পথ পাড়ি দিলে, আর কতটা কতশত মাইল অতিক্রম করলে এ পাওয়া না পাওয়ার হতাশা, শূন্যতা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে, আমাদের চেতনা, আমাদের বিবেকবোধ জাগ্রত হবে!

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নিউজ টোয়েন্টিফোর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর